তের’শ বছর পরেও দুই সাহাবীর তাজা লাশ অক্ষত পাওয়া গেল

সালমান পার্ক একটি প্রাচীন জনপদ। বাগদাদ থেকে প্রায় ৪০ (চল্লিশ) মাইল দূরে অবস্থিত। বর্তমানে শহর জীবনের কোন নিদর্শন বাকী নেই। স্থানটি এখন ৫০০ (পাঁচশত) পরিবারের একটি বস্তি মাত্র। বাগদাদ থেকে এখানে মোটর গাড়িই একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম।

বর্তমানে জরাজীর্ণ হলেও স্থানটির রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। বহু সংখ্যক সাহাবী এখানে গভর্নর হিসাবে জীবন অতিবাহিত করেছেন। এর প্রাচীন নাম মাদায়েন। যুগ যুগ ধরে মাদায়েন ছিল পারস্য সম্রাটদের রাজধানী। টাইগ্রীসের পশ্চিম তীরে অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দিক দিয়ে স্থানটা ছিল একটি কেল্লা সদৃশ। হযরত ফারুকে আযম (রাঃ)-এর খিলাফাতকালে যখন রাসূল (সাঃ)-এর মামতো ভাই সেনাপতি সাদ-বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর দিগ্বিজয়ী লস্কর এই টাইগ্রীসের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত বাহরাশীর শহরে এসে উপস্থিত হন, তখন তাদের সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। কিভাবে টাইগ্রীস পাড়ি দিয়ে মাদায়েনে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো যায়। কেননা তারা জানতে পারেন, সম্রাট ইয়াজদাগীরদের নির্দেশে টাইগ্রীসের সবগুলো সেতু গুড়িয়ে সীমান্ত রক্ষীরা মাদায়েনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ইয়াজদাগীরদের বিশ্বাস ছিল ঢেউ প্রাকৃতিক হয়ে মাদায়েনকে রক্ষা করবে। সত্যিই মুসলমান বাহিনী টাইগ্রীসের তীরে এসে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে যান। তারা যখন নবীর তীরে এসে পৌছেন তখন ছিল মধ্যরাত্রি। টাইগ্রীসে ফটে উঠা তরঙ্গমালা অতিক্রম করে নদী পার হওয়া ছিল অত্যন্ত বিপদজনক। কিন্তু ওপারের সম্রাট নওশিরওয়ারের শুভ্র মহল আর নয়নাভিরাম অট্টালিকাগুলো যেন তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল। মরুচারী বেদুইনদের কাছে সে ছিল এক আশ্চর্য উপলব্ধি! কারণ ইতোপূর্বে এমন কারুকার্য অট্টালিকা আর কখন ও দেখেন নি। তাঁরা বিস্ময়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন স্বপ্নপূরী মাদায়েনের দিকে।

মোটকথা, যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনার পর সেনাপতি হযরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) ছালতুল হাজত পড়ে প্রথমে আল্লাহ তায়ালার নিকট সাহায্য চেয়ে দোয়া করেন। যত দূর দৃষ্টি যায় কেবল ঘোড়া আর ঘোড়াই দেখা যেতে লাগলো। তাদের পায়ের তলায় যেন পানির নাম গন্ধ ও ছিল না। তাঁরা পানির উপর দিয়ে এমনভাবে পরস্পর আলাপ করে চলছিলেন, যেন কঙ্কর বিছানো কঠিন মাটির উপর দিয়ে হেঁটে চলেছেন।

সেনাপতি সাদ (রাঃ)-এর পার্শ্বে ছিলেন নবী করীম (সাঃ)-এর খ্যাতনামা প্রিয় সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)। তাঁকে  লক্ষ্য করে বললেন, “ আল্লাহ তায়ালার কসম, নিশ্চয় তিনি তার দ্বীনকে বিজয়ী করবেন আর শত্রুকে করবেন পরাস্ত। তবে শর্ত হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত লস্করের কেউ এমন কোন পাপ করবে না, যা তার পূণ্যকে ধ্বংস করে দিবে। জবাবে সালমান ফারসী (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য স্থলভাগের মত জলভাগকেও নিরাপদ করে দেয়া হয়েছে। শপথ সেই সত্তার, যার কুদরতি হাতের মুঠোয় সালমানের প্রাণ, যেভাবে তাঁরা নদীতে নামেছে ঠিক সেইভাবেই নিরাপদ অতিক্রম করবে। শেষ পর্যন্ত তাই হলো।

ইরানীরা ইতোপূর্বে এমন কাণ্ড আর কখনো দেখেনি। তাঁরা ভয়ে ও বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় এবং দানব এসে বলে চিৎকার দিতে দিতে পালিয়ে যায়। আর এভাবেই কয়েক শতাব্দীর শাসানী সম্রাটের ইতিহাস ঐতিহ্যের লীলাভূমি মাদায়েন মুসলমানদের পদানত হয়ে যায়। এখানে এখন ও শাসানী সম্রাটের কিছু স্মৃতি চিরকালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। ঐগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে ন্যায়পরায়ণ বাদশা সম্রাট নওশিরওয়ারের একটা রত্নখচিত সিংহাসন। এই স্মৃতিটিকে দেখার জন্য দূর দুরান্ত থেকে লোকজন এসে থাকেন। বর্তমানে সেখানে কয়েকটি কফিখানা রয়েছে। আর রয়েছে একটা সুন্দর কবরস্থান। ঐ কবরস্থানে একটা সুসজ্জিত গম্বুজের নিচে চির নিদ্রায় শুয়ে রয়েছেন প্রিয়নবী (সাঃ)-এর প্রিয়তম সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)। হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)-এর কবরের পাশেই রয়েছে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পেগড়া আরো দুটি কবর। এর একটি হচ্ছে, নবী করীম (সাঃ)-এর অন্যতম সার্বক্ষণিক সহচর হযরত যাবের বিন আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ)-এর কবর। কবরদ্বয়ের কাছ হতে প্রবাহিত হচ্ছে স্রোতিস্বিনী দজলা নদী। শেষোক্ত সাহাবীদ্বয়ের কবর দুটি নির্মিত হয়েছে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের বাদশা প্রথম ফয়সালের যুগে। তখন  তাদেরকে তাদের পূর্ব অবস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। কবর দুটি সরানোর পূর্বে তাদের অবস্থান ছিল সালমান পার্ক থেকে দুই ফালং দুয়ে একটা অনাবাদী জায়গায়। কিন্তু একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে তাদের পুরানো কবর থেকে সরিয়ে এনে সালমান পার্কের ঐতিহাসিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময়ে ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু দেখার এবং সাহাবীদ্বয়ের নূরানী চেহারা স্বচক্ষে দর্শন করার সৌভাগ্য অনেকেরই হয়। ঘটনার সাক্ষী হয়ে সেখানে উপস্থিত বাগদাদ, ইরাক ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে অনেকই এখন ও জীবিত আছেন। (২০১০ ইংরেজি সাল পর্যন্ত)।

সাহাবীদের এই কবর পরিবর্তনের ঘটনা বর্তমান বিশ্বে ইসলামের সত্যতার স্বপক্ষে একটি জীবন্ত প্রমাণ। ইসলামের সত্যতা মানে কি? ইসলামের সত্যতা মানে এক কথা কোরআন ও হাদিসে পাকের মধ্যে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা সব অক্ষরে অক্ষরে সত্য। আল্প কথায় কোরআন ও হাদিসের মধ্যে কি আছে? কোরআন ও হাদিস পাকের মধ্যে আছে যে, আল্লাহ তায়ালার যাত সিফাত সত্য, কিয়ামত সত্য, পুনরুত্থান সত্য, পরকাল সত্য, মীযান সত্য, পুলসিরাত সত্য, জাহান্নামের সকল বর্ণিত আযাব ও কষ্ট সত্য, জান্নাত সত্য, জান্নাতের সকল আরাম আয়েশ ভোগ বিলাস, শান্তি সুখ, সফলতা সত্য।

মানুষের ধর্ম একটাই “ইসলাম” অন্য যত ধর্ম রয়েছে তা একটাও ধর্ম নয়, সব মানুষের মন গড়া মিথ্যা জিনিস। দুনিয়ার সকল কাফির মুশরিক নাস্তিক আর বস্তুবাদীরা সকল ভুলের মধ্যে রয়েছে। সে সকল নামধারী মুসলমানেরা মুখে তো মুসলামান দাবী করে কিন্তু আল্লাহর আদেশ নিষেধ, নবীর তরীকা মানে না তথা পরকালের অনন্ত অসীম জীবনের প্রস্তুতি যেভাবে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তার নেই না, তাঁরা সবাই মহাভুলের মধ্যে রয়েছে। তাদের জন্য ইমান আমল কমের কারণে, দুর্বলতার কারণে, ঘাটতির কারণে মৃত্যুর সাথে সাথে জাহান্নামের চিরস্থায়ী কঠিন আযাব অপেক্ষা করছে।

সূত্রঃ চোখে দেখা কবরের আযাব

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।