Categories রূপকথা

তুষার মানব, আলমেস্টি, সাসকোয়াচ, চাপাবাজদের এক আওয়াজ

পৃথিবীর সবদেশের রূপকথা ও উপকথাতে দৈত্য-দানবের উপস্থিতি অপরিহার্য। এই বিজ্ঞানের যুগে আমরা জানি রূপকথা রূপকথাই। কিন্তু রূপকথার দানব-দানো ছাড়াও একশ্রেণীর দৈত্যকায় প্রাণীর কথা মাঝে মধ্যে শোনা যায় একদল প্রতারকের মুখে। বিশ্বের কিছু কিছু এলাকায় এসব বৃহদাকারের প্রাণীর অস্তিত্বের কথা এনারা প্রায়শ জোর দিয়ে বলে থাকেন। এসব প্রাণীকুলের শিরোমণি হলো হিমালয়ের তুষার মানব বা ইয়েতি। এছাড়া রয়েছে আমেরিকার বড় পা বা বিগফুট, ককেশাসের আলমেস্টি। ইয়েতি দিয়েই শুরু করা যাক।
আমাদের নিকটতম পর্বতমালা হিমালয়ে নাকি এদের বাস। মাউন্ট এভারেস্ট ও হিমালয়ের অন্যান্য অংশে এদের দেখা মিলে। মধ্য এশিয়া ও চীনেও নাকি এদের দেখা যায়। বনমানুষের মতো বিশালকায় লোমশ শরীরের অধিকারী ইয়েতি। চেহারা অনেকটা মানুষের মতো। হাত প্রায় হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে। নেপালী শেরপা’রা এগুলোকে ইয়েতি বলে থাকে। তাদের ভাষ্য মতে ইয়েতি প্রায়শ: পাহাড় থেকে নেমে লোকালয়ে হামলা করে। ইয়েতি অস্তিত্বের কোন প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায়নি। শেরপা’রা যদিও দাবী করে থাকে যে, তারা ইয়েতি দেখেছে, কিন্তু তাদের কোন গল্পই আজতক প্রমাণিত হয়নি। ইয়েতি গল্প প্রথম বাজার পায় ১৯৫১ সালে যখন সাদা চামড়ার পর্বতরোহী এরিক শিপটন ইয়েতির ‘পায়ের ছাপের’ ছবি তুলেন! এর পর থেকে সরকারী ও বেসরকারীভাবে অনেক অভিযান চালানো হয়েছে ইয়েতির সন্ধানে, কিন্তু পাওয়া যায়নি। তবে লক্ষ্য করা হয়েছে যে কখনো কখনো বরফে পাহাড়ি ভালুকের পায়ের ছাপ সূর্যের তাপে গলে বড় আকারের পদচিহ্ন হয়ে যায়, যা ইয়েতির সন্ধানে, কিন্তু পাওয়া যায়নি। তবে লক্ষ্য করা হয়েছে যে কখনো কখনো বরফে পাহাড়ি ভালুকের পায়ের ছাপ সূর্যের তাপে গলে বড় আকারের পদচিহ্ন হয়ে যায়, যা ইয়েতির ছাপ হিসেবে, ইচ্ছে করলে, চালিয়ে দেয়া যায়। আর এ ধরনের চালিয়াতের সংখ্যা তো পৃথিবীতে কম নয়। ‘বড় পা’ হলো ইয়েতির মার্কিন মুলুকের আত্মীয়। এগুলোকে দেখা যায় ক্যালিফোর্নিয়া, অরিগণ ও ওয়াশিংটনের পর্বতে। তবে কিনা, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, ছবিও তোলা যায় না।
চাপাবাজদের মতে এদের উচ্চতা হলো ৭ থেকে ১০ ফুট ও ওজন ৫০০ পাউন্ড। লোমশ শরীর, লম্বা হাত ও মানুষের মতো দুপায়ে হাঁটে। ১৬ ইঞ্চি চওড়া এদের পায়ের ছাপ! বিগফুটের সপক্ষে এ পর্যন্ত যে সব প্রমাণ উত্থাপিত হয়েছে সেগুলোর সব কটি জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আবা রবিগফুটের যে বংশধর কানাডায় থাকে, সেগুলোকে বলা হয় সাসকোয়াচ। একই রকম দেখতে, যদিও দেখা যায় না। ইয়েতি, সাসকোয়াচ-এর ইউরোপীয় বংশধর হলো আলমেস্টি। এগুলো থাকে ককেশাসে। কিছুদিন আগে ফরাসী ও রুশদের একটি যৌথ অভিযাত্রী দল এদের দেখা পেয়েছে বলে দাবী করে। তাদের দলনেতার ভাষ্য অনুযায়ী, একদিন চন্দ্রলোকিত রাতে, একদল গুহাচারী তার থেকে ৪ মিটার দূর থেকে হেঁটে চলে যায়। ছবির কথা বলবেন তো? হ্যাঁ তিনি নাকি ছবিও তুলতে চেয়েছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত, প্রিয় পাঠক বোধ হয় বুঝতে পেরেছেন, তার ক্যামেরার সঙ্গে কোনো ফ্লাশ ছিল না। এভাবে একদল সুযোগ সন্ধানী, ভ্রষ্ট্রাচারী লোক ইয়েতি, সাসকোয়াচের গল্প বলে জনগণকে প্রতারিত করে চলেছে। তবে একথা ঠিক যে, ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়ে বড় পা কিংবা হিমালয়ে ইয়েতি না থাকলেও মানুষের জঙ্গলে কিন্তু এদের অস্তিত্ব রয়েছে।
এমনকি আমাদের দেশেও রয়েছে এদের অনেক বংশধর। লেজ লুকিয়ে, নখর ঢেকে রেখে এরা প্রবলভাবে প্রগতি, উন্নতি ও মানবধর্মের বিরোধিতা করে চলেছে। ইয়েতি, সাসকোয়াচের গল্প থেকে মুক্তি পেতে চাইলে মানুষকে এসব মৌলবাদী জন্তুর কবল থেকে মুক্তি পেতে হবে সর্বাগ্রে।

আরো পড়তে পারেন...

প্রতারণার কোয়ান্টাম মেথড

কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি মিলনায়তনের একটি অনুষ্ঠানের খবর আমরা জানতে পারি পরদিন প্রকাশিত দেশের…

সৌভাগ্যের ভেজাল চিঠি

কয়েকদিন আগে একটা চিঠি পেয়েছি, ডাকযোগে। টাইপ করা চিঠিটাতে কোন নাম ঠিকানা ছিল না, খামের…

বুনো রাজা ও রাজকুমারী– শ্রী ক্ষিতীশচন্দ্র কুশারী

এক বুনো রাজা। বনেই তাঁর রাজত্ব। যত অসভ্য জংলী তাঁর প্রজা। প্রজাদের ঘর নেই, দোর…