তিন মুসাফির ও আটটি রুটি

বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আসরের শুরুতেই তোমাদের একটা প্রশ্ন করি। আচ্ছা, তোমরা পড়াশুনা করছো কিসের জন্য? কি ব্যাপার এ প্রশ্ন শুনে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছো কেন? বুঝতে পেরেছি তোমরা আসলে দ্বিধায় পড়ে গেছে উত্তর কি দেবে এই ভেবে। আসলে প্রশ্নটি সহজ হলেও উত্তরটি একেবারে সহজ নয়। কারণ, কেউ পড়াশুনা করে চাকরি করার জন্য, কেউবা করে জ্ঞানার্জনের জন্য। তবে ঠিকমত জ্ঞানার্জন করে নিজেকে যোগ্য করে তৈরি করতে পারলে ভাল চাকরি-বাকরিও পাওয়া সম্ভব। বন্ধুরা, জ্ঞানার্জনের কথা উঠলেই সবার আগে চলে আসে আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর কথা। তারপর আসে আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.) এর কথা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, আমার পরে আমার উম্মতের মধ্যে সবচে বড় জ্ঞানী হলেন আলী ইবনে আবি তালিব। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীও বর্ণনা করেন,
একদিন নবীজী উচ্চস্বরে বললেন,আমি হলাম জ্ঞান ও বিজ্ঞানের শহর আর আলী হলেন সেই শহরের দরোজা। তাই যে-ই জ্ঞান অর্জন করতে ইচ্ছুক সে যেন এই শহরের দরোজার কাছে যায়।’সত্যি বলতে কী-হযরত আলী (আ.) এর জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার তুলনা মেলা ভার। তিনি ছিলেন আরবি ব্যাকরণের জনক। তাঁর মেধা, তাঁর জ্ঞানের কথা প্রবাদতুল্য। হযরত আলী ছিলেন রাজস্ব প্রথার উদ্ভাবক। তিনিই সর্বপ্রথম ভূমিরাজস্ব প্রথা প্রবর্তন করে ভূমির ওপর চাষীদের অধিকার নিশ্চিত করেন।
বন্ধুরা, ইমাম আলী (আ.)এর জ্ঞান ও বিচক্ষণতা সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা প্রচার করেছি। একবার দুই পথিক পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। তাদের ক্ষুধাও লেগেছিল ভীষণ। খাওয়া-দাওয়া করার জন্য দু’জন মিলে একটা সুবিধাজনক জায়গায় গিয়ে বসে পড়লো। এরপর পুটলি থেকে বের করে নিলো যার যার খাবার। একজনের রয়েছে পাঁচটি রুটি। অন্য জনের তিনটি।তারা যখন খাবার খাওয়ার জন্য তৈরি হলো তখন সেখানে এসে হাজির হলো এক মুসাফির। তার বেশভূষা একদম সাদাসিধে। সে বললো,ভাই আমি অভুক্ত। খুব ক্ষুধা লেগেছে। আমার কাছে কোনো খাবার নেই। তোমরা আমাকে কিছু খাবার দাও।পথিক দু’জন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো।
মনে মনে ভাবলো, তারা দু’জন খাবে আর একজন মুসাফির না খেয়ে থাকবে, এ কেমন কথা? তারা মুসাফিরকে তাদের সঙ্গে খেতে বসার অনুরোধ করলো। তিনজন একসঙ্গে খেতে বসলো। একজনের পাঁচ রুটি। অন্যজনের তিন রুটি। মুসাফিরের শূন্য হাত। তবু তারা রুটি বণ্টনে কোনো তারতম্য করলো না। তারা ভাবলো, কারো সঙ্গে খাবার না থাকতে পারে, কিন্তু ক্ষুধা তো আর কম লাগেনি। তাছাড়া এক সঙ্গে খেতে বসে একজন বেশি খাবে আর একজন কম খাবে, তাই বা কেমন করে হয়? তিনজন সমান সমান রুটি খেলো।খাওয়া-দাওয়া শেষ- এবার বিদায়ের পালা। মুসাফির চলে যাবার সময় পথিক দু’জনকে আটটি দিরহাম বখশিস দিলো। বললো, ভাই, আমি শুধু তোমাদেরটাই খেলাম। তোমাদের কিছুই খাওয়াতে পারলাম না। এই নাও আটটি দিরহাম। তোমরা দু’জনে ভাগাভাগি করে নাও।মুসাফির চলে গেল। কিন্তু সমস্যা বাঁধলো দিরহাম ভাগ করা নিয়ে। যার পাঁচটি রুটি সে বললো, আমার পাঁচটি রুটি ছিল। সুতরাং আমি পাবো পাঁচ দিরহাম।
আর তোমার তিনটি রুটির জন্য পাবে তিন দিরহাম। কিন্তু তিন রুটিওয়ালা এ হিসাব মানতে রাজি হলো না। সে বললো, না, আমি তোমার হিসাবে রাজি নই। আমরা দু’জন খেয়েছি সমান সমান। সুতরাং তুমি পাবে চার দিরহাম।প্রথমজন বললো, তা কি করে হয়? তুমি তিন রুটির জন্য চার দিরহাম পাবে। আর আমি পাঁচ রুটির জন্য চার দিরহাম পাবো? এটা কি কোনো আইনের কথা হলো?এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বেঁধে গেল তর্ক। কারো কথায় কেউ রাজি নয়। কিছুতেই তারা মীমাংসায় আসতে পারছে না। অবশেষে একজন বললো, শোন এভাবে বিবাদ করে তো কোনো লাভ নেই। চলো,আমরা আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ.)এর কাছে যাই। তিনি যে বিচার করেন, তাই আমরা মেনে নেবো।এরপর দু’জন মিলে গেল হযরত আলীর কাছে। তারা সব কথা খুলে বলে ন্যায় বিচারের জন্য ফরিয়াদ জানালো। হযরত আলী মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনলেন। কিছুক্ষণ তিনি মনে মনে কি যেন ভাবলেন।
পরে বললেন, তিনজনে সমান খেয়েছো তো?উভয়ে ঘাড় নেড়ে বলল, হ্যাঁ।হযরত আলী বললেন, তা হলে এ নিয়ে এত বিবাদ কিসের? হিসাব তো একেবারে পানির মতো সোজা। যার পাঁচটি রুটি সে পাবে সাত দিরহাম। যার তিনটি রুটি সে পাবে এক দিরহাম। এমন হিসাবের কথা শুনে দুজনেই অবাক হয়ে গেল! সাত দিরহাম আর এক দিরহাম ভাগ হলো কোন হিসাবে তারা কিছুতেই বুঝতে পারল না। হিসাব বুঝতে না পেরে দু’জনই হা করে তাকিয়ে রইল হযরত আলীর দিকে। ইমাম আলী   তাদের মনের কথা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, তোমরা ছিলে তিনজন। রুটি আটটি। খেয়েছ সমান সমান। একেকটি রুটিকে তিন টুকরো করলে আটটি রুটি চব্বিশ টুকরো হয়। সুতরাং তোমরা একেক জন খেয়েছ আটটি করে টুকরা। মুসাফির লোকটা আট টুকরোর জন্য আট দিরহাম দিয়েছে।
হযরত আলী বললেন, এবার আসা যাক, কে কতটুকু পাবে সে হিসাবে। দ্বিতীয় জনের তিনটি রুটিতে নয় টুকরো হয়েছে। নয় টুকরোর আট টুকরো সে নিজে খেয়েছে। মাত্র এক টুকরো পড়েছে মুসাফিরের ভাগে। সুতরাং সে এক দিরহামের বেশি কিছুতেই পেতে পারে না। আর একজনের পাঁচ রুটিতে হয়েছে পনেরোটি টুকরো। তার মধ্যে সে নিজে খেয়েছে আট টুকরো। বাকি সাত টুকরো খেয়েছে মুসাফির। সুতরাং সে পাবে সাত দিরহাম। হযরত আলীর হিসাবের কথা শুনে পথিক দু’জন বিস্মিত হলো। তাঁর বিচার বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে দারুণভাবে মুগ্ধ হলো। তারা আর কোনো ওজর আপত্তি না করে নীরবে মেনে নিলো বিচারের রায়। # –সাতক্ষীরা থেকে পাঠিয়েছেন মহিবুল্লাহ

আগে মারলে ?

নেকড়ের ধুনচি

নেকড়ের ধুনচি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *