গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
দাবী করল তাকে কঠোর, নির্দয় শান্তি দেবার । তাদের কথা শুনতে শুনতে খান মাথা নাড়ছিলেন, তার মুখ ক্রমশঃই অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল। উজীররা ওদিকে মনে মনে প্রচণ্ড উল্লাস বোধ করছিল যদিও তা জানতে দিচ্ছিল না । তাদের এই নির্মম ষড়যন্ত্রের সাফল্য সম্পর্কে সুনিশ্চিত ছিল তারা।
এবার বলার পালা এল অভিযুক্তের বড় ভাইয়ের ।
সে বলল, অনুমতি দিন হুজুর, আমি আদালতের ভাষণের পরিবর্তে একটা প্রাচীন গল্প শোনাব, যেমন এতদিন শুনিয়েছি আমি আর আমার ভাইয়েরা আপনার মাথার কাছে বসে ।
বহুদিন আগে দোর্দণ্ডপ্রতাপ এক বাদশাহ্ ছিলেন একটা কথাবলী তোতাপাখিকে তিনি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন। বাদশাহের শয়নকক্ষে একাট সোনার খাঁচায় পাখিটা বসে থাকত। সঙ্কটমুহুর্তে পাখিটা বাদশাহকে পরামর্শ দিত, দুঃখে সাত্ত্বনা দিত আর বিশ্রামের সময়ে আমোদ জোগাত।
‘একদিন বাদশাহ খাঁচার কাছে এসে দেখলেন পাখিটা পালক ফুলিয়ে বিষগ্ন হয়ে বসে আছে।
“কি হল তোমার, বন্ধু? জিজ্ঞেস করলেন বাদশাহ।
তোতাপাখি বলল : ‘আজ আমার দেশ থেকে উড়ে এসেছিল আমার কয়েকজন বন্ধু । তারা খবর এনেছে যে আমার বোনের বিয়ে হবে, বিয়ের দিনে আমাকে দেখতে চেয়েছে বোন । আমাকে একবার দেশ থেকে ঘুরে আসতে অনুমতি দিন, মহারাজ! এই দয়ার পরিবর্তে আমি আপনার জন্য নিয়ে আসব অমূল্য উপহার ‘
কতদিন লাগবে তোমার ফিরে আসতে?’ বাদশাহ্ জিজ্ঞেস করলেন।
চল্লিশদিন, মহারাজ। চল্লিশদিনের দিন আমি এখানে পৌছে যাব।’
খাঁচার দরজাটা খুলে ধরলেন বাদশাহ, পাখিটা একটা উল্লাসের ধ্বনি করে জানলার বাইরে উড়ে চলে গেল ।
সেখানে উপস্থিত বাদশাহের মন্ত্রী বলল :
‘হলফ করে বলতে পারি হুজুর, যে পাখিটা আপনাকে ঠঁকিয়েছে, খাচায় আর ফিরে আসবে না ও ।
হিংসুটে লোকেরা সদাই সন্দিগ্ধমনা হয়, হুজুর । কাউকে তারা বিশ্বাস করতে পারে না, ঐ উজীরটাও ছিল হিংসুটে ।
চল্লিশদিন কাটলে পাখিটা তার প্রতিশ্রুতিমত ফিরে এল। খুব খুশী হলেন বাদশাহ্, ঠাট্টা করে জিজ্ঞেস করলেন :
আমার জন্যে কি উপহার এনেছ, বন্ধু?”
মুখ হাঁ করে পাখিটা বাদশাহের হাতে একটা ছোট বীজ দিল ।
বাদশাহ্ খুব অবাক হলেন কিন্তু পাখিটার জ্ঞান সম্পর্কে জানেন বলে বুড়ো মালীকে ডেকে বীজটা পুঁতে দিতে বললেন। একদিন বাদে সেই বীজট থেকে একটা চমৎকার আপেল গাছ জন্মাল, দুদিন বাদে কুঁড়ি দেখা দিল আর তিনদিন বাদে গাছটা সুগন্ধি ফলে ভরে গেল ।
সব থেকে লাল আপেলটা ছিঁড়ে মালী বাদশাহের কাছে নিয়ে চলল। কিন্তু পথে উজীর তাকে থামাল, মালীকে বকলো হাতে করে আপেল নিয়ে যাবার জন্য আর বলল সোনার থালা নিয়ে আসতে। বুড়ো চলে গেলে সেই ফাঁকে উজীর আপেলাঁতে বিষ মাখিয়ে রাখল । তারপর মালীর সঙ্গে সঙ্গেই সেও বাদশাহের কাছে গেল ! মালী বাদশাহকে সেই অপূর্ব গাছটির কথা বলে, আপেলসমেত থালাটি তার সামনে রেখে বিদায় নিল, উজীর বললঃ
হুজুর, আপেলটি দেখতে খুবই সুন্দর, কিন্তু সৌন্দর্য মানুষকে প্রায়ই প্রতারণ করে। আমার মনে হচ্ছে আপেলটি বিষাক্ত। প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত কোনো খুনী আসামীকে কারাগার থেকে এখানে আনতে বলুন, প্রথমে তাকে আপেলের একটুকরো খেতে দেওয়া হোক ।
তার কথামতই কাজ করা হল । হাতপা বাঁধা দস্যুটাকে এনে একটুকরো আপেল খেতে বাধ্য করা হল তাকে, সঙ্গে সঙ্গে সে মারা পড়ল ।
‘বাদশাহ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে গেলেন । পাশের ঘরে ছুটে গিয়ে খাঁচা থেকে পাখিটাকে বার করে গলাটা মুচড়ে দিলেন তার।
কয়েকদিন বাদে বাদশাহের ইচ্ছা হল আপেল গাছটিকে সচক্ষে দেখার । বাগানে বেরিয়ে তিনি মালীকে ডাকতে লাগলেন। একটি চমৎকার চেহারার তরুণ ছুটে এল তার কাছে ।
কে তুই বাদশাহু জিজ্ঞাসা করলেন ।
‘আমি আপনার মালী, হুজুর।
“আমার মালী তো পুরথুরে বুড়ো ছিল! বিস্মিত হলেন বাদশাহ্। যুবকটি বলল, ‘আমিই সে মালী, শাহানশাহ ! আপনি যখন পাখিটাকে মেরে ফেললেন আমি ভাবলাম আমারও আর রক্ষা নেই, তাই কষ্টযন্ত্রণা সহ্য করার চেয়ে নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার জন্য একটা বিষাক্ত আপেল খাব ভাবলাম । একটা আপেল ছিঁড়ে একটু কামড়াতেই আমার তারুণ্য আবার ফিরে এল।’
অভিভূত বাদশাহ্ যেন স্বপ্নের ঘোরে সেই অদ্ভুত গাছটার কাছে এগিয়ে গেলেন, একটা আপেল ছিঁড়ে নিয়ে মুখে দিলেন । কি এক অপূর্ব সুখের অনুভূতি বয়ে গেল তার দেহের মধ্য দিয়ে, অনুভব করলেন যে তিনি আবার যৌবনের শক্তিতে ভরপুর । যেমন ছিলেন আঠার বছর বয়সে ।