গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
দুর্বল লোক শক্তিমানের মোহর ছিনিয়ে নিয়েছে একথা বিশ্বাস করা যায় নাকি? না, প্রতিবাদীর কোনই দোষ নেই, আর নির্লজ্জ বাদী, তোকে ওর নামে কলঙ্ক দেওয়া ও জবরদস্তি করার জন্য কঠোর সাজা দেওয়া উচিত। কিন্তু তুই লড়াইতে জিতেছিস বলে তোকে মাফ করে দিচ্ছি—এই হবে আমার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুরস্কার । যাও, আবার বন্ধু হবার চেষ্টা কর।’
সমস্ত জনগণ তিন ভাইয়ের ন্যায়বিচারের প্রশংসা করতে লাগল, খানও খুশী । পুরনো উজীররা কেবল বিদ্বেষে জ্বলতে লাগল । তারা খানকে বোঝাতে লাগল যে ঐ তিন ভাই বদমাশ।
অজানা আগন্তুকদের বেশী বিশ্বাস করা অযৌক্তিক। খুব সম্ভবত শরুরা তাদের পাঠিয়েছে খানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার জন্য । খান কিন্তু ভাগিয়ে দিলেন কানভাঙানিদের, তারপর ঘোষণা করলেন :
‘এই তিন তরুণ জ্ঞানীকে আমার উজীর নিযুক্ত করছি । দিনের বেলায় তারা আমাকে শাসনকাজে সাহায্য করবে, সন্ধ্যাবেলায় আমাকে গল্প শোনাবে, আর রাত্রে আমি যখন ঘুমাৰ, আমাকে পাহারা দেবে ‘
দিন যায়। খান আরো বেশী করে আকৃষ্ট হয়ে পড়তে লাগলেন তিন তরুণের প্রতি ।
সন্ধ্যাবেলায় ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে তাদের কথা শুনতে শুনতে ঘুম এসে যেত তাঁর । ভাইয়েরা খানের কাছে থাকত পালা করে, তাদের সবার প্রতিই মনোযোগ ছিল খানের, কিন্তু সবার ছোট ভাইয়ের প্রতি তার ছিল বিশেষ মনোযোগ । সেই জন্যই বুড়ো উজীরদের তার ওপর আরো বেশী রাগ : রাগে জ্বলতে জ্বলতে তারা ছোট ভাইকে নাজেহাল করবার জন্য ফন্দী আঁটল ।
একদিন যখন থানের কাছে থাকার পাল এল ছোট ভাইয়ের, উজীররা চুপিচুপি খানের শয়নকক্ষে একটা বিষাক্ত সাপ রেখে দিল। তারা ভাবল যে খান সাপট দেখে তার প্রিয়পাত্রকে সন্দেহ করবেন তার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী হিসাবে, প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হবেন তিনি, তখন তাকে ঐ তিন ভাইকে দূর করে দিতে রাজী করান যাবে।
রাতের বেলায় খান ঘুমোতে শুলে তরুণ উজীর তাকে বলতে লাগল প্রাচীনকালের বিভিন্ন বিশ্বাসহননের কাহিনী। এমন চমৎকারভাবে সে বলে যেন তার সামনে অদৃশ্য কোন বই খোলা আছে। এমন আবিষ্ট হয়ে গেছিলেন খান সেই সব কাহিনীতে যে ঘুমিয়ে পড়লেন কেবল মাঝরাতে ।
যুবকটি তখন আলো নিভিয়ে দিতে গিয়ে দেখে একটা ভয়ঙ্কর সাপ খানের পালঙ্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একটুও ভয় না পেয়ে সে তরোয়ালের এক ঘায়ে সাপটার মাথা কেটে ফেলল আর সাপের কাটাদেহটা ফেলে দিল পালঙ্কের নীচে । তরোয়ালটা সে খাপে ভরতে যাবে এমন সময় আওয়াজে ঘুম ভেঙে গিয়ে চোখ মেললেন খান !
সামনে নিজের যুবক উজীরকে খোলা তরোয়াল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লাফিয়ে উঠে চীৎকার করতে লাগলেন : প্রহরী। প্রহরী খুন করল!’
দেহরক্ষীরা ছুটে এল শয়নকক্ষে, যুবকটিকে ধরে কারাকক্ষে বন্ধ করে রাখল সকাল পর্যন্ত ।
সকালবেলায় খান সব উজীরদের ডেকে বন্দীকে নিয়ে কি করা হবে তা আলোচনা করতে লাগলেন ।
উজীররা সবাই এক কথাই বলতে লাগল । বাক্যব্যয়ে তারা কোন কার্পণ্য করল না আর বাকপটুতার লড়াই চালিয়ে গেল পরস্পরের সঙ্গে। সবাই যুবকটিকে বেইমানী, বিশ্বাসঘাতকতা ও খানের জীবননাশের প্রচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করল ।