গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আর কোন সন্দেহই রইল না যে মেষপালকই সত্যকথা বলেছে। বিচারক তাকে তার অর্থ ফিরিয়ে দিল আর চোরটিকে প্রহরাধীনে রাখার আদেশ দিল ।
দ্বিতীয় দিনে মেজ তাই বিচারের কাজ চালাতে লাগল।
বোঝাইকরা বস্তার মত প্রচন্ড মোটা এক জমিদার এল এক গরীবদুঃখী লোককে জামা ধরে টানতে টানতে নিয়ে ।
জমিদার বলল : ‘এই ভিখারীটা কান্নাকাটি করে আমার এক সের মাংস ধার নেয়, বলে ওর নাকি ছেলে মরতে বসেছে। দিব্যি দিয়ে বলে যে এক সপ্তাহের মধ্যে দেনা শোধ করে দেবে, তা সে নিজের পায়ের থেকে মাংস কেটে দিতে হলেও । ছেলেটা ওর মরেছে বেশ ক’দিন হল, কিন্তু এই শয়তানটা কিছুতেই দিচ্ছে না মাংস বা তার জন্য দাম ।
বিচারক গরীব লোকটিকে জিজ্ঞাসা করল : ‘তুমি জমিদারের ধার শোধ কর নি কেন?’
আমার কিছুই নেই, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গরীব লোকটি বলল, শরৎকালের আগে আমি জমিদারের দেনা শোধ করতে পারব না।’
কিন্তু আমি শরৎকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারব না । চীৎকার করে উঠল জমিদার।
বিচারক বলল, তাহলে আমার বিচার হবে এ রকম। জমিদার, তুমি ছুরি নিয়ে ওর পায়ের থেকে এক সের মাংস কেটে নাও । কিন্তু ঠিক এক সের। এককণাও বেশী বা কম যদি হয় তা হলে চাবুকের দাগে তোমার সারা শরীর ভরে যাবে ’
জমিদার প্রথমটা থতমত খেয়ে গেল, তারপর পোশাকে পা জড়িয়ে হেঁচট খেতে খেতে দৌড় লাগাল। সবাই হাসাহাসি করতে লাগল তা দেখে, আর গরীব লোকটি বিচারককে ধন্যবাদ জানাতে লাগল এমন সুবিচারের জন্য।
তৃতীয় দিনে বিচারকাজ চালাবার ভার পড়ল ছোট ভাইয়ের ওপর । দু’জন যুবক এসে উপস্থিত তার কাছে । তাদের মধ্যে চওড়াকাঁধ লম্বা যুবকটি বাদী, সে বলল : ‘আমার বন্ধু আমার মোহর কেড়ে নিয়েছে।’
প্রতিবাদী বলল :‘ঐ মোহরটা আমার সৎ পরিশ্রমের রোজগার । কারুর থেকে মোহর কেড়ে নেবার কথা আমার মাথাতেই আসতে পারে না।’
তোমার বন্ধু যে তোমার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে, তার কোন সাক্ষী আছে?
‘না সাক্ষী নেই কেউ।’
বিচারক বলল, তাহলে তোমাদের বিবাদের মীমাংসা করা খুব সহজ নয় । আমাকে চিন্তা করতে হবে । ততক্ষণ তোমরা আমাকে লড়াই দেখিয়ে খুশী কর । যে জিতবে লড়াইয়ে সে পুরস্কার পাবে আমার কাছে।’
গণ্ডীর চিন্তায় ডুবে গেল বিচারক আর যুবক দুজন পরস্পরের কোমরবন্ধ আঁকড়ে ধরে লড়াই আরম্ভ করল। পনেরো মিনিটও কাটল না, বাদী ইতিমধ্যে প্রতিবাদীকে তিনবার মাটিতে ফেলে দিয়েছে।
বিচারক বলল, “হয়েছে। সত্য ধরা পড়েছে, আমার রায়ও তৈরী । যে কোন লোকের কাছেই পরিষ্কার এদের মধ্যে কে বেশী শক্তিশালী । সবার সামনেই বাদী প্রতিবাদীকে তিনবার ফেলে দিয়েছে মাটিতে।