গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
অনেকদিন আগে এক সদাচারী জ্ঞানী লোক ছিল। তার ছিল তিন ছেলে । লোকে বলে: শিকারীর ছেলে তীরে শান দেয়, দর্জির ছেলে কাপড় কাটে । জ্ঞানী লোকটির ছেলেরা ছোট বয়স থেকেই বিভিন্ন জ্ঞানবিজ্ঞানের বই পড়েই সময় কাটায়। তাদের মধ্যে বড় যে ভাই সে তখনও ঘোড়ায় উঠে বসতে পারে না অথচ ইতিমধ্যে বিচার, পরামর্শ করার জন্য লোক আসে ভাইয়েদের কাছে ।
একদিন তাদের কাছে দুজন লোক এল দুটি উট আর একটি উটের বাচ্চা সঙ্গে নিয়ে ।
তারা বলল : আমাদের দুজনেরই একটি করে উট আছে। উটদুটি সর্বদাই একসঙ্গে চরত মাঠে । কয়েকদিন আগে ওদের ফিরিয়ে আনতে গিয়ে দেখি দুটি সদ্যজাত উটশিশু, একটি জীবিত, অপরটি মৃত্ত।
এখন আমরা বুঝতে পারছি না উটশিশুটি কার, কোন উটটির বাচ্চা সে ; দুটি উটই বাচ্চাটিকে সমানভাবে আদর করে খাওয়ায় আর বাচ্চাটিও দুটি উটের প্রতি সমান আকৃষ্ট ।
বড় ভাই বলল :‘উটগুলোকে নদীর ধারে নিয়ে যাও।
মেজ ভাই বলল :‘বাচ্চাটাকে ডোঙায় করে নদীর অন্য তীরে নিয়ে যাও।’
ছোট ভাই বলল : তাহলেই তোমাদের সমস্যার সমাধান আপনা থেকেই হয়ে যাবে।’
ছেলেগুলি যা বলল তেমনই করা হল ।
অপরপারে উটশিশুটি ভয়ে ছটফট করতে করতে করুণ চীৎকার করে উঠল। উটগুলিও অধীর হয়ে চীৎকার করতে লাগল। একটি উট অস্থির হয়ে নদীর তীর বরাবর ছুটোছুটি করতে লাগল আর অন্যটি নদীর খাড়া পাড় বেয়ে জলে নেমে এল, তারপর জল পেরিয়ে উটশিশুটির কাছে গিয়ে পৌছল । তখনই সবাই বুঝল ঐ উটটিরই বাচ্চা।
এই অসাধারণ ছেলেদের অপূর্ব বুদ্ধির কথা লোকের মুখেমুখে সারা স্তেপে ছড়িয়ে পড়ল। বৃদ্ধ জ্ঞানীও অত্যন্ত সুখী ও গর্বিত ছেলেদের নিয়ে ।
দিন যায়। বাবার বয়স বাড়ে, ছেলেরাও বড় হয়। যখন ছেলেরা বড় হয়ে উঠল জ্ঞানী তাদের ডেকে বলল;
দীর্ঘদিন বাঁচলেই জ্ঞানার্জন করা যায় না, তার জন্য অনেক দেখা দরকার । সোনার প্রকৃত দাম কে জানে? ধনী নয়, জানে স্বর্ণকার। খাদ্যের গুণ কে জানে যে খেল, সে নয়, যে তা তৈরী করেছে সে জানে। কে ঠিক পথ বাতলে দিতে পারে? যে সে পথে যাবার উদ্যোগ করছে সে নয়, যে সেই পথ পেরিয়ে এসেছে সেই । বইপত্র রেখে দিয়ে দেশভ্রমণে বেরিয়ে পড়, জ্ঞানের সব থেকে বড় উৎস জীবনের বইটাকে পড়ে নাও।’
বাবা ছেলেদের আশীৰ্বাদ করল, আর তারা দীর্ঘদিনের সফরে রওনা হল ।
একদিন তারা পৃথিবীর হাজারো পথের একটি দিয়ে যাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে।
বড় ভাই বলল : ‘একটা ক্লান্ত উট একটু আগে এই পথ পেরিয়ে গেছে।”
মেজ ভাই বলল : “হ্যাঁ, উটটার বাঁচোখ কান ?
ছোট ভাই বলল: ওর পিঠে চাপান আছে মধু ?
এমন সময় হাঁফাতে হাঁফাতে তাদের সামনে হাজির হল একজন উৎকণ্ঠিত লোক ।
“আপনারা পথে কোন উট দেখেছেন নাকি? জিজ্ঞেস করল লোকটি। ‘চোরেরা আমার একটা উট নিয়ে গেছে।’
‘ তোমার উটটা অনেক পথ চলে ক্লাস্তু হয়ে পড়েছে। তাই নয় কি? জিজ্ঞেস করল বড় ভাই ।
‘হ্যাঁ, বলল লোকটি ।
‘ওর বাঁচোখটা কানা তো? জিজ্ঞেস করল মেজ ভাই ।
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ! আনন্দিত হল লোকটি ।
ওর পিঠে মধু ছিল তো? জিজ্ঞেস করল ছোট ভাই !
মধু! মধু! তাড়াতাড়ি বলুন কোথায় আমার উট?”
‘তা আমরা জানি না, আমরা তাকে দেখি নি।’ বলল ভাইয়েরা।
বিরক্ত হল লোকটি:
কি করে এমন মিথ্যা বলতে পারেন যে দেখেন নি, যদিও তার সম্বন্ধে আপনার সবকিছুই জানেন? আপনারাই বোধহয় উটটাকে চুরি করে কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন।