তায়েফের হৃদয় বিদারক ঘটনা – শেষ পর্ব
তায়েফের হৃদয় বিদারক ঘটনা – ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাসূল (সাঃ)-এর উপর এই নির্যাতন দেখিয়া রাবীআর দুই পুত্র ওতবা ও শাইবার মনে আত্মীয়তাবোধ জাগিয়া উঠিল এবং নিজেদের খৃষ্টান গোলাম আদ্দাসকে ডাকিয়া বলিল, এই রেকাবিতে করিয়া এক ছড়া আঙ্গুর ঐ ব্যক্তির নিকট লইয়া যাও এবং তাঁহাকে খাইতে বল। আদ্দাস আঙ্গুর লইয়া রাসূল (সাঃ)-এর নিকট গেল এবং তাঁহার সম্মুখে আঙ্গুর রাখিয়া বলিল, আহার করুন।
রাসূল (সাঃ) উহার উপর হাত রাখিয়া বিসমিল্লাহ বলিলেন, এবং আহার করিলেন। আদ্দাস তাঁহার চেহারার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করিয়া বলিল, খোদার কসম, এই এলাকায় লোকজন তো (আহারের সময়) এইরূপ কথা বলে না। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আদ্দাস, তুমি কোন এলাকার লোক এবং তোমার দ্বীন কি? আদ্দাস বলিল, আমি খৃষ্টান। নিনওয়ার অধিবাসী।
রাসূল (সাঃ) বলিলেন, সেই নেক লোক ইউনুস ইবনে মাত্তার গ্রামের লোক? আদ্দাস বলিল, ইউনুস ইবনে মাত্তা সম্পর্কে আপনি কিভাবে জানিলেন? রাসূল (সাঃ) বলিলেন, তিনি আমার ভাই, তিনি একজন নবী ছিলেন, আর আমিও নবী। আদ্দাস ইহা শুনিয়া রাসূল (সাঃ)-এর উপর উপুড় হইয়া পড়িল এবং তাঁহার মাথা ও হাত পা চুম্বন করিতে লাগিল।
অপরদিকে রাবীআর দুইপুত্র ওতবা ও শাইবা একে অন্যকে বলিতে লাগিল যে, সে তো তোমার গোলামকে নষ্ট করিয়া দিয়াছে। অতঃপর আদ্দাস ফিরিয়া আসিলে তাহারা আদ্দাসকে বলিল, হে আদ্দাস, তোমার নাশ হউক, তুমি কেন এই ব্যক্তির মাথা ও হাত-পা চুম্বন করিতেছিলে? আদ্দাস বলিল, হে মনিব, জমিনের বুকে এই ব্যক্তি হইতে উত্তম আর কেহ নাই। তিনি আমাকে এমন কিছু
বিষয় বলিয়াছেন যাহা নবী ব্যতিত আর কেহ জানিতে পারে না। তাহারা উভয়ে ধর্ম হইতে সরাইয়া না দেয়, কারণ তোমার ধর্ম তাহার ধর্ম অপেক্ষা উত্তম। (বিদায়াহ)
সুলাইমান তাইমী (রহঃ) তাহার সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন যে, হজরত আদ্দাস (রাঃ) নবী কারীম (সাঃ)-কে বলিয়াছেন যে, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আপনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁহার রাসূল। (এসাবাহ)
হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, হজরত আবু বকর (রাঃ) বলিয়াছেন, তুমি যদি আমাকে ও রাসূল (সাঃ)-কে (সওর পাহাড়ের) গুহায় আরোহণের সময় দেখিতে! রাসূল (সাঃ)-এর চরণযুগল হইতে রক্ত ঝরিতেছিল এবং আমার উভয় পা পাথরের ন্যায় আসাড় হইয়া গিয়াছিল। হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) খালি পায়ে পথ চলিতে অভ্যস্ত ছিলেন না বিধায় তাঁহার পা মুবারক রক্তাক্ত হইয়াছিল। (কানযুল উম্মাল)
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা