তালুত ও জালুতের কাহিনী-৬ষ্ঠ পর্ব

তালুত ও জালুতের কাহিনী-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

বিশেষ  করে তাকে হত্যা ষড়যন্ত্রে বার বার ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা গুলা একা একা ভেবে খুবই অস্থিরতা বোধ করলেন।  তখন তিনি পরিষদ কে বললেন, আমি দাউদ এর নিকট কন্যা শাদী দিব এবং তাকে রাজ্যর অর্ধেক লিখে  দেব। আপনারা এ ব্যাপারে সময় নির্ধারন করে আমাকে অবগত করুন। তালুকের কথা অনুসারে পরিষদ সময় নির্ধারন করে তাকে জানাল। তালুত তখন হযরত দাউদ (আঃ) কে দরবারে  হাজির করার জন্য  দূত প্রেরণ করলে। হযরত দাউদ (আঃ) এর  নিকট পৌঁছে সমস্ত বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করল।  হযরত দাউদ (আঃ) দূত এর কথা শুনে বললেন, তালুত অন্যায় ভাবে অনেক মুসলমানকে হত্যা করেছে।  অতএব এর কাফফারা না হওয়া পর্যন্ত আমি তার কাছে যাব না। কাফফারা হল আগত ধর্মযুদ্ধে অংশ করে যতগুলা মুসলমান সে হত্যা করেছে ততগুলো কাফের কে হত্যা করে নিজ কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে তওবা করবে। এর পরে আমি তার দরবারে যেতে পারি। অন্যথায় আমি তার কাছে যাব না। 

হযরত দাউদ (আঃ) এর নিকট থেকে ফিরে এসে তাকে সবিস্তার খবর অবগত করলেন। তালুত হযরত দাউদ (আঃ) এর ফরমান শুনে আরও অধিক ভীত হলেন এবং আগামী ধর্ম যুদ্ধে অংশ গ্রহনের জন্য রাজি হল। কিছু দিনের মধ্যে কাফের ও মুসলমানদের ভিতরে একটা যুদ্ধ আরম্ভ হল। তালুত তখন এ যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রায়শ্চিত করবে বলে আশা করলেন এবং এক বিরাট বাহিনী নিয়ে সে যুদ্ধ যাত্রা করলেন। 

একদিন যুদ্ধ করার পরে হঠাৎ শত্রু  পক্ষের একটি বিষাক্ত তীর তার বক্ষভেদ করল এবং তার সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। তিনি সেখানে মৃত্যু বরণ করলেন। হযরত দাউদ (আঃ) এ খবর পেয়ে যুদ্ধের ময়দানে গমন করেন এবং তালুতের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। অত পর মর্জদার সাথে তালুতের দাফন কাফন সম্পন্ন করেন।  অতপর দেশ বাসি একত্রিত হয়ে হযরত দাউদ (আঃ) কে তালুতের সিংহাসনে বসালেন। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক উত্তপ্ত ভাষণ দান করেন, তাতে তিনি দেশের সকল অনাচার,অত্যাচার,জুলুম,চিরদিনের জন্য বন্ধ করা কোঠর নির্দেশ দেন।

ন্যায়পরায়ণতা, পরোপকার উদারতা জীবনের প্রধান কর্তব্য হিসাবে গ্রহন করার জন্য সকলকে আদেশ দেন।  দেশবাসি সানন্দে তার নির্দেশাবলী কবুল করে নেন। 

কিছু দিন পরে তালুতের কন্যা তার পিতার প্রতিশ্রুতি কথা উল্লেখ করে হযরত দাউদ (আঃ) কে নিজ বিবাহের পয়গাম প্রেরণ করেন। হযরত দাউদ (আঃ) তালুতের অঙ্গিকারের কথা উল্লেখ করে তালুতের কন্যার নিকট এক পত্র লিখেন। পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, তার পিতার প্রতিশ্রুতি রক্ষাকরা এক মাত্র তার উপরই ফরজ ছিল।  অন্য কার উপর রক্ষা করার কোন দায়িত্ব নেই। এমতাবস্থায় তালুত যখন ইন্তাকাল করেছে তখন তার প্রতিশ্রুতি শেষ হয়েছে। এখন আপনার বিবাহের বিষয়টি একান্ত আপনার নিজস্ব ব্যাপার। এক্ষেত্রে যদি আমার সাথে শাদী করার কোন ইচ্ছা আপনার থাকে তবে নতুন করে প্রস্তাব পাঠান। আপনার পিতার প্রতিশ্রুতি সেখানে থাকবে না। আমি যে আজ রাজসিংহাসনে বসেছি তাও সে প্রতিশ্রুতির আওয়াতামুক্ত।

হযরত দাউদ (আঃ) এর পত্র পেয়ে তালুতের কন্যা হযরত দাউদ (আঃ) কে জানালেন  যে সে তার পিতার প্রতিশ্রুতি আওতা বহির্ভূত বিষয় হিসাবেই নিজ বিবাহের প্রস্তাপ প্রেরণ করছেন। যদি হযরত দাউদ (আঃ) দয়া করে কবুল করেন তবে নিজেকে তিনি ধন্য মনে করবেন। হযরত দাউদ (আঃ) তালুতের কন্যার প্রস্তাব কবুল করলেন এবং এক অনাড়াম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার শাদী মোবারক সমাধা হল।

তালুত ও জালুতের কাহিনী-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।