শতাব্দী জাহিদঅনন্তপুর গ্রামে তিনজন লোক বাস করে।
শুধু কি তিনজন লোকই বাস করে গ্রামটিতে? সংখ্যাটা তিনশ’ থেকে তিন হাজারও হতে পারে। এখানে যে তিনজন লোকের কথা উল্লেখ করেছি তাদের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে এবং সেগুলো দোষ নাকি গুণ, তা বোঝা না গেলেও তারা যে গাঁয়ের অন্য লোকজন থেকে একটু আলাদা, অন্যরকম_ এটা সহজেই বোঝা যায়। কাকতালীয়ভাবে তিনজনেরই নাম রাজা। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, তাদের চরিত্রে অদ্ভুত মিল আছে। তিনজনেরই কোঁকড়া কোঁকড়া বাবরি চুল। তিনজনেরই গোঁফ আছে। কিন্তু দাড়ি নেই কারো মুখেই। তিনজনই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে চেষ্টা করে। তিনজনই নারী জাতি বিয়ে না করার পণ করে রেখেছে। তিনজনই প্রাণেমন বন্ধু। তিনজনই ভীষণ অলস ও অকর্মণ্য এবং তিনজনই কোনো গুপ্তধন কুড়িয়ে পেয়ে হঠাৎ বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিনযাপন করছে। তিনজনই স্কুলের গ-ি পেরিয়ে জ্ঞানার্জনের অদৃশ্য রথ নিয়ে গিয়েছিল কলেজ পর্যন্ত। কিন্তু সামনে আর এগোতে পারেনি, থেমেছেও একসঙ্গে। হয়তো জ্ঞানার্জনের চেয়ে ধনার্জন বেশি লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে জন্য। তারা শুনেছে, ঝিনুকের ভেতরে মুক্তো, সাপের মাথায় মণি এবং ব্যাঙের মুখে এক ধরনের দামি পাথর থাকে। সেগুলো খুঁজে পেলে বিক্রি করে সাত রাজার ধনদৌলত পরিমাণ টাকাপয়সা পাওয়া যাবে। তারা এমন কথাও শুনেছে, যে সাপের মাথায় ওই মণিটা থাকে সেটি নাকি মানুষের আড়ালে চলে যায়। বন-বাদাড়ে মাটির গর্তে কিংবা গাছের খোড়লে লুকিয়ে থাকে। ব্যাঙের মুখে সেই দামি পাথরটা থাকলে ব্যাঙ তা মুখ থেকে বের করে মাটিতে রেখে রাতের অাঁধারে তার আলোয় খাবার খুঁজে ফিরে আর ঝিনুকের ভেতরে মুক্তো হলে সে মুখ বন্ধ করে চলে যায় জলের গভীরে। কোথায় পাওয়া যাবে সেই মুক্তো, মণি কিংবা দামি পাথর? সেই অমূল্য ধন পেতে হলে অহর্নিশি জল-জঙ্গলে খুঁজতে হবে। তাই তারা তিনজন ঘর থেকে বেরিয়েছে। মনেপ্রাণে দৃঢ়পণ করেছে, যত দিন এই গুপ্তধন খুঁজে না পাবে তত দিন বাড়ি ফিরবে না। আমরা এ তিন রাজাকে গল্পের প্রয়োজনে ভিন্ন তিনটি নামে সম্বোধন করব_ রাজু, রাজীব ও রাজন। এখন থেকে এ তিনটি নামেই হবে তাদের পরিচয়।
<a href=’http://bdads.bd-ads.com/ads/www/delivery/ck.php?n=a0d63775&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE’ target=’_blank’><img src=’http://bdads.bd-ads.com/ads/www/delivery/avw.php?zoneid=79&cb=INSERT_RANDOM_NUMBER_HERE&n=a0d63775′ border=’0′ alt=” /></a>
অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা জঙ্গলে বসে আছে তারা তিনজন। সারা জঙ্গলে শিয়াল আর ঝিঁঝিঁপোকার হল্লা। তাদের মুখে কোনো কথা নেই। চুপচাপ বসে সিগারেট ফুঁকছে। জঙ্গলের ভেতরে নীরবতা ভেঙে একটা গাছের ডালে শব্দ ফুটল_ রাতজাগা পাখির ডানা ঝাঁপটানির শব্দ বোধ হয়। জঙ্গলের গহিন থেকে একটা শিয়াল দৌড়ে এসে তাদের দেখে থমকে দাঁড়ায়। অন্ধকারে তিনজন মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে যেদিক থেকে এসেছিল পিঠটান দিয়ে সেদিকেই দৌড় দেয়। জঙ্গলের ভেতরে বসে কয়েকটা সিগারেট শেষ করে ফেলেছে তারা। হঠাৎ এক চিলতে আগুনের ফুলকির মতো চোখে পড়ে সামনে। তিনজনই চমকে উঠে দৌড়ে যায় সেখানে। কুড়াতে গিয়ে হাতে পায় একটা জোনাকিপোকা। এতে তারা হতাশ হয় এবং এ হতাশা তাদের ক্ষতবিক্ষত করে। তবু তারা জঙ্গলের ভেতরে বসে থাকে। জঙ্গলের ভেতরের অন্ধকার কিংবা শিয়ালের কোলাহল তাদের ছুঁতে পারে না। এক চিলতে আগুনের ফুলকির অস্পষ্ট ঝিলিক যেন তাদের উস্কে দিয়েছে আরো। জঙ্গলের ভেতরে ঝোপের আড়ালে বসে এ মুহূর্তে নিজেদের মনে হচ্ছে পুরনো অশত্থ কিংবা প্রাচীন বটবৃক্ষ। সেই কবে থেকে আশার শিকড় মেলে, ডালপালা ছড়িয়ে বসে আছে তো, আছেই। যেখানে আগুনের ফুলকির মতো দেখেছিল সেখানে আবার তাকায় তারা। না, তাদের সেই আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটার দেখা পায় না_ যার জন্য এত অপেক্ষা, এত আকাঙ্ক্ষা। না জানি বস্তুটা দেখতে কী রকম?
তিনজনই অবিচল বসে আছে। স্থির তাদের চোখের দৃষ্টি। তারা স্থির চোখে তাকিয়ে জোনাকি নাকি জঙ্গলের অন্ধকার দেখে বোঝা যায় না। তারা গভীর অন্ধকারে চুপচাপ বসেই থাকে, যেন বসে থাকা ছাড়া তাদের আর কোনো পথ জানা নেই। তারা ভেতরে ভেতরে আশাহত হতে থাকে যখন, তখনই রাজন বলে, ‘আর কত দিন এভাবে জঙ্গলে বসে থাকলে গুপ্তধন খুঁজে পাব?’
রাজু বলে, ‘ধৈর্য হারালে চলবে না।’
রাজীব বলে, ‘ধৈর্য ধারণ করার ধৈর্যও তো হারিয়ে ফেলেছি, আর কত দিন?’
রাজন বিরক্তমাখা গলায় ফের বলে, ‘এভাবে বসে থেকে কী হবে?’
অন্য দুজনের টনক নড়ে এবার। তিনজনই একসঙ্গে গা ঝাড়া দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারা জঙ্গলের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে। তখনো সাপের মাথার মণি, ব্যাঙের মুখের দামি পাথর কিংবা ঝিনুকের ভেতরে অসংখ্য মুক্তো ভাসতে থাকে তাদের চোখের সামনে এবং কিছুতেই সরে যায় না। বরং তাদের বুকের ভেতরে যন্ত্রণাকে দাহ করে, উষ্ণ করে_ সেই দহনে, সেই উষ্ণতায় তারা সিদ্ধ হয়, কিন্তু আশাহত হয় না। তারা জঙ্গলের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে ক্রমে আলোর মধ্যে আসতে থাকে। আশপাশে তখন কোনো জনমানবের কোলাহল নেই। তারা একে অন্যের মুখের দিকে তাকায়_ বিষাদকাতর, উদ্ভ্রান্ত প্রত্যেকেরই মুখ। রাত বেড়ে যাচ্ছে বলে তারা আরো বিষাদগ্রস্ত, আরো উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তাদের সেই গুপ্তধন পাওয়ার আশা গুঁড়ো হয়ে যেন শূন্যে ধুলো হয়ে উড়ে যায় কিংবা জঙ্গলের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। তারা তিনজনই অচঞ্চল, স্থির। যেন পাতাশূন্য বৃক্ষের মতো ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে থাকে। সত্যিই তো, এভাবে আর কত দিন! তাদের গুপ্তধন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে সময় তো থেমে থাকে না। রাত বাড়তে থাকে। হয়তো রাত বাড়তে থাকে বলেই বাড়ি ফেরার তাগাদা দিয়ে রাজন আবার বলে, ‘চল, বাড়ি চলে যাই এভাবে আর কত দিন?’
রাজীব বলে, ‘আচ্ছা, আমরা যে জিনিসের আশায় রাতদিন এভাবে জল-জঙ্গলে ঘুরে মরছি, আসলে কি আদৌ তা পাওয়া যাবে কিংবা আছে?’
রাজীবের কথায় সায় দিয়ে রাজনও জিজ্ঞেস করে, ‘আসলে কি গুপ্তধন বলে কিছু আছে?’
দুজনের জিজ্ঞাসাই রাজুর উদ্দেশে। রাজু বলে, ‘হ্যাঁ, আছে।’
রাজন ও রাজীব একসঙ্গে জিজ্ঞেস করে, ‘কোথায় আছে?’
রাজু বলে, ‘ভার্জর্িনিয়া পাহাড়ে।’
রাজীব বলে ‘সেটা কোথায়?’
রাজু বলে, ‘মন্টভেল শহরে। জিরাফের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবড়ো-থেবড়ো পাথুরে এক পাহাড়। সেই পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে গেছে এঁকেবেঁকে চোরাগোপ্তা পথ আর এই পথে গেলেই সন্ধান মিলবে থোমাস জেফারসন বিলের গুপ্তধন।’
রাজীব বলে, ‘থোমাস জেফারসন বিলের গুপ্তধন মানে?’
রাজু বলে, ‘থোমাস জেফারসন বিল নামে এক ব্যক্তি ১৮০৭ সালে সোনা-রুপা শিকারে এক দুঃসাহসিক অভিযানে রোয়ানোক ছেড়ে পশ্চিমের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কোলোরাডো নামক এক জায়গায় বিশাল সোনা আর রুপার গুপ্তধন পেয়ে সেগুলো নিয়ে ভার্জিনিয়ায় ফিরে আসেন। বুফোর্ত নামক এক শহরের মাটির নিচে সব সোনা ও রুপা পুঁতে রাখেন। কাকপক্ষীও জানতে পারে না।’
রাজীব জিজ্ঞেস করে, ‘তারপর কী হলো?’
রাজু বলে, ‘তারপর আবার অভিযানে যান। দুই বছর পর আবার সোনা ও রুপা নিয়ে ফিরে এসে সেই শহরেই মাটির নিচে পুঁতে রাখেন।’
রাজন জিজ্ঞেস করে, ‘এবারো কি কেউ জানতে পারে না?’
রাজু বলে, ‘না। তবে রবার্ট মরিস নামে বিলের একজন বন্ধু ছিলেন। থাকতেন লিন্সবার্গ নামক শহরে। বিল একটি লোহার ছোট বাক্স সঙ্গে নিয়ে সেই বন্ধুর কাছে যান। বাক্সটি রবার্ট মরিসের কাছে ১০ বছরের জন্য আমানত রেখে ফিরে আসার আগে বন্ধুটিকে অনুরোধ করে আসেন যেন বাক্সটি খোলা না হয়। বাক্সটি খুলতে নিষেধ করার কারণেই রবার্ট মরিসের মনে কৌতূহল তৈরি হয়। কী আছে বাক্সের ভেতরে? কেন বাক্সটি খুলতে নিষেধ করে গেলেন বিল?’
রাজীব জিজ্ঞেস করে, ‘রবার্ট মরিস কি বাক্সটি খুলেছিলেন?’
রাজু বলে, ‘না, খোলেননি। লুকিয়ে রেখেছেন বন্ধুর আমানত। কিন্তু এই বাক্সের ভেতরই গুপ্তধনের সব রহস্য লুকানো। এরপরের বছর বিল একটি চিঠি লিখে রবার্ট মরিসকে মনে করিয়ে দেন, তিনি যেন বাক্সটি লুকিয়ে রাখেন। কেউ যেন জানতে না পারে বাক্সটির কথা। তারপর দীর্ঘ ২৩ বছর কেটে যায়। বিলের কোনো খবর পান না মরিস। তিনি ভাবেন, তার বন্ধুটি আর বেঁচে নেই। তারপর বাক্সটি খুলে ফেলেন।’
রাজন বলে, ‘কী পেলেন বাক্সটি খুলে?’
রাজু বলে, ‘বাক্সে তিনটি কাগজ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’
রাজীব বলে, ‘কাগজে কী লেখা ছিল?’
রাজু বলে, ‘গাণিতিক সংকেতের মাধ্যমে গুপ্তধনের কথা লেখা ছিল। প্রথম পৃষ্ঠায় গাণিতিক সংকেতের মাধ্যমে নির্দেশ করা হয়েছে গুপ্তধনের সঠিক রহস্যের কথা। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় গুপ্তধনের বিভিন্ন জিনিসের নাম এবং পরিমাণ। তৃতীয় পৃষ্ঠায় লেখা ছিল বিলের সঙ্গী ও আত্মীয়স্বজনের নাম-ঠিকানা। বিল তাদের মধ্যে গুপ্তধন ভাগ করে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন।’
রাজীব জিজ্ঞেস করে, ‘রবার্ট মরিস কি সংকেতগুলোর মানে বুঝতে পেরেছিলেন?’
রাজু বলে, ‘না। সংকেতগুলোর মানে বুঝতে ছুটে গিয়েছিলেন তার বন্ধু জেমস ওয়ার্ডের কাছে। জেমস ওয়ার্ড ছিলেন বিশিষ্ট গণিতবিশারদ। তিনি সব মেধা ব্যয় করে শুধু রহস্য কোডের অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছিলেন, আর কিছু নয়।’
রাজীব বলে, ‘তারপর কী হলো?’
রাজু বলে, ‘বিলের তিনটি কাগজের রহস্য উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে জেমস ওয়ার্ড ‘দ্য বিল পেপারস’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এ বই প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে গুপ্তধন শিকারিদের মধ্যে নেশার ঝড় ওঠে। চোরাগোপ্তা পথে একে অন্যের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রমাগত মাটি খুঁড়তে থাকেন। ১৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিকারিরা গুপ্তধনের আশায় পাহাড় খুঁড়েছেন। কিন্তু বরাবরই সবাই হয়েছেন ব্যর্থ। বিলের মিস্টেরি কোড বা গাণিতিক সংকেতের অর্থ উদ্ধার করতে পারেননি কেউই। সারা বিশ্বে এখনো গুপ্তধন শিকারিদের মাথার ঘাম ঝরছে এ তিন পৃষ্ঠা গাণিতিক সংকেতের অর্থ উদ্ধার করতে গিয়ে। কারণ, এ তিন পৃষ্ঠার মধ্যেই রয়েছে বিলের গুপ্তধনের সঠিক অবস্থান আর এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারলেই মিলে যাবে বিলের ২০ মিলিয়ন ডলারের গুপ্তধন।’
রাজন জিজ্ঞেস করে, ‘বিলের গুপ্তধনের মধ্যে কী কী আছে?’
রাজু বলে, ‘২ হাজার ৯২১ পাউন্ড সোনা আর ৫ হাজার ১০০ পাউন্ড রুপা।’
রাজীব জিজ্ঞেস করে, ‘এগুলোর দাম বাংলাদেশি টাকায় কত হবে?’
রাজু বলে, ‘১২০ কোটি টাকার মতো।’
রাজন জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি এসব জানলে কী করে?’
রাজু বলে, ‘আমার বাবার কাছ থেকে জেনেছি। বাবা জেনেছিলেন দাদুর কাছ থেকে, হয়তো দাদু জেনেছিলেন তার বাবার কাছ থেকে… এভাবে বংশপরম্পরায় শুধু জেনেই আসা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধানে কেউ বের হয় না। তাই তোমাদের নিয়ে আমার এ অভিযান।’
রাজন বলে, ‘অভিযান না ছাই! গুপ্তধন তো থাকে মন্টভেল শহরে, এভাবে রাতদিন শুধু এখানে এ জল-জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে কি সেগুলোর সন্ধান মিলবে?’
রাজু বলে, ‘সেই গুপ্তধনের কিছু অংশ বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। কিছু অংশ সাপের মাথায় মণি হয়ে, কিছু অংশ ব্যাঙের মুখে দামি পাথররূপে আর কিছু অংশ মুক্তো হয়ে ঝিনুকের ভেতরে। এখন আমাদের সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে।’
রাজীব বলে, ‘কিন্তু কোথায় খুঁজব?’
রাজু বলে, ‘এক কাজ করি, তিনজনে একই জায়গায় না থেকে আলাদা আলাদা জায়গায় খোঁজ করা যাক।’
তার এ কথাটা রাজন ও রাজীবের মনে ধরে। একই জায়গায় তিনজনে অযথা সময় নষ্ট করে কিছু হবে না। তাই তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, রাজু জঙ্গলের ভেতরে সাপের মণি খুঁজবে, রাজন খুঁজবে ব্যাঙের মুখের সেই দামি পাথরটা আর রাজীব চলে যাবে নদীর ধারে। সেখানে যত ঝিনুক আছে সব কটার খোলস খুলে খুলে মুক্তো খুঁজে ফিরবে। বলা তো যায় না কোথায় কী আছে। হয়তো কেউ একজন পেয়েও যেতে পারে।
এরপর চোখের সামনে যত বনজঙ্গল, ঝোপঝাড় পেয়েছে, পেয়েছে যত সাগর-নদী, খাল-বিল, পুকুর-নালা, সরোবর কিংবা উপত্যকা সবখানে হন্যে হয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত-শ্রান্ত, ত্যক্ত-বিরক্ত এবং হতাশ হয়ে যখন তারা বাড়ি ফিরে আসতে উদ্যত হয় তখনই একটা বাজারের সামনের ছোট একটা জঙ্গলে দেখতে পায় একটা গোলাকার বস্তু, যা বরফের খ-ের মতো সাদা। তবে রোদে চক্চক্ করে এবং অন্ধকারে দেয় আলোর ঝিলিক। তারা ধরে নেয় এটাই সেই গুপ্তধনের অংশ কিংবা ব্যাঙের মুখের সেই পাথরটা অথবা সাপের মাথার মণিটা। আর তখনই তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। তারা একেকজন একেকবার বস্তুটি নিয়ে লোফালুফি করে। একজন শূন্যে ছুড়ে আরেকজন ক্রিকেট খেলায় ক্যাচ ধরার মতো সেটা ধরে উল্লাসে চিৎকার দেয়। লোকজন তাদের এ ক্ষুদ্র বস্তুটি নিয়ে এতটা আনন্দিত হওয়ার মর্মার্থ বুঝতে পারে না। সবাই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি মেলে তাকায়। কেউ কেউ অনুচ্চ স্বরে বলেও ফেলে, ‘লোকগুলো কি পাগল!’
তিনজনের মধ্যে কোনো হুঁশ নেই। কে কী বলে কিংবা কে কী ভাবে তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। তারা এখন আর গ্রামের অন্যদের মতো না। তাদের হাতের মুঠোয় আছে সদ্য পাওয়া অমূল্য ধন, যার জন্য কয়েক বছর ধরে জল-জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছে। তারা আত্মভোলা হয়ে আনন্দে নাচতে থাকে। তাদের ঘিরে মানুষের ভিড়, কোলাহল বেড়ে যায়। এই ভিড়ের মধ্য থেকে একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি তাদের সামনে এগিয়ে এসে ছোঁ মেরে বস্তুটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেন কিছুক্ষণ। তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেন, ‘এ তো দেখছি একখ- পাথর!’
‘অ্যাঁ!’ তিনজনই হাহাকার করে ওঠে। নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। দেহের রক্তসঞ্চালন যেন থেমে গেছে। মানুষের কোলাহলে তাদের সেই সোচ্চার হাসি আর আনন্দ নিমিষেই মিলিয়ে যায়।