পরল দেহি আতটা”-বলে সোমেশের হাতটা টানিয়া লইলেন।হঃমঙ্গল বৃস্পতিবার-হঃঠিক আছে।উদ্দু রাহাটা দেহি?এ এই খানে একটু-তাবিজ দিয়া দিমু এখন।আপনেরটা দেখি বাবু মশাই।
সিদ্ধেশ্বরের কররেখারও একই রকম ফল দেখা গেল।জ্যোতিষী মাহাশয় একটা কাঠের আলমারি হইতে দুটি তাবিজ বাহির করিলেন এবং সে দুইটি কপালে ঠেকাইয়া বিড় বিড় করিয়া মন্ত্র পড়িতে পড়িতে দুজনের কনুই এর উপরে বাঁধিয়া দিলেন।তারপর কহিলেন,যে দিন পাশের সংবাদ বাইর হইবো সে দিন কিলাম এ তাবিজ খুলিয়া গঙ্গাজলে নিক্ষেপ করবেন-ভুল হয় না যেন ।
সোমেস ও সিদ্ধেশ্বর একটু বিব্রিত হইয়া আরও আড়াইটি টাকা রাখিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল।জ্যোতিষী মহাশয় দরজা পর্যন্ত আগাইয়া আসিয়া বিদায় দিলেন এবং সংবাদ পাইলেন তাবিজতি জাহাতে গঙ্গাজলে বিসর্জিন দিতে ভুল হয় না।সে সম্বন্ধে পূরর্বার স্মরণ করাইয়া দিলেন।বাড়ি ফিরিবার পথে বিষ্টুদার সঙ্গে দেখা।সিদ্ধিস্বরের মুখে শব কথা শুনিয়া তিনি বলিলেন,“ওঃ আর ভাবতে হবে না।ও খুব জাগ্রত তাবিজ।আমার নিজের কথা তো জানিসই।আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে নিয়েছিল-স-ব পাশ করে গেছে।
পরদিন সিদ্ধেশ্বর ও সোমেশ্বের বন্ধুদের মধ্যে রমেস,হরেন নিমাই,ভঁদো,ঘোঁতা প্রভৃতি আরও দশ-বার জন গিয়ে তাবিজ ধারণ করিয়া আসিল।সোমেশকে আর পায় কে?নাইন-পয়েন্টস সার্কল হল এন্ড স্টিভেন্স এর বই এর মধ্যেই সমাহিত রহিল,গ্রহ ধাতুর রুপ লইয়া মাথা ঘামাইয়াও আর প্রয়োজন ছিল না।পরীক্ষা হইয়া গেল এবং যথা সময়ে রেজাল্ট বাহির হইবার দিনও আসিয়া পড়িল। পাড়ায় অবনিশবাবুর বাড়িতে একখানা গেজেট আসে,সকাল হইতে ছেলের দল দারুণ ভিড় লাগাইয়া দিয়েছে।গেজেতে আসিল হরিশদা নাম পড়িয়া যাইতে লাগিলেন।“সিদ্ধেশ্বর দত্ত-ফাস্ট ডিভিশন,রমেশ ফাস্ট ডিভিশন,হরেন্দ্রনাথ চৌধুরি সেকেন্ড ডিভিশন ইত্যাদি,কিন্তু কই সোমেসের নাম কোথায়?
না।সোমেশের নাম গেজেতে নাই,ভুঁদোর নাম ও নাই,ঘোতার নাম ও নাই।রাগে ফুঁলিতে ফুঁলিতে সোমেশ বলিল,চল জ্যোতিষীর বাড়ি জোচ্চুরি কারার যায়গা পায় নি!প্রত্যেকের কাছ থেকে বেটা শ,তিন টাকা করে নিয়েছে।ভুঁদো ও ক্ষেপা তো ক্ষেপেই ছিলই।সিদ্ধশ্বর,রমেশ,হরেন,এরাও বন্ধুদের প্রতি সহানুভুতিতে গলিয়া গেল।দল বাঁধিয়া তখন সকলে জ্যোতিষীর বাড়ি গেল।জ্যোতিষালঙ্গার মশাই আজ বৈঠক খানায় ছিলেন।তার সামনে ছিল একটি অত্যন্ত গোবেচারা গোছের লোক।তারই হাতে তাবিজ বাধিঁতে বাঁধিতে বলিতেছ এই তাবিজে আপনার চাকুরি না হইয়া পারে না।কিন্তু চাকুরি পায়য়াই কইলাম তাবিজ গঙ্গার জলে নিক্ষেপ করতে ভুকবেন না।বোচ্ছেন কি?
এমন সময় সোমেশের দল গিয়া ঘরে ঢুকিল।জ্যোতিষী মহাশয় কিছুমাত্র ব্যস্ত না হয়ে কহিলেন,আসেন বাবুরা কি চাই আপনাগের?
কি চাই!রাগে তখন সবাই ফুঁলিতেছে,ন্যাকামি দেখিয়া জ্বলিয়া উঠিল।সিদ্ধেশ্বরের মুখের ক্রুদ্ধ বিবরণ বেশ বির ভাবে শুনিয়া জ্যোতিষালঙ্কার কহিলেন আমার তাবিজ ঠিক আছে,কিন্তু মহমায়ার উপর ত মানুষের হাত নেই।তিনি যদি পছন্দ করেন ফ্যানেলের হাত হইতে কেডা বাচাইবে?তাবিজের ভিতর ঢুকিয়া তিনি ইগগল বদলাইয়া দিয়া যাইবেন।কই,কেডা ফেল হইছেন?আপনি কই দেহি আপানার তাবিজ,খোলেনতো?কারও তাবিজ জঙ্গলে নিক্ষেপ করার সময় নাই।সোমেশের তাবিজ খুলিয়া গালা ভাঙ্গিয়া ফেলা হইল।ভিতর হইতে শুকনা ফুলের সঙ্গে বাহির হইল পাকানো এক তুকরা কাগজ সকলে অবাক হইয়া দেখিল তুমি ফেল করিবা।জ্যোতিষালঙ্কার মহাশয় সগর্বে কহিলেন, আরে কেতা কেতা ফ্যাল হইছেন,খোলেন তাবিজ।ভুঁদো এবং ঘোঁতারা তাবিজ খুলিয়া দেখে গেল তাহাতেও লেখা আছে-তুমি ফ্যাল হইবা,তুমি ফ্যাল হইবা সোমেশের দলের মুর্খ চুন হইয়া গেল।জ্যোতিষালাঙ্কার মহাশয় ঠোট দুটি শুয়োরের মতো করিয়া টিপিয়া টিপিয়া হাসি চাপিতে লাগিলেন,ভাবনখানা,এবার কেমন জব্দ।
হঠাৎ সিদ্ধেশ্বরের কি খেয়াল চাপিল,সে কহিল,দেখি আমারটায় কি লেখা;আমি তো পাশ হয়েছি।
জ্যোতিষালাঙ্কার হ্যাঁ হ্যাঁ করিয়া উথিলেন,কন কি পাশ করেছ তবু গঙ্গাজলে তাবিজ বিসর্জন দ্যান নাই।মহাপাতক করেছেন।এখনই ছুঁইটা যান মা গঙ্গার কাছে ক্ষমা চাহিয়া তাবিজ ফেলিয়া দিয়া আসেন ছি ছি!কিন্তু সিদ্ধেশ্বর তক্ষণে তাবিজ খুলিয়া ফেলিয়াছে।সকলে অবাক হইয়া দেখিল তাহার ভিতরে পাকানো কাগজে লেখা তুমি ফ্যাল হইবা।
সকলে মুখ চাওয়-চাওয়ি করিতে লাগিল।সিদ্ধেশ্বর বলিল,দেখি তোমাদের তাবিজ?রমেশ,হরেণ প্রভৃতি যারা পাশ করেছে সবার তাবিজ খোলাহল,প্রতেকটির লেখা তুমি ফ্যাল হইবা, তুমি ফ্যাল হইব, তুমি ফ্যাল হইবা,ওঃ এইজন্যেই পাশের খবর মাত্র তাবিজ গঙ্গাজলে নিক্ষেপ করতে হইবে,নইলে সে সব ফাঁক!দেখি মশাই,আপনার তাবিজ টা?সেই গোবেচারা লোকটিকে কোন কথা বলিবার সময় না দিয়ে টান দিয়া মারিয়া তাঁহার তাবিজটাও খুলিয়া ফেলা হইল।দেখাগেল তাঁহার মধ্যে লেখা আছে-তোমার চাকুরি কোনকালে হইবে না।ওঃএজন্য চাকুরি তাবিজ পাওয়া মাত্র গঙ্গাজলে নিক্ষেপের আদেশ দিয়েছে।তবেরে বেটা ভণ্ড,তবে রে বেটা জোচ্চর”বলিয়া ভুঁদো,ঘোঁতা ও সিদ্ধেশ্বর আস্তিন গুটাইয়া জ্যোতিষালঙ্কারের,দিকে ফিরিয়া দাঁড়াইল;কিন্তু কই গেলেন তিনি?কোন ফাঁকে ফাঁকে পা টিপিয়া টিপিয়া সরিয়া পড়িয়াছেন,কেউ টেরও পায় নাই।তার পর টানা দু, ঘণ্টা ধরে নানারকম চিৎকার,হট্টগোল এবং জ্যোতিষী মহাশয়কে নানা নিম্নশ্রিনীর সহিত তুলিত করার পর বোধয় বাড়ির লোকেদের মায়া হইল।উপরে বারান্দা হইতে ঝুকিয়া সেদিনকার সেই খুকি সেখাদিল,কহিল,বাবুরা প্যাচাল পারবেন না।মাউসার প্যাটে ভঙ্কর ব্যাদনা হিতেছে,আইজ তেনি লামায় যাইবো না।