ডুংড়ি

বাপরে, য্যামন বিস্টি, ত্যামনি ঝড়। কুটার লাখান ব্যাবাক জিনিস উইর্যা যাইতাছে। পাতাপূতি যা কিছু পাইল তাই দিহাই লিজের পাতাখান চাইপ্যা ধরত্যাছে ডুংড়ি। পানির খুড়ি, টুকরা ইট… মায় দু ঠ্যাং ছড়াইয়্যা কলাপাতাখান ধরার চ্যাষ্টা করতে লাগল সে।
সক্কাল থেইক্যাই ডুংড়ি বেজায় ব্যাস্ত, মানে পাইরলে মুখখান পুখুরের জলে না পাকলাইয়াই দৌড় লাগায় ঘরের থন। একটু খুইল্যাই কই তাইলে। ওগো গেরামের একমাত্র বড়া মনিষ্যি বড়াল বাড়ির সেজ শরিকের মাইয়ার বিয়া লাগজে আজ। গাঁ-গঞ্জে বড়ালরাই একটু গণ্যি-মান্যি লোক আছেন। হেই বাড়ির থন আইছে ব্যাবাক গাঁ ঘরের চাষাভুষা মাইনসের জন্যি নেমন্তন্ন। আমাগো ডুংড়ি মেথর-পট্টির সোমরা মাহাতোর ছুটো মাইয়া। খাইতে পইড়তে আঁট-সাঁটো, মানে হইল গিয়া – বাপে যা কামায় ছয় পুলা মাইয়ার তাতে কুলায় না। মা’টা মরছে কবে কে জানে।
ডুংড়ি জানে বিয়া অইলে ভারি আমোদ। কত কিজে হান্দানো যায়, যা তো স্বপ্নেও ভাবন যায় না। ডুংড়ি শুনছে বিয়ায় কত কি খাইবার পাওয়া যায়, হেই লিয়্যা গাঁ-ঘরে বিয়া লাইগল্যাই ডুংড়ি দৌড়। কতবার বাপে পিডান দিছে – অরা তোকে ডাকছে, পিছামরা? গেছিস ক্যান? দূর দূর কইরা হাঁকাই দিছে তো? ডুংড়ির বোবা চোখ কান্দে – প্যাডে বড্ড খিদা লাগে রে বাপ।
তো হেই চারডা-পাঁচডার আগে তো ডাক পইরবেক লাই। হগলের খ্যাঁটন হইলে পর ডুংড়িদের পাত – তাও বার মহলের রাস্তা ঘ্যাঁইস্যা। পাতে ফুলের পারা লুচি, মণ্ডা, নাইরকেল দেয়া ডাল, মাইংসের (উফফ! কি সুবাসডাই না ছারচে) ঝোল আর জিলাবি, মোতিচুরের ভিড়ভাড়ে খ্যাল করে নাই কখন বাতাস ভারি হইছে, ম্যাঘে টান ধরিছে। ডুংড়িদের মাতার উপরে তো ছাউনি লাই, তো বড় বড় ফোঁডা হইয়া পানি ডুংড়ির পাতে হানা দিতে শুরু করছে তো তখনই পাতে পায়স! আহ! পরমান্ন। ডুংড়ি থাবা দিয়া দিয়া খায়, নাল গড়ায় আর খায়। উদিকে পাতা তো ঝরের ধাইক্কায় কাইত। নিমিসে চারদিক ফাঁকা, হক্কলে পলাইছে শ্যাল্টারের নিচে। – ওরে ও ডুংড়ি, উইঠ্যা আয়, তোর পাতা যে ভাইস্যা যাইতাছে। ডুংড়ি ছাড়ে না। পানি আইয়া ভাসাইয়া লইয়া যায় পরমান্ন। হেই পানিহুদ্ধু পাতে হুমড়ি খাইয়া খাবলাইতে থাকে ডুংড়ি। ডুংড়ি কান্দে, ডুংড়ি চ্যাঁচায় – হে আল্লা, খাইতে দাও আল্লা, খাইতে দাও। ডুংড়ির চোখের পানি, ঝড়জলের পানি আর পরমান্নের পানি এক হইয়া ভাইস্যা যাইতে থাকে কাদামাটির ভিতর দিয়া।

দুঃখিত!