ডিম চোর থেকেই উট চোর

বন্ধুরা, কেমন আছ তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছ ভালো ও সুস্থ আছে।

তোমরা নিশ্চয়ই ‘চুরি’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। যার জিনিস তাকে না জানিয়ে নেয়া এবং তা ফেরত না দেয়াকেই চুরি বলে। ইসলামের দৃষ্টিতে চুরি অত্যন্ত জঘন্য কাজ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন,

“যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।” (৫:৩৮)

চোর গোপনে মানুষের সম্পদ চুরি করে এবং এ কাজে হাত ব্যবহার করে। যে হাত বিশ্বাসঘাতকতার কাজে ব্যবহৃত হয়, তা মূল্যহীন। তাই আল্লাহ বলছেন, চোরের হাত কেটে দাও, তা সে পুরুষ বা নারী যে-ই হোক না কেন। এটা তাদেরই কাজের শাস্তি, আল্লাহর পক্ষ থেকে জুলুম নয়।

তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, সব চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কাটা যায় না। চুরি করা জিনিসের মূল্য যদি এক-চতুর্থাংশ মেসকাল ওজনের সোনার মূল্যের সমপরিমাণ হয় (প্রায় এক গ্রাম) এবং চোর যদি তা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চুরি করে থাকে, তাহলে তবেই তার হাত কাটা হবে।

শৈশবেই চুরির অভ্যাস গড়ে ওঠে

বন্ধুরা, বেশিরভাগ চোরের চুরির অভ্যাস কিন্তু শৈশবে গড়ে ওঠে। বন্ধুর খেলনা চুরি করা, প্রতিবেশির বাগানের ফল চুরি করা, দোকান থেকে কিছু চুরি করার প্রবণতা শিশুদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।

শিশুরা যখন চুরি করে, তা বাড়িতেই হোক বা বাইরে, সাধারণত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় না। তবে, এক্ষেত্রে মা-বাবা এবং অভিভাবকদের সচেতন হওয়া খুব জরুরি। শিশুকে বোঝাতে হবে যে চুরি করা একটি অপরাধ এবং এটি তার জন্য খারাপ অভ্যাস। যদি মা-বাবা এটাকে গুরুত্ব না দেন বা উল্টো উৎসাহিত করেন, তাহলে এই অভ্যাস শিশুর মধ্যে স্থায়ী হয়ে যাবে।

একটি ছোট্ট শিশুর গল্প

এক মায়ের ছোট্ট এক শিশুপুত্র ছিল, যে ছিল একেবারে নিরীহ। চোর কাকে বলে কিংবা চুরি কী জিনিস তাও জানত না সে।

কিন্তু তার ডিম খেতে খুব পছন্দ ছিল। বিশেষ করে ডিমের ওমলেট ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার। প্রায়ই সে মায়ের কাছে বায়না ধরত,

  • “মা! আমার জন্য ডিমের ওমলেট তৈরি কর!”

কিন্তু একদিন মা বলল,

  • “এখন না, পরে দেব। ঘরে ডিম নেই। আমাদের মুরগিগুলো ডিম পাড়লে তারপর…”

শিশুটির ভালো লাগল না মায়ের এই দেরি করা। এত সামান্য একটা ওমলেটের জন্য দুই দিন অপেক্ষা করতে হবে!

তারপর সে একটা বুদ্ধি বের করল। পাশের বাড়ির খোঁয়াড়ে অনেক মুরগি আছে, যারা ডিম পাড়ে। শিশুটি সোজা সেখানে গেল এবং কয়েকটা ডিম নিয়ে ফিরে এলো।

সে আনন্দের সঙ্গে মায়ের হাতে ডিমগুলো দিয়ে বলল,

  • “এই নাও ডিম! এবার তো আর কোনো সমস্যা নেই? আমার জন্য ওমলেট বানাও!”

মা বিস্মিত হলো। তিনি ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,

  • “তুমি এই ডিমগুলো কোথা থেকে এনেছ?”

শিশুটি হাসতে হাসতে বলল,

  • “পাশের আঙ্কেলদের খামার থেকে নিয়ে এসেছি। ওখানে অনেক ডিম পড়ে ছিল!”

মায়ের ভুল সিদ্ধান্ত

এখন মায়ের উচিত ছিল ছেলেকে বোঝানো যে এটা অন্যায়। বলা উচিত ছিল:

  • “এটা চুরি! চুরি করা পাপ! তুমি যেখান থেকে ডিম এনেছ, ঠিক সেখানে ফিরিয়ে দাও!”

কিন্তু মা তা না করে ছেলেকে আদর করে শুধুই জিজ্ঞেস করলেন,

  • “কেউ তোমাকে দেখেছে কি না?”

ছেলে বলল,

  • “না মা, কেউ আমাকে দেখতে পায়নি!”

মা তখন সন্তুষ্ট হয়ে বলল,

  • “ঠিক আছে! তুমি বসো, আমি তোমার জন্য ওমলেট বানাচ্ছি।”

ছোট্ট শিশুটি তখন মনে মনে বুঝল— চুরি করাটা দোষের কিছু নয়, কিন্তু ধরা না পড়াই আসল কাজ!

ছোট চুরি থেকে বড় চুরি

কেটে গেল আরও কিছুদিন। শিশুটি এখন সাবধান হয়ে চুরি করতে শিখে গেছে। সে আরেকদিন একইভাবে ডিম চুরি করে আনল। মা আগের মতোই আদর করে ওমলেট বানিয়ে দিলেন।

এভাবেই ধীরে ধীরে ছেলেটির অভ্যাসে চুরি ঢুকে গেল।

বড় হওয়ার পর সে শুধু ডিম চুরিতেই সীমাবদ্ধ থাকল না। যা কিছু চুরি করা যায়, সে সুযোগ পেলেই চুরি করত।

বছর কয়েক পর সে হয়ে উঠল একজন বড় চোর।

ধরা পড়ার দিন

একদিন সে গেল এক রাখালের খামারে। সেখানে অনেক গরু, ছাগল, উট ছিল।

সে অভ্যাসবশত একটা উট চুরি করল। কিন্তু বিধি বাম!

এইবার সে ধরা পড়ে গেল। জনগণ তাকে ধরে ফেলে এবং নিয়ে গেল বিচারকের (কাজির) কাছে।

কাজি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সে সহজেই স্বীকার করল যে সে চুরি করেছে।

চুরির শাস্তি হিসেবে কাজি ঘোষণা দিলেন— চোরের হাতের আঙুল কেটে ফেলা হবে!

চোরের শেষ অনুরোধ

জল্লাদ যখন তার হাত কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন চোর চিৎকার করে বলল,

  • “একটু অপেক্ষা করুন! আমাকে আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দিন!”

চোরের অনুরোধে কাজি তার মাকে ডেকে পাঠালেন।

চোর কাঁদতে কাঁদতে বলল,

  • “হুজুর! যদি চুরির জন্য কাউকে শাস্তি দিতে হয়, তবে আমার মাকে দিন! কারণ সে-ই আমাকে এই পথ দেখিয়েছে!”

সে আরও বলল,

  • “আমি যখন ছোটখাটো চুরি করতাম, তখন আমার মা আমাকে বাধা দেননি। উল্টো উৎসাহ দিয়েছেন। তাই আমি আজ এই অবস্থায় পৌঁছেছি!”

কাজি চুপ করে রইলেন। মা নিজেও স্বীকার করলেন যে তিনি ভুল করেছেন।

শেষ পরিণতি

কাজির মন কেঁদে উঠল এবং তিনি চোরকে ক্ষমা করে দিলেন। তবে চোরের মাকে কারাগারে বন্দী করার নির্দেশ দিলেন।

বন্ধুরা, এই গল্পটি আমাদের জন্য বড় শিক্ষা বহন করে। শিশুরা ছোটখাটো চুরি করলে সেটাকে গুরুত্ব না দিলে, ভবিষ্যতে তারা বড় অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। তাই অভিভাবকদের সচেতন হওয়া খুব জরুরি।

আলোকিত ঘর-বাড়ী

মরার আগে মরে যান, তাহলেই বেচে যাবেন !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *