ডিজিটাল চোর

পুকুর চুরির প্রবাদ বাক্যটা বড় সেকেলে হয়ে গেছে। সিঁদের চোরের কথা আজকাল শোনা যায় না। কারো বাড়ি থেকে পাঁচ কেজি চাউল, ধান ক্ষেত থেকে জমির ধান, হাট থেকে কোনো নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষের পকেট কেটে দু’চারশ টাকা চুরির ঘটনা আজকাল তেমন একটা ঘটে না। খুঁজে পাওয়া যায় না সিঁদেল চোর। আর কিছুদিন পর সিঁদেল চোর বিলীন প্রজাতির অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। তাদের স’ান দখল করবে ডিজিটাল চোর আর পুকুর চুরির প্রবাদ বাক্যটা ডিকশনারি থেকে উঠে গিয়ে হবে সাগর চুরি। না হয়তো চুরি বলেও কিছু থাকবে না আজকাল তো চুরি নেই সবই ডাকাতি।
এই সিঁদেল চোর বা ছিঁচকে চোর বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা লিখতে গিয়ে আমার মনে পড়লো এক চোরের চুরি ছেড়ে দেয়ার গল্প।
এক গ্রামে এক চোর ছিলো। নাম ছালু চোর। সে প্রতিদিন রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতো আর চুরি করে বাড়ি ফিরতো ভোরবেলা। তারপর দুপুর পর্যন্ত ঘুমাতো। এলাকার প্রায় সবাই জানতো ছালু প্রফেশনাল চোর কিন’ তার একটা নিয়ম ছিলো। সে কোনোদিন এলাকার মানুষের বাড়িতে চুরি করতো না বা পরিচিত মানুষের বাড়িতে সিঁদ কাটাতো না।
হঠাৎ করে ছালু চোরের আচরণে অনে পরিবর্তন দেখা গেলো। সে আর অনেক বেলা পর্যন্ত বিছানায় ঘুমায় না। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কামলা দিতে বেরিয়ে যায়। তার জীবন-যাপনের এই পরিবর্তনটা এলাকায় সবার মুখে মুখে হয়ে গেলো।
একদিন সকালবেলা ছালু কামলা দিতে এক কৃষকের বাড়িতে যাচ্ছিলো। তাকে দেখে তার এক বাল্য বন্ধু আলম জিজ্ঞেস করলো, এই ছালু কোথায় যাচ্ছিস্‌?
মজিদ মহাজনের বাড়িতে।
কেনো?
কামলা দিতে।
চুরি ছেড়ে দিলি নাকি?
হ্যাঁ।
আলম কয়েক মুহূর্ত ছালুর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, ঠিক বলছিস্‌?
হ্যাঁ।
কেনো?
সে অনেক কথা।
বল্‌ না।
এখন সময় নেই দোস্ত। বলতে সময় লাগবে।
সংক্ষেপে বল্‌।
কয়েক দিন আগে কাজিপাড়ায় একটা চুরি করেছিলাম।
তারপর।
বেশি টাকা পাইনি, মোটেই হাজার পাঁচেক কিন’ মানুষ বেঈমান হয়ে গেছে দোস্ত।
কী রকম?
সেই গেরস’ থানায় মামলা করেছে পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি হয়েছে।
এতো বড় মিথ্যা কথা!
কী আর বল্‌বি, কৃষক যা বলবে সেটাই ঠিক, চোরের কথা কে শোনে।
তারপর-
তারপর আর কী গেরস’ থানায় মামলা করেছে তার পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি হয়েছে।
তোর নামে মামলা করেছে?
না, আমার নাম ধরে মামলা করেনি। কিন’ পুলিশ তো জানে এই থানায় কে কে চোর আছে। ওখানে তো আমারো নাম আছে।
তারপর-
পরদিন ওসি স্যার থানায় ডেকে পাঠিয়েছিলো।
তুই থানায় গেছিলি?
হ্যাঁ।
তারপরও তোকে ছেড়ে দিলো?
হ্যাঁ। ডেকে নিয়ে বললো, তুই পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি করেছিস্‌, টাকাটা ফেরত দে।
আমি অনেক অনুনয়-বিনয় করলাম, স্যার আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি করিনি, মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছি।
ওসি স্যার সঙ্গে সঙ্গেই চোখ-মুখ লাল করে বললো, একদম মিথ্যা কথা বল্‌বি না। তুই পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি করেছিস্‌, বিশ হাজার টাকা দে, না দিলে লকাপে ঢুকিয়ে দিবো।
আমি অনেক কান্নাকাটি করলাম কিন’ ওসি স্যার কোনো কথাই শুনলো না। আমি টাকা দিতে না চাইলে আমাকে তখনই লকাপে ঢুকিয়ে দিতো। আমি কথা দিয়ে এসেছিলাম যে টাকাটা আমি এক সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে যাবো।
তখন তোকে ছেড়ে দিলো?
হ্যাঁ। বাড়ি এসে পুকুর পাড়ে আমার একটু জমি ছিলো, ওটা বেচে ওসি স্যারকে বিশ হাজার টাকা দিয়ে এসেছি আর-
আর কী?
আর থানার ভিতর যে মসজিদটা আছে ওখানে কান ধরে তওবা করেছি আর জীবনে কোনোদিন চুরি করবো না।
ছালু মিয়া সেই থেকে চুরি বাদ দিলো কিন’ ছালু মিয়ার মতো সিঁদেল চোরের স’ান দখল করলো ডিজিটাল চোর কিন’ চুরির হাত থেকে রক্ষা পেলো না জনগণ।

সমাপ্ত

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!