ডাকাতি—- কনাদ মুখোপাধ্যায়

গড়ের পাঁচিলটা এখানেই ভেঙে ভেঙে শেষ হয়েছে। না, কেউ থাকে না ওই গড়টায়। কবে কার একটা পুরনো দুর্গ, সাত বুড়োর আমলের। ভূতের ভয়ে কেউ তার চারধারও মাড়ায় না।

আলোছায়া ঘেরা, শাল-পিয়ালের জঙ্গলে ভরা এই জায়গাটায় পা দিলেই গা ছমছম করে।

অথচ আজ না এসে উপায় ছিল না। বাবা এখনও ঘরে আসেনি। রাতদিন যে কোথায় থাকে লোকটা? মা ছিল। হাতের কাছে গোরুর খুঁটো পোঁতার মুগুরটাও ছিল। তাই ছুড়ে মেরেছে। উহ্ বাবা বড্ড লেগেছে। শুধু মায়ে রক্ষা নেই, আবার বাবা দোসর। নাঃ, অত নেওয়া যাবে না। তাই বাড়ি থেকে পালিয়ে গড়ের চৌহদ্দির মধ্যেই ঢুকল সিধু।

আসলে, পাশের বাড়ির কুমড়ো কাকার পুকুরে বড় বড় বোয়াল হয়েছে। মাছ খেতে বেশ লাগে সিধুর। গত রবিবার জাল দিয়েছিল কুমড়ো কাকা। নধর মাছগুলো দেখে সিধুর চোখ চকচক করে উঠেছিল। শহর থেকে কতদূরে তাদের গাঁ। ১৬ বছরের জীবনে বড়মাছ হাতে গুনে বাড়িতে ঢুকতে দেখেছে সিধু। ওই বড়মাছের হিসেব দিয়েই তো দিদিমা তার বয়স মনে রেখেছে। তা কাকার কাছে চেয়েচিন্তে একটা মাছ পেয়েছিল সে। তবে মন ভরেনি। তাই গতকাল একটা ফাঁসজাল নামিয়েছিল পুকুরে। ভোররাত্তিরে উঠে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখে এক বিপত্তি। চার-পাঁচটা লোক লাঠিসোঁটা হাতে ঘোরাফেরা করছে কুমড়ো কাকার বাড়ির পাশে। পুকুরে নামতে গেলেই ধরা পড়ে যেত। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও পুকুরে নামতে পারেনি। খালিহাতেই ফিরতে হয়েছে। বাড়িতে ফিরতেই মা বুঝে ফেলেছিল। তারপরই ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ।

পালিয়ে আসার সময় কুমড়ো কাকার বাড়িতে ঢোকার মুখে প্রচুর লোক দেখেছিল সিধু। সকলেই বলাবলি করছে, কী ভয়ঙ্কর, ওফ চোখে দেখা যাচ্ছে না কুমড়োকে। উঁকিঝুঁকি মারতে গিয়েছিল সিধু। তবে তাকে ঢুকতেই দেয়নি লোকজন। তবে সে বুঝতে পেরেছিল, সকলের চোখেমুখে কী দারুণ আতঙ্ক।

গড়ের পাঁচিল পেরিয়ে অনেকক্ষণ আগেই ভাঙাচোরা দুর্গটার মধ্যে ঢুকেছে সিধু। একটা ছাদওলা ঘরে ঢুকে পাঁচিলের আড়ালে শুয়ে শুয়ে এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিল।

” কিরে তোর যন্ত্রটা কোথায়?”
“এই তো আমার কোমরেই গোঁজা।”
“রেখে দে, ওটা ভাল করে রেখে দে। মনে রাখবি, ওই যন্ত্রটার জন্যই অ্যাকশন করতে হয়েছে। যখন যুদ্ধ শুরু হয়, নিরস্ত্র মানুষ তখন এভাবেই অস্ত্র সংগ্রহ করে। আরও অস্ত্র এইভাবে সংগ্রহ করতে হবে। মনে রাখবি, আমাদের কমরেডরা প্রতিদিন গ্রামের মাথা, পুলিশ, জওয়ানদের থেকে এইভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে যাচ্ছে। যুদ্ধের জন্য, মুক্তির জন্য। আমাদের ফৌজের জন্য”

ফিসফিসানি হলেও, পাঁচিলের আড়ালে থেকে সিধুর কানে পৌঁছেছিল কথা বলার আওয়াজ। ঘুম তখন কাঁচা হয়ে এসেছে। উঁকি মেরে দেখতে গিয়ে এবারও দেখতে পারেনি সিধু। অজানা একটা ভয় চেপে ধরেছিল তার বুকটা। পাঁচিলের শেষপ্রান্তে সে নিজেকে টেনে নিয়ে যেতে পারেনি। তবে নেতা টাইপের লোকটার গলা চিনতে পেরেছিল সে? ওইজন্যই কি লোকটাকে সে উদয়াস্তে একবারও চোখের দেখা দেখতে পায় না?

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!