
এক যে ছিল ব্রাহ্মণী, আর তার যে ছিল পতি, -ব্রাহ্মণীটি বুদ্ধির ঘড়া, ব্রাহ্মণ বোকা অতি! কাজেই সংসারের যত কাজ ব্রাহ্মণীরই হ’ত করতে, ব্রাহ্মণ শুধু খেতেন বসে, ব্রাহ্মণীর হ’ত মরতে। ব্রাহ্মণীটি যে,-রণচণ্ডী!-নথের ঝাঁকিতে নাক ছিঁড়ে। -মাথার চুলে তৈল নাই, গা-গতরে খৈল নাই, ‘নিত্য ভিক্ষা তনু রক্ষা,’ তার উপর আবার বামুনের চাটাল চাটাল কথা। জ্বালাতন-পালাতন বামনী ধান ঝাড়ে, তা’র তুষ ফেলে, কি, ধান ফেলে! এমন সময় ব্রাহ্মণ গিয়া
বলিল-“বামনী, আজ বুঝি পিটে করবি, না?” কূলো মূলো ফেলিয়া খ্যাংরা নিয়া ব্রাহ্মণী গর্জে উঠিল, “হ্যাঁ, পিটে করতেই বসেছি! চাল বাড়ন্ত হাঁড়ি খট খট-এক কড়ার মুরোদ নাই পিটা খেকোর পুত পিটা খাবে!- বেরো আমার বাড়ী থেকে!” গর্জনে উঠান কাঁপে, গাছ থর থর পক্ষী উড়ে;- ব্রাহ্মণ ভাবলেন- “কি? ব্রাহ্মণী, তার গালি সইব এত আমি? তা’ হবে না!” তখনি রাগে হলেন বনগামী! বনে বনে ঘোরেন, এমন সময় এক সন্ন্যাসীর সঙ্গে ব্রাহ্মণের দেখা। সকল কথা শুনিয়া, সন্ন্যাসী, ব্রাহ্মণকে আপন আশ্রমে নিয়া গেলেন। আশ্রমে গিয়া ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসীর কাছে লেখাপড়া শিখেন। কান নড়বড় বুড়ো বামুন
মুনির কাছে পড়েন কেমন? এ বেলা পড়েন,-“ক-চ-প-অ-অ-অ” ও বেলা পড়েন,-“খ-চ-ক-অ-অ-অ! দিনে পড়েন,-“হগড়ং ডগড়ং বগ বগ বগড়ম।” রাতে পড়েন,-“চং, ছং, খঁরঁরঁঅম্-ঘড়্-ড়্ ঘড়ম্!” নাকের ডাকে গলার ডাকে নিশি ভোর! এই রকম করিয়া ব্রাহ্মণ খুব অনেক বিদ্যা শিখিয়া ফেলিলেন। শিখিয়া শুখিয়া ব্রাহ্মণ মনে মনে, ভাবলেন-আমি হনু একজন! বিদ্যেয় এখন ছড়াছড়ি যাবে যশ ধন! তখন-বামনীর সে বিষমুখ দেখতে না আর হবে,- হাঃ! হাঃ! তখন আমি কোথায় রব, আর বামনী কোথা রবে! ভারি স্ফূর্তি।–কিসের আবার সন্ন্যাসীর কাছে বলা টলা!- খুঙ্গি পুঁথি লাঠি চাটি বাঁধিয়া পুঁটুলী “জয় জগদম্বা!” বামুন, দেশে গেলেন চলি। ভাদ্দুরে’ রোদ, তাল পাকে, মাটি পাথর ফাটে,-সন্ধ্যাবেলায় ব্রাহ্মণ আপন গাঁয়ের সীমায় আসিলেন।–“ঠিক তো!- রাজার বাড়ী তো যাবই তো, তা মরিল কি রইল, বামনীটাকে একবার দেখে’-গেলেও-হয়।” একটু রাত হইয়াছে, তখন ব্রাহ্মণ, বাড়ীর আঙ্গিনায় উঠিয়াছেন। ছ্যাঁক্ ছ্যাঁক্ শব্দ বামুন, শুনতে পেলেন কানে,- “বামনী ভাজেন তালের বড়, বুঝি অনুমানে!’’ ব্রাহ্মণ চু-প্ করিয়া কানাচে কান পাতিয়া রহিলেন। “কটা হল ছ্যাঁক?-মনে মনে ল্যাখ্। চার, পাঁচ, সাত, আট-এক কুড়ি এক।’’ তখন আর ‘ছ্যাঁক’ নাই-ব্রাহ্মণী হাত পা ধুইয়া যেই বাহিরে আসিলেন, ব্রাহ্মণ ডাকিলা উচ্চে-“ব্রাহ্মণী আছ বাড়ী? এবার আমি শিখে এলাম বিদ্যে ভারি ভারি!” চমকিয়া ব্রাহ্মণী ছুটিয়া আসিয়া দেখেন- সারা-অঙ্গে তিলক ফোঁটা ব্রাহ্মণ আসিয়া হাজির! ব্যস্তে স্বস্তে ব্রাহ্মণী বলিলেন,- “এতদিন কোথায় ছিলে?” ব্রাহ্মণ বলিলেন,- “ব্রাহ্মণী! আমি খুব ভারি ভারি বিদ্যা শিখিয়া আসিয়াছি, তাই তোকে বলিয়া যাইতে আসিয়াছি!” ব্রাহ্মণী বলিলেন,-“দূর পাগল!” ব্রাহ্মণ বলিলেন,- ‘জানিসনে তাই বলছিস্ অমন, নইলে এতক্ষণ এককুড়ি এক বড়া সাজিয়ে দিতিস নেমন্তন।” “অ্যাঁ? তুমি কি করে জানিলে?” ব্রাহ্মণ বলিলেন,-“বামনি!- ঐ তো বিদ্যের মা জননী! বল্লেম আমি গণে’;- যেখানে যে ভাজুক বড়া সবি আমার মনে!” শুনিয়া ব্রাহ্মণী অবাক!-“আহা, আহা, সত্যি কি, সত্যি কি?” ব্রাহ্মণী মনের আনন্দে- ছুটে গিয়ে যত পাড়ার লোকের কাছে কয়,- “বামুন এল বিদ্যে শিখে, যেমন বিদ্যে নয়।” পাড়ার লোকে আশ্চর্য!-আসিয়া দেখে,- মেলাই পুঁথি খুলে’ বামুন ঘন টিকি নাড়ে হং লং বং চং লম্বা বচন ঝাড়ে- সে সব কি যে-সে বোঝে? সকলের চমক লাগিয়া গেল। দেখতে দেখতে সারা গাঁয়ে রাষ্ট্র হল যে, চমৎকার বিদ্যে বামুন শিখে এসেছে।
খুব জাঁকে দিন যায়। এর হাত গণেন, ওর চুরি গণেন, দেশে দেশে ব্রাহ্মণের বিদ্যার নামে জয় জয় উঠিল। একদিন, মতি ধোপার গাধা হারাইয়াছে।–মতি ব্রাহ্মণের দুয়ারে আসিয়া ধর্ণা দিল- “বলে দাও দেবতা আমার উপায় হবে কি গো- সবে ধন হারিয়েছি খোঁড়া গাধাটি গো।” ব্রাহ্মণ বলিলেন,- “চুপ্ থাক্-এখন আমি চণ্ডীপূজো করে তবে এসে বলব বসে’ থাকগে ওই দোরে।” না খাইয়া না দাইয়া মতি দুয়ারে পড়িয়া রহিল। ব্রাহ্মণ ঘরে গিয়া বলেন, -“বামনি এখন কি করি?-দাও তো দেখি ছাতাটা।” ছাতা নিয়া ব্রাহ্মণ ঝাঁ ঝাঁ রৌদ্রে সারা মাঠ ঘুরিয়াও গাধা পাইলেন না। তখন, হাঁপাতে হাঁপাতে এসে, ক্ষুণ্ণ অতি মন, বলিলেন,-“ওরে মতে’! বলি তোরে শোন- আজ গাধাটা পাবি নাক, যা, চণ্ডী রেগেছেন বড় কি জানি কি করে; কাল এসে গাধা তুই নিয়ে যাস ঘরে।” দেবীর রাগের কথায় মতি ভয়ে ভয়ে চলে গেল। তখন সূয্যি ডুবে গেছে, তারপর রাত্রি হয়ে এল। ব্রাহ্মণের চিন্তা বড়,- “বুঝি এইবার হায় হায় ভেঙ্গে যায় সব ভুরিভাড়।” রাত্রি হইল; বসিয়া বসিয়া মাথে হাত ব্রাহ্মণ ভাবিতে লাগিলেন- “যত বিদ্যা খুঙ্গি পুঁথি এইবার ফাঁক জগদম্বা! কি করিলে!-বিষম বিপাক!” ভাবিয়া ভাবিয়া ব্রাহ্মণ ঘুমাইয়া পড়িলেন। অনেক রাত্রে, বা’র আঙ্গিনার কোণে কিসের শব্দ! ব্রাহ্মণ ধড়্ফড়্ করিয়া জাগিয়া উঠিলেন- “বামনি বামনি শুনছো,-ওটা হলো কিসের শব্দ?” ব্রাহ্মণী- “হাঁ হাঁ- বুঝি চোর এসেছে-করতে হবে জব্দ।” ব্রাহ্মণটি আবার চোরের নামে ভয় খেতেন; কাঁদ-কাঁদ সুরে বলিলেন,-“বামনি, তবে আমি নুকুই!” ব্রাহ্মণী বলিলেন-“তাই তো! এতেই এত বড় পণ্ডিত?-অত পণ্ডিতি ঢালাইয়া কাজ নাই, আমি আলো ধরছি, চোর ধরবে চল।
পরের চোর গণে’ নিত্য বেড়ান বাড়ী বাড়ী, আপন ঘরে সেঁধোলে চোর, করেন তড়বড়ি।” কি করেন বামুন, ‘জারে লোহা কোঁকড়’, ডরে ভয়ে কেন্নটি, ঘরে থাকলে রাবণে মারে, বাইরে গেলে রামে মারে,-দশ আঙ্গুলে পৈতা জড়াইয়া “দুর্গা,-দুর্গা,-জগদম্বা” জপিতে জপিতে ব্রাহ্মণ চোর ধরিতে গেলেন। “ঐ যে চোর, ধর না!” ধাক্কা দিয়া বামনী বামুনকে ঠেলিয়া দিল!- “গ্যাঁ-গ্যাঁ-গ্যাঁ-ঘ্যাঁ-অ্যাঁ-অ্যাঁ-অ্যাঁ।” “ওমা! ও আবার কি!” প্রদীপ নিয়া গিয়া ব্রাহ্মণী দেখেন- ওমা-এটা তো চোর নয় গো মা- উব্ড়ো থুবড়ো পড়ে আছে মস্ত গাধাটা! বামুনে-গাধায় ঝড়-কম্পন, কুকুর-কুণ্ডলী! হুমড়ি খেয়ে যখন বামুন উপড়ে পড়ল আসি’, গলায়-দড়া খোঁড়া গাধার লেজে গেছে ফাঁসি। গলায় গলায় ঘড়্ ঘড়্, বামুন করেন ধড়্ফড়্- চোখ উল্টে পড়ে, বামুন হয়েছে হাঁ;- বামনী উঠলেন চেঁচিয়ে-“হায়! কি হল গো মা!” পাড়ার লোক ছুটিয়া আসে,-“কি, কি, কি হয়েছে,-ভয় নাই!” ব্রাহ্মণী বলিলেন,- “না না, কিছু না এই গাধাটা দেখছিলেম।” তাড়াতাড়ি ব্রাহ্মণী গাধা নিয়া খুঁটিতে বাঁধিলেন, বামুনকে নিয়া বিছানায় শোয়াইলেন,- তেল, জল, ফুঁ-বাতাস,- সকলে আসিয়া বলে, “কি, কি, হইয়াছে কি?” ব্রাক্ষণী বলিলেন,- “এমন কিছু না,-ঠাকুর বসেছিলেন জপে, গণে’ এনে মতির গাধা এই শুয়েছেন তবে। হারানো গাধা গণে’ আনা শক্ত কম তো নয়?- তাই একটু অস্থির আছেন জ্যোতিষ মহাশয়।” কি আশ্চর্য! মন্ত্রের জোরে হারানো গাধা আসিয়া উপস্থিত! সকলে অবাক!!! এত তেল জল বাতাস! মূর্ছা ভাঙ্গতেই “চোর! চোর!” বলে বামুন উঠিয়া বসিল! ব্রাহ্মণী বলিলেন,- “চোর কোথায় তোমার মাথা,- ওই দ্যাখ না মতির গাধা খুঁটিতে বাঁধা।” ব্রাহ্মণ বলিল,- “গাধা?-কৈ, কৈ,মতে’কে ডাক!” তাড়াতাড়ি ব্রাহ্মণী বলেন, -“চুপ্ কর, চুপ্ কর- এতরাত্রে মতে’! ওগো বাছারা, রাত গেল, তোমরা এখন বাড়ী যাও,- বামুন ঘুমুক।” সকলে চলে গেল। বামুন জিজ্ঞাসেন,- “তাই তো বামনী, হয়েছিল কি!” পরদিন মতি আসিয়া দেখে,-গাধা! মতি লম্বা গড়াগড়ি- আঙ্গিনার অর্ধেক ধূলাই, মতি, খাইয়া ফেলিল! এখন, অমনি বামুনের কাপড় কাচে- তারপর মতি- এ আশ্চর্য কথা আরো ঘটা ছটা দিয়ে- রটনা করিল সব গাঁয়ে গাঁয়ে গিয়ে তখন, ব্রাহ্মণী ধন্য ধন্য প’ল দেশময়।– ক্রমে এ কাহিনী রাজ-কর্ণগোচর হয় রাজকন্যার লক্ষ টাকার হার পাওয়া যায় না। কত জ্যোতিষ, কত পণ্ডিত আসিয়া হার মানিল।
‘রুই কাৎলার আটকাট সবই কেবল মালসাট’- শেষে ডাক বামুনকে। ঢেঙ্গা ঢেঙ্গা পাইক, এ-ই আশা-সোটা!-বামুন ভাবেন ‘ভাল ভাল ছিলাম বোকা, কপালের না জানি লেখা’- খাঁড়ার তলে ধাড়ি ছাগল, কাঁপিতে কাঁপিতে বামুন রাজ-সভায় গেলেন। রাজার হুকুম,- ‘হার গণে দিতে পার পাবে পুরস্কার, নৈলে বামুন শেষকালে বাস কারাগার।” সিধা পত্র চুলোয় যাক, পূজা অর্চনা মাথায় থাক, ব্রাহ্মণ বলিলেন,-“মহারাজ দু’দিন সময় চাই।” “আচ্ছা।” দিনের মতন দিন গেল, রাত এল, এক, ঘরে, বামুনের ঠাঁই ঘটি ঘটি জল খায় বামুন করে আই ঢাই,- “হায় মাগো জগদম্বা, বিপাকে ফেলিলি, ছায়ে পোয়ে সর্বনাশ, প্রাণে ধনে নিলি কি করি উঠায় মাগো কি করি উপায়- জগদম্বা! এই তোর মনে ছিল হায়!” রাজবাড়ীর জগা মালিনী, জগদম্বা নাম,- সেইখান দিয়া যাচ্ছিল,- খপ করে থামে জগা-ধুকু ধুকু প্রাণ। আর কথা, আর বার্তা-“দোহাই ঠাকুর, দোহাই বাবা!-যা’ বল বাবা তাই করি-রাজার কাছে যেন আমার নামটি করো না!” জগা ছুটিয়া গিয়া বামুনের দুই পা সাপটিয়া পড়িল। বামুন চমৎকার!-“এ আবার কি!-কে তুমি কে তুমি! আমি কি করেছি-আমাকে কেন?” “না বাবা ঠাকুর, তুমি সব জেনেছ, আমি আর এমন কর্ম করব না;- দোহাই বাবা, আমাকে রক্ষা কর, লোভে পড়ে’ আমি রাজকন্যার হার নিয়েছিলাম।– দোহাই বাবা, পায়ে তোর পড়ি বাবা!” তখন বুঝিলা ব্রাহ্মণ, কি করে কি হ’ল- ‘জগদম্বা’ নাম নিতে জগা ধরা দিল! তখন, ব্রাহ্মণের ধড়ে এল প্রাণ,- ধীর সুস্থির মহাপণ্ডিত হইয়া বলিলেন,-“যা করেছিস, করেছিস, তোর ভয় নাই, হাঁড়ির ভিতর যেন হার থাকে; রাখ নিয়া খিড়কী পুকুরের পাঁকে; তাতে যেন ভুলটি না হয়।” দুই চক্ষের জল ছেড়ে, জগা বাঁচে,-তখনি হার নিয়া খিড়কী পুকুরে রাখিয়া আসিল। পরদিন,- গা-ময় তিলক ছাপা চিতা-বাঘের ঠাকুর-জামাই,-তিন নামাবলী গায়ে, তিন নামাবলী গলায়, বড় বড় রুদ্রাক্ষের মালা, ফুলের ভারে টিকি ঝোলা, খুঙ্গি, পুঁথি, ছাতি, লাঠি, সকল নিয়া ব্রাহ্মণ রাজার সভায় গিয়া উপস্থিত।
টিকি নাড়ে মন্ত্র পড়ে, ভঙ্গী ছঙ্গী কত এ পুঁথি ও পুঁথি খোলে পুঁথি শত শত! গণিয়া গণিয়া আঙ্গুল ক্ষয়,-কত শত খড়ি পাতে, কত শত মাটি আঁকে,-অনেক ক্ষণের পর, “শুন শুন মহাশয়! পেয়ে গেছি হার, নিশ্চয় সে রহিয়াছে পুকুরে তোমার।” “খোঁজ্ খোঁজ্!”- পুকুরের জল দৈ,-কিন্তু হার মিলিল কৈ?- রাজা বলেন, “হা রে হা রে, চতুরালী করেছ বচন, না রাখ প্রাণের ভয়, কেমন ব্রাহ্মণ!” “দোহাই মহারাজ!”- ভ্যাঁ করে’ বামুন কাঁদে আর কি,- “আমার ভুল নাই, – মহারাজ, তবে সত্যি এ সব জগদম্বার কাজ!” রাজা বলিলেন,-“ঠিক!-হতে পারে দশার দশা, আচ্ছা, না হয় আবার খোঁজ!-তা, বামুনকে বাঁধ, যেন না পালায়।” আবার খোঁজ্ খোঁজ- কাদার তলেতে এক পাওয়া গেল ভাঁড়; ভেঙ্গে দেখে, ঝলমল হার মাঝে তার। পাওয়া গেল, পাওয়া গেল! বামুনের বাঁধ খুলে’ গেল, সিংহাসন ছেড়ে রাজা পড়ে এসে পায়- “আজ হতে হৈলা তুমি পণ্ডিত সভায়।” আনন্দে ব্রাহ্মণ মূর্ছা-ই গেল। এবার কিন্তু সে চোর ধরার মূর্ছা নয়। তা’ না হক তা’ ভালই,-তা’র পর? তারপর? ধন রত্ন, মণি মোতি, ছাড়াছড়ি যায় নিত্য গিয়া বসে ব্রাহ্মণ, রাজায় সভায়। দিকে দিকে হতে আসে পণ্ডিত বড় বড়, আমাদের পণ্ডিতের নামে ভয়ে জড়সড়। রাজা দেন পাদ্য অর্ঘ্য রাণী দেন পূজা, জগা নিত্য যোগায় ফুল,- ঠাকুর পূজেন দশভূজা। তখন- ত্রিতল প্রাসাদে সেই আগের ব্রাহ্মণ সোনার খাটেতে রন করিয়া শয়ন। আর- তেলে ভাণ্ডার ভেসে যায়, গায়ে ধরে না গয়না, ব্রাহ্মণী তো ভারী খুশী,-হেসে ছাড়া কয়-ই না। এখন- রোজই বামুন পিটা খায়- ‘আহা লক্ষ্মী অতি।’ শুনে’ বামনী হেসে কুটি কুটি,-মনের সুখে- পতিসেবা করিতে লাগিলা সুখে সতী।