ঠাকুমার আয়না-২য় পর্ব

মুন্নির বাবা একটু উদাসীন ধরনের মানুষ | কলেজে পড়ান | নিজের পড়াশোনা লেখালিখি নিয়েই থাকেন | জাগতিক বিষয়ে তাঁর হুঁশ একটু কম | মুন্নির মা সুন্দর কিংবা মুন্নি সুন্দর নয় ‚ দুটোর কোনওটাই তাঁকে বিশেষ ভাবায় না | কিন্তু মুন্নির মাকে ভাবায় | একটু বেশি মাত্রাতেই ভাবায় | মেয়ে তাঁর মত সুন্দরী হয়নি বলে তাঁর ভারি দুঃখ | মুন্নি শুনেছে ‚ তার জন্মের পর কোনও এক পিসি নাকি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে বাচ্ছার গায়ের রঙ মনে হচ্ছে মায়ের মত অমন গোলাপফুলের বন্ন হবে না | তাই শুনে মুন্নির মা সুতনুকা সেই ননদের সঙ্গে সারাজীবন কথা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন | কিন্তু কালে কালে তো বোঝা গেল সত্যিই মুন্নির গায়ের রঙ ময়লা | মায়ের মত অমন ডানাকাটা পরি সে মোটেই নয় |কিন্তু মা সেটা মেনে নিতে পারলেন না কিছুতেই |মুন্নির ভগবানের দেওয়া রূপকে নিজের মনের মত করে বদলে দেওয়ার ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা তিনি করে ফেলেছেন | অতএব মুন্নির কোনও রেহাই নেই | সারা বছর তার মুখে-গায়ে-হাতে পায়ে নানা ধরেনর রূপটান মাখার কোনও বিরাম নেই | কখনও কাঁচা হলুদের সঙ্গে কমলালেবুর খোসা বাটা |কখনও দুধের সঙ্গে মুলতানি মাটি | কখনও আবার শসার রসের সঙ্গে গোলাপজল |এর পাশাপাশি চলে নানারকম ফুল পাতার রস আর তেল দিয়ে চুলের পরিচর্যা |

 

স্কুল খোলা থাকলে মা তেমনভাবে মুন্নিকে হাতে পান না | কারণ সকাল আটটার মধ্যেই নাকে-মুখে দুটো গুঁজে না নিলে স্কুলের বাস এসে গেটের সামনে হর্ন দেয় | ফিরতে ফিরতে বিকেল চারটে | এছাড়া তো ক্লাস টেস্ট, টিউশন এসব আছেই | ছুটির দিনগুলো বিশেষত পুজো আর গরমের লম্বা ছুটিতে তাই মা মেয়ের ওপর রূপচর্চার যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে নেন | এত রূপচর্চার যা ফল তা অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে | মুন্নির গায়ের রঙ যত্ন করে মাজা পিতলের ঘটির মত মসৃণ উজ্জল | চুলও ঝকঝকে সুন্দর | স্কুলের বন্ধুরা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় | কিন্তু মুন্নির মায়ের মতে এগুলো কোনও সৌন্দর্যের মাপকাঠিই নয় | অতএব মুন্নির কোনও ছাড় নেই | আর সেজন্যই স্কুল যেতে হবে না ভাবলেই মুন্নির মেজাজ গরম হয়ে যায় |

তবে স্কুলে যেতে ভালবাসে বলেই যে মুন্নি পড়াশোনায় খুব ভাল তা কিন্তু নয় | আসলে তাকে যে লেখাপড়ায় ভাল না খারাপ কী বলা যায় ‚ সেটা নিশ্চিত করে স্কুলের দিদিমণিরাও বলতে পারেন না |

মাঝে মাঝে কঠিন অঙ্ক ‚ ক্লাসের ফার্স্ট গার্লও যেটা নিয়ে মাথা চুলকে অস্থির ‚ সেটা সে দিব্যি করে দেয় | আবার পরীক্ষার সময় এমন সহজ অঙ্ক ভুল করে আসে যে রেজাল্টে কোনওরকমে টায়টোয়ে পাস | ইংরাজি ‚ বাংলা সব কিছুতেই প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটে | স্কুলের টিচাররা অনেকেই মনে করেন মুন্নি একটু চেষ্টা করলেই অনেক ভাল রেজাল্ট করতে পারে | কিন্তু সেই চেষ্টাটাই তার নেই আর মুন্নির যেন রেজাল্ট ভাল-খারাপ কোনও কিছুতেই বিশেষ কিছু আসে যায় না |সারক্ষণই সে ভারি অন্যমনস্ক | কেমন যেন একটা বিষণ্ণ ‚মনমরা ভাব |

গরমের ছুটি শুরু হয়ে গেল নিয়ম মনেই | দিনগুলো এমনিতেই বেশ একঘেয়ে | প্রচন্ড রোদে এমনিতেই বাইরে বেরোনর উপায় নেই | তাছাড়া মায়েরও বেরোতে দিতে ভীষণ আপত্তি | রোদে গায়ের রঙ পুড়ে কালো হয়ে যাবে | মুন্নি তাই সারাদিন বাড়িতেই আছে | তবে একটা সুবিধা অবশ্য হয়েছে | তার এবার ক্লাস এইট |

পড়াশোনার চাপ বেড়েছে | পড়াশোনা করতে মুন্নির যে বিশেষ ভাল লাগে তা নয় | তবে নিজের ঘরে বই হাতে নিয়ে বসে অনেকটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায় | আর মেয়ে পড়াশোনা করছে দেখলে বাবা তাকে ডিস্টার্ব করাটা পছন্দ করেন না | তাই মাও সেই সময়টা মুন্নির ঘরে বিশেষ আসেন না |

 

গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!