গল্পের অষ্টম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
তারপরই চমক ভাঙ্গে আমার। তাকিয়ে দেখি ঠোঁটের কোণে ম্যানিলা চুরুট পুড়ছে। অস্থির চঞ্চল পায়ে রাজাবাহাদুর ঘরের ভেতর পায়চারি করছেন। চোখেমুখে একটা চাপা আ—ঠোঁটদুটোর নিষ্ঠুর কঠিনতা। কখনো ভোজালি তুলে নিয়ে নিজের হাতের ওপরে ফলাটা রেখে পরীক্ষা করেন সেটার ধার।
আবার কখনো বা জানালার সামনে খানিকক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন নিচের জঙ্গলটার দিকে। আজ তিনদিন থেকে উল্লেখযোগ্য একটা কিছু শিকার করতে পারেননি—ক্ষোভে তাঁর দাঁতগুলো কড়মড় করে।
তারপরই বেরিয়ে যান এনার্জি সংগ্রহের চেষ্টায়। বাইরের বারান্দায় গিয়ে হাঁক দেন—পেগ।
কিন্তু পরের পয়সায় রাজভোগ খেয়ে এবং রাজোচিত বিলাস করে বেশি দিন কাটানো আর সম্ভব নয় আমার পক্ষে। রাজাবাহাদুরের অনুগ্রহ একটা দামী জিনিস বটে, কিন্তু কোলকাতায় আমার ঘর-সংসার আছে, একটা দ্বায়িত্ব আছে তার। সুতরাং চতুর্থ দিন সকালে কথাটা আমাকে পাড়তে হল।
বললাম, এবারের আমাকে বিদায় দিন তাহলে। রাজাবাহাদুর সবে চতুর্থ পেগে চুমুক দিয়েছেন তখন। তেমনি অসুস্থ আর রক্তাভ চোখে আমার দিকে তাকালেন। বললেন, আপনি যেতে চান?
—হ্যাঁ, কাজকর্ম রয়েছে—
—কিন্তু আমার শিকার আপনাকে দেখাতে পারলাম না। —
—সে না হয় আর একবার হবে।
—হুম।–চাপা ঠোঁটের ভেতরেই একটা গভীর আওয়াজ করলেন রাজাবাহাদুর : আপনি ভাবছেন আমার রাইফেলগুলো দেওয়ালে ওইসব শিকারের নমুণা—ওগুলো সব ফার্স?
আমি সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, না, না। তা কেন ভাবতে যাব?শিকার তো খানিকটা অদৃষ্টের ব্যাপার—
—হুম!—অদৃষ্টকেও বদলানো চলে। রাজাবাহাদুর উঠে পড়লেন : আমার সঙ্গে আসুন।
দুজনে বেরিয়ে এলাম। রাজাবাহাদুর আমাকে নিয়ে এলেন হান্টিং বাংলোর পেছন দিকটাতে। ঠিক সেখানে যার চারশো ফুট নিচে টেরাইয়ের অন্যতম হিংস্র অরণ্য বিস্তীর্ণ হয়ে আছে।
এখানে আসতে আর একটা নতুন জিনিস চোখে পড়ল। দেখি কাঠের একটা রেলিং দেওয়া সাঁকোর মতো জিনিস সেই সীমাহীন শূন্যতার ওপরে প্রায় পনেরো-ষোল হাত প্রসারিত হয়ে আছে।
তার পাশে দুটো বড় বড় কাঠের চাকা, তাদের সঙ্গে হুক লাগানো দু-জোড়া মোটা কাছি জড়ানো। ব্যাপারটা কী ঠিক বুঝতে পারলাম না।
—আসুন। —রাজাবাহাদুর সেই ঝুলন্ত সাঁকোটার ওপরে গিয়ে দাঁড়ালেন। আমিও গেলাম তাঁর পেছনে পেছনে। একটা আশ্চর্য বন্দোবস্ত। ঠিক সাঁকোটার নিচেই পাহাড়ী নদীটার রেখা নুড়ী-মেশানো সঙ্কীর্ণ বালুতট আর দু-পাশে, তাছাড়া জঙ্গল জজ্ঞল। নিচে তাকাতে আমার মাথা ঘুরে উঠল। রাজাবাহাদুর বললেন, জানেন এসব কী?
—না।
—আমার মাছ ধরবার বন্দোবস্ত। এর কাজ খুব গোপনে—নানা হাঙ্গামা আছে। কিন্তু অব্যর্থ।
—ঠিক বুঝতে পারছি না।
—আজ রাত্রেই বুঝতে পারবেন। শিকার দেখাতে আপনাকে ডেকে এনেছি, নতুন একটা শিকার দেখাব। কিন্তু কোনোদিন এর কথা কারো কাছে প্রকাশ করতে পারবেন না।
কিছু না বুঝেই মাথা নাড়লাম—না।
—তাহলে আজ রাত অবধি থাকুন। কাল সকালেই আপনার গাড়ির ব্যবস্থা করব।–রাজাবাহাদুর আবার হান্টিং বাংলোর দিকে এগোলেন : কাল সকালের পরে এমনিতেই আপনার আর এখানে থাকা চলবে না।
একটা কাঠের সাঁকো, দুটো কপিকলের মতো জিনিস।
মাছ ধরবার ব্যবস্থা, কাউকে বলা যাবে না এবং কাল সকালেই চলে যেতে হবে। সবটা মিলিয়ে যেন রহস্যের খাসমহল একেবারে। আমার কেমন এলোমেলো লাগলে লাগল সমস্ত।
কিন্তু ভালো করে জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না, রাজাবাহাদুরকে বেশি প্রশ্ন করতে কেমন অস্বস্তি লাগে আমার। অনধিকার চর্চা মনে হয়।
বাংলোর সামনে তিন-চারটে ছোট ছোট নোংরা ছেলেমেয়ে খেলা করে বেড়াচ্ছে, হিন্দুস্থানী কীপারটার বেওয়ারিশ সম্পত্তি। কীপারটাকে সকালে রাজাবাহাদুর শহরে পাঠিয়েছেন। কিছু দরকারী জিনিসপত্র কিনে কাল সে ফিরবে। ভারী বিশ্বাসী আর অনুগত লোক।
গল্পের অষ্টম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।