টুকুর স্বপ্ন–২য় পর্ব

গল্পের শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

হঠাৎ টুকুর চিন্তার রেশ কেটে যায় একটা খিলখিল হাসির শব্দে। দেখে, তালগাছটা হাসছে তার মুখের দিকে তাকিয়ে_ ‘তোমার মনের সব কথা আমি জানি টুকু। তুমি আমাকে যেমন বন্ধু করে নিয়েছ, আমিও তেমনি তোমাকে করে নিয়েছি।’

তালগাছটার কথা শুনে টুকু এত খুশি হলো যে, আনন্দে হাসবে কি কাঁদবে, ভেবে পেল না। ছোট্ট করে শুধু বলল, ‘তোমাকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা, বন্ধু।’

‘তোমাকেও,’ প্রতিউত্তর করল তালগাছ।

তারপর দুজনই কিছুক্ষণ চুপচাপ। কিন্তু সেই নীরবতা ভাঙল তালগাছটাই। সে টুকুর চোখের ওপর চোখ রেখে বলল, ‘টুকু, তোমার না তালগাছ হওয়ার ইচ্ছে। হবে?’

‘হব,’ টুকুর চোখে-মুখে একরাশ হাসি, ‘আমি তালগাছ হব।’

‘তাহলে তুমি জাদুকর ক্যানানমেলের সঙ্গে গিয়ে দেখা কর।’

তালগাছ বলতে লাগল, ‘তিনি শহরের মধ্যেই থাকেন। একটু খুঁজলেই তাঁকে পেয়ে যাবে। সবাই তাঁকে চেনে। ছোটদের খুশি করার জন্য তার চেষ্টার শেষ নেই। তুমি তার কাছে এক্ষুনি চলে যাও, কেমন! বিদেশি হলেও মানুষ হিসেবে তিনি দারুণ ভালো। এত ভালো যে, বলে শেষ করা যায় না।’

তালগাছ বন্ধুর কথামতো টুকু তখন ছুটল শহরের দিকে এবং কিছুক্ষণ খোঁজ করার পর জাদুকর ক্যানানমেলের দেখা পেয়ে গেল।

জাদুকর ক্যানান টুকুর কথা শুনে এত খুশি হলেন যে, আনন্দে তিনি তাঁর একখানা হাত চেপে ধরলেন, ‘তুমি তাহলে তালগাছ হতে চাও, তাই না?’

‘হ্যাঁ, আমি তালগাছ হতে চাই।’

‘ঠিক আছে, তা-ই হবে।’ কথা শেষ করে জাদুর কাঠি হাতে নিয়ে জাদুকর ক্যানানমেল টুকুকে অনুসরণ করতে লাগলেন। হাঁটতে হাঁটতে একসময় তারা সেই তালগাছটার নিচে এসে দাঁড়াল।

‘এবার তোমার চোখ দুটো মোদো, হ্যাঁ, হ্যাঁ মুদে ফেল,’ জাদুকর ক্যানানমেল বললেন, ‘নির্ভয়ে মুদে ফেল।’

টুকু জাদুকরের কথায় চোখ দুটো মুদল এবং তার নির্দেশ পেয়ে যখন খুলল, তখন দেখল সত্যি সত্যি সে একটা তালগাছ হয়ে গেছে।

‘সত্যি, পৃথিবীতে এখন আমার চেয়ে সুখী আর কেউ নেই। আকাশটা এখন আমার কত কাছে! ইচ্ছেমতো এখন আমি তার সঙ্গে কথা বলতে পারব। আমার স্বপ্ন আজ সফল হলো। তোমাকে অনেক, অনেক ধন্যবাদ, জাদুকর।’

জাদুকর ক্যানানমেল একটু পরে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে টুকুকে বলে গেলেন, ‘তোমার কোনো অসুবিধা হলে আমাকে মনে করো। আমি সঙ্গে সঙ্গে চলে আসব।’

কথা শেষ করে চলে যেতেই টুকু তার তালগাছ বন্ধুকে বলল, ‘সত্যি, এখন যে আমার কত ভালো লাগছে, তা বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই। চল, আমরা আকাশের বন্দনা করে গান গাই।’

‘বেশ, তা-ই হোক,’ সায় দিয়ে বলল তালগাছ বন্ধু।

আকাশের বন্দনা করা গান শেষে টুকু আকাশের সঙ্গে অনেক অনেক কথা বলল। এত কথা যে, তার যেন শেষ নেই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই আকাশ বলল, ‘আজ থাক টুকু, আগামীকাল আবার অনেক কথা হবে, কেমন?’

‘ঠিক আছে,’ বলল টুকু।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আসতেই টুকুর গাটা ছমছম করতে লাগল। কেমন যেন একটা ভয় দানা বাঁধতে লাগল তার মনে। চোখ দুটো বন্ধ করে তালগাছ বন্ধুকে বলল, ‘একটা কথা শুনবে?’

‘বল,’ তালগাছ বলল, ‘মন খুলে বল।’

‘কি ভয়ঙ্কর রাত, দেখেছ!’

‘দেখেছি।’

‘তোমার কি ভয় করছে না?’ টুকু প্রশ্ন করল।

‘না। তোমার?’

গল্পের শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!