গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
এই যে এই দক্ষিণের জানালা, এর পাশে রোজ বিকালে স্কুল ছুটির পর টুকু এসে চুপচাপ বসে। বসে চোখ মেলে দেয় সেই উঁচু তালগাছটার মাথা সোজা। জানালার কাছ থেকে যার দূরত্ব মাত্র শ’ হাতেক।
তালগাছটা ওকে যেন জাদু করেছে। ওটাকে নিয়ে টুকুর অনেক ভাবনা। স্কুলে গিয়ে ক্লাসে আর মন টেকে না। কখন ছুটি হবে, কেবল সে অপেক্ষায় থাকে। বিকালে সবাই মাঠে খেলতে যায়, কিন্তু টুকু সোজা এ জানালার ধারে এসে বসে। বসে ভেবে চলে রাজ্যের সব কথা।
আমার মনে হয় তালগাছটার মতো সুখী পৃথিবীতে আর কেউ নেই। আকাশের সঙ্গে ওর কত মিতালি! আমি ওর মতো উঁচু হলে আকাশটা আমারও বন্ধু হতো। অনেক অনেক কথা বলতাম ওর সঙ্গে। আমি কি কোনো দিন ওর মতো হতে পারব না?
ভাবতে ভাবতে টুকু কেমন যেন হয়ে যায়। দিন যতই গড়িয়ে যেতে থাকে, ততই তালগাছটাকে নিয়ে ওর ভাবনা বেড়ে চলে।
বিকাল হলে খেলার সাথীরা তার সামনে এসে দাঁড়ায়। ডাকে, ‘টুকু, টুকু…’
ও জবাব দেয় না।
‘টুকু, চল খেলতে যাবিনে?’
‘তোরা যা, আমি যাব না,’ টুকু জবাব দেয় ছোট্ট করে।
খেলার সাথীরা চলে যায়।
মা এসে বলেন, ‘হ্যাঁ রে টুকু, তোর আজকাল কী হয়েছে, বল তো? জানালা দিয়ে চোখ গলিয়ে কী দেখিস এত?’
টুকু মার দিকে না তাকিয়েই ছোট্ট করে জবাব দেয়, ‘না, কিচ্ছু না। এমনিই চেয়ে থাকি। আমার জন্য তোমরা ভেবো না তো, মা।’
মা চলে যান পাশের ঘরে।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামতে থাকে। সন্ধ্যার আধারে একসময় তালগাছটা অদৃশ্য হয়ে যায়। আর টুকু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছোট ছোট পা ফেলে পড়ার টেবিলে এসে বসে।
কিন্তু পড়ার টেবিলে বসেও টুকু তালগাছটার কথা মনে থেকে মুছে ফেলতে পারে না। ভেবে চলে, ‘আমাকে তালগাছ হতে হবে। আমি আকাশের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলতে চাই।
আকাশের সঙ্গে তালগাছের যেমন ভাব, পৃথিবীর আর কারও সঙ্গে তেমনটি নেই। এমন কেউ কি আছে যে, আমাকে তালগাছ হওয়ার পথ বলে দিতে পারে? আমি তালগাছ হব।
আমি তালগাছ হতে চাই।’
ভাবতে ভাবতে টুকু এক সময় টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
সেদিন স্কুল ছুটির পর টুকু একা হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়ায় সেই তালগাছটার নিচে। ওর মনজুড়ে এখন একরাশ আনন্দ। মা বলেছিলেন, তালগাছে মামদো ভূতের বাসা থাকে; কিন্তু এখন, এ মুহূর্তে তার মনে মোটেও সে ভয় নেই।
সে কথাটা মনে রেখেই টুকু তাকিয়ে ছিল তালগাছটার মাথা সোজা। এই প্রথম আজও তার দূর থেকে দেখা বন্ধুর একেবারে গা-ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে।
‘আমার সঙ্গে কোনো কথা বলবে না, তালগাছ বন্ধু? তোমার কথা ভেবে ভেবে আমি কত রাত ঘুমাইনি।’ টুকু ভেবে চলল, ‘তোমার কাছ থেকে আমি আকাশের কথা শুনতে চাই। তুমি আমাকে তার কথা শোনাবে না, বন্ধু?’
গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।