টুকুর স্বপ্ন–শেষ পর্ব

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

‘আমার, আমার না ভীষণ ভয় করছে।’

টুকুর কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল তালগাছ। টুকু ওর হাসিতে লজ্জা পেল, কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারল না। সারা রাত ভয়ে ভয়ে কাটল। ঘুম হলো না এতটুকু। কেবল মায়ের কথা, ছোট ভাই-বোন, খেলার সাথীদের কথা মনে হলো, আর মনে মনে তীরবেঁধা পাখির মতো ছটফট করত লাগল। ভোর হতেই টুকু হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।

সূর্যটা যখন মাঝ আকাশে এসে দাঁড়াল এবং কড়া দৃষ্টিতে চোখ লাল করে টুকুর দিকে তাকাল, তখন ও ভীষণ সমস্যায় পড়ে গেল। মোটেই সহ্য হচ্ছিল না ওর দুপুরের এ কড়া রোদ। মাথা আর গা জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছিল। কান্নায় ভিজে এলো ওর গলা।

‘দুপুরের এ কড়া রোদ তোমার কেমন লাগছে বন্ধু,’ টুকু তালগাছের মুখের দিকে তাকাল।

‘খুব ভালো লাগছে। তোমার?’ প্রশ্ন করল তালগাছ।

‘আমার মাথা আর গা জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে।’

‘জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে!’ বিস্ময় প্রকাশ করল তালগাছ।

‘হ্যাঁ, আমি আর সইতে পারছি না। এবার আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই।’

‘বাড়ি ফিরে যেতে চাও?’

‘হ্যাঁ, রাতে আমার ভীষণ ভয় করেছে, আর দুপুরের এ রোদটাও আমি আর সইতে পারছি না মোটেও। আমি আমার আগের অবস্থা ফিরে পেতে চাই, বন্ধু।’

‘ঠিক আছে, তোমাকে তো আর জোর করে ধরে রাখা যাবে না,’ তালগাছ বলল, ‘জাদুকর ক্যানানমেলকে স্মরণ কর, সে নিশ্চয়ই তোমাকে ভুলে যায়নি।’

টুকু তালগাছ বন্ধুর কথায় চোখ দুটো বন্ধ করল এবং জাদুকর ক্যানানমেলকে স্মরণ করতে লাগল। একটু সময় পর চোখ খুলতেই দেখতে পেল সে আর তালগাছটি নেই, সেই আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং তার সামনে জাদুর কাঠি হাতে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন জাদুকর ক্যানানমেল।

‘তোমার বুঝি খুব অসুবিধে হচ্ছিল,’ ক্যানানমেল হেসে তাকাল টুকুর মুখের দিকে, ‘তোমাকে তালগাছ বানিয়ে দিয়ে আমি ভীষণ চিন্তায় ছিলাম। এখন তো তোমার কোনো অসুবিধা নেই?’

‘না,’ টুকু মাথা নুইয়ে জবাব দিল। ‘তবে আর দুদ- আমি ও অবস্থায় থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। আপনাকে কষ্ট দিলাম বলে আমি ভীষণ দুঃখিত। আশা করি ক্ষমা পাব।’

‘না, না ওতে কী হয়েছে,’ জাদুকর বলল, ‘আমি এতটুকু কষ্ট পাইনি। তোমাদের ইচ্ছেই তো আমার ইচ্ছে। আচ্ছা, এবার আমি চলি তাহলে।’

বিদায় নিয়ে চলে গেল জাদুকর ক্যানানমেল।

সে চলে যেতেই তালগাছ-বন্ধুর কাছে এগিয়ে এসে টুকু বলল, ‘এবার তাহলে আসি, বন্ধু।’

‘এসো,’ তালগাছ বন্ধুর ঠোঁটজোড়া কাঁপতে লাগল। ‘আবার এসো।’

‘আসব,’ টুকু উত্তর করল, ‘রোজ স্কুল ছুটির পর তোমার কাছে আসব। এসে আকাশ আর তোমার খবরাখবর নিয়ে যাব। এখন যাই, কেমন।’

‘আচ্ছা, এসো,’ তালগাছ বলল, ‘বিদায় বন্ধু, বিদায়।’

টুকু তালগাছ বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথ ধরে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াতে লাগল। একদিন, একরাত সে বাড়ি ফেরেনি। বাড়িতে সবাই তার জন্য কান্নাকাটি করছে হয়তো। মা কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছেন নিশ্চয়ই। বাবা হয়তো লোকজন নিয়ে তাকে খুঁজতে বেরিয়েছেন।

এসব ভাবতে ভাবতে পা চালায় টুকু। জোরে জোরে পা চালায়। আরও জোরে জোরে পা চালায়।

গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

দুঃখিত!