টাট্টু ঘোড়া আয়েগা

টাট্টু ঘোড়া আয়েগা
হোন্ডাওলা আয়েগা
ফুল প্যান্টালা আয়েগা
হাফপ্যান্টালা আয়েগা

ঘোড়াটা ছুটছে। অশ্বমেধ যজ্ঞ। বছরকাল ফুরালেই অপেক্ষায় মৃত্যু – বিত্তের জন্য, শৌর্যের জন্য, বীর্যের জন্য হতে হবে বলি। তারপরও কী মধুর স্বাধীনতা! সময়ের দড়ি দিয়ে কষে বাঁধা পবিত্র স্বাধীনতা।

অন্তত আর মেপে মেপে পা ফেলা নয়। দুর্বিনীত খুড়ের ধাক্কায় ধুলা ছিটানো চলে। পথটা কি এতটা চওড়া ছিল?

বোররাকের মত দুটো সফেদ ডানা গজালো নাকি? সাত আসমান ফুড়ে ঐ স্রষ্টারও মুখোমুখি হওয়া কি সম্ভব এই স্বাধীনতার জোরে? ঐ অপূর্ব ফোয়ারা বেহেশতী বলেই মনে হচ্ছে।

প্রচন্ড ধাক্কায় নোয়াতে বাধ্য হয় গর্বিত গ্রীবা। ফোয়ারার চাতালে ছিটকে পড়ে রক্ত। শহরের রাস্তায় এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না বলে ব্যপক লোক জমায়েত হয়। এদিকে ফোয়ারার পানিতে নিজের প্রতিকৃতি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে একটি পঙ্খীরাজ।

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় ঘোড়ার মৃত্যু – শিরোনাম পড়ে চমকে ওঠেন আলুবাজারের আমিন মহাজন। টমটম গাড়ির খানদানী ব্যবসা তার। তার দাদার দাদার ছিল একশো ঘোড়া। আজকালকার বাসস্ট্যান্ডের মত চকবাজারে ঘোড়া রাখার আলাদা জায়গা ছিল। আমিন মহাজনের ঘোড়ার সংখ্যা সাত। কেমিক্যালের ব্যবসা থেকেই আসল কামাই হয়। মরা বাপের সঙ্গে টমটমের ব্যবসাটাও কবরে ফেলে এসেছেন । ঘোড়াগুলো ভুতের মত পুরান ঢাকার রাস্তায় অনাকাঙ্খিত ঘুরে বেড়ায়। বান্ধা কিছু লোক আছে তারাই গাড়িও চালায়, ঘোড়াগুলাকেও দেখে। কিন্তু তাজ … মহাজন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

পাঁচ বছর আগে যখন তাজ জন্মালো তখন তার ছোট ছেলেটার বয়স দশ। নামটাও তারই দেয়া – সুলতানের ঘোড়া তাজ। পুরানা দালান ভেঙ্গে পাঁচতলা বিল্ডিং বানিয়েছেন। নিচে কেমিক্যালের গুদাম। দোতলায় আটজনের পরিবার নিয়ে নিজে থাকেন। বাকিটায় ভাড়াটের আবাস। তাজের জন্য জায়গা কই? সুলতানকে একটা সাইকেল কিনে দিতে হলো।

টেম্পু, বাস, রিকশা, সিএনজিঞ্চর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টমটমের সওয়ারি জুটানো মুশকিল আর তার চেয়েও মুশকিল ঘোড়াগুলোর খোরাক জুটানো। মানুষ বাঁচলে তারপরই না ঘোড়া। চামড়ার রোগ আর কয়খানা হাড় নিয়ে তারপরও টিকে আছে এরা ইতিহাসের মত।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পেছনের রাস্তায় গাদাগাদি করে বাঁধা থাকে ঘোড়াগুলো। গোলাপশা মাজার টু সদরঘাট – প্রতিদিনের ট্রিপ। জনপ্রতি ভাড়া দশটাকা। সুলতানের ঘোড়া তাজ।

আমিন মহাজন হাঁক দিয়ে ওঠেন –
অই মামুইন্যা, তাজের খোঁজ পাইছি।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!