টর্চ–তারাপদ রায়

আমাদের টর্চটির প্রসঙ্গে আসছি। প্রসঙ্গত ওই টর্চটি আমরা বাড়ির কয়েকজন ছাড়া আর কেউ জ্বালাতে পারে না, সুতরাং কারও ওটা চুরি করে লাভ হবে না। টর্চটি জ্বালানোর আগে সেটার পিছনে এক সেকেন্ড ব্যবধানে পরপর তিনবার আলতো করে এবং তারপরে অতর্কিতে একবার একটু জোরে চড় দিতে হবে।

এই শেষ চড়টা খুব জোরে হলে চলবে না, আবার খুব আস্তে হলেও চলবে না।

চড় মারার সময় খুব সুক্ষ্মভাবে কান পেতে থাকতে হয়, টেলিফোনের লাইন কেটে যাওয়ার মতো একটা মৃদু কট করে শব্দ হওয়া মাত্র টর্চটাকে হাতের মধ্যে বোঁ বোঁ করে ঘোরাতে হবে এবং ভাগ্যপ্রসন্ন থাকলে ওই ঘুরতে ঘুরতে আলো জ্বলে উঠবে।

আলো জ্বলে উঠলেই যে সমস্যার সমাধান হল তা নয়।

কোনও এক অজ্ঞাত কারণে টর্চের মুখটা নীচের দিকে করলেই আলো নিভে যায়, ফলে গুলিখোরের মতো এটাকে স্বর্গপানে ধরে রাখতে হয়।

অন্ধকারের মধ্যে চলাফেরার জন্য পনেরো থেকে বিশ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁইয়ে বা ডাইনে কাত করা যেতে পারে, কিন্তু খুব সাবধান, কারণ নিবেও যেতে পারে।

 

তবে নিবে গেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, কারণ অনেক সময় একা একাই স্বেচ্ছায় জ্বলে ওঠে। শুধু তাই নয়, বহু সময়েই সে কমে-বাড়ে নিজের খুশীমতো; এই নিবু নিবু হয়ে এসেছে হঠাৎ দপ করে জ্বলে উঠল, আবার ধীরে ধীরে কমতে লাগল, এ রকম হামেশাই হয়।

আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে এসে টেবিল বা তাকের পাশে টর্চটি পড়ে থাকতে দেখে কেউ দয়া করে হাত দেবেন না।

পিছনে স্প্রিংটা আজ কিছুদিন হল বিপজ্জনকভাবে শক্তিশালী হয়ে পড়েছে।

হঠাৎ হঠাৎ পিছন দিক দিয়ে স্প্রিংটা ছিটকে বেরিয়ে আসে, তার পিছে পিছে বিদ্যুৎবেগে ছুটে আসে দুটি বড় ব্যাটারি, বুকে লাগলে দিশি পাইপগানের গুলির চেয়ে সে কম মারাত্মক নয়।”

[রম্যরচনা ৩৬৫ – তারাপদ রায়]

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!