ঝুমা কাজল ও মিনির গল্প — তানজিল রিমন

সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে, একটানা। দ্বিতীয় শ্রেণীর শেষ ক্লাসের ঘণ্টা পড়েছে আরও আধঘণ্টা আগে। বৃষ্টি হওয়ায় বাসায় যেতে পারছে না ঝুমা। স্কুলের বারান্দায় একপাশে বসে আছে, বৃষ্টি দেখছে। অনেক দিন পর আজ বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু আম্মু বকা দিবে বলে ইচ্ছেটা পূরণ হচ্ছে না। এর কয়েকদিন আগে একবার বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় গিয়েছিল, অনেক বকা দিয়েছিল। বইগুলো ভিজে গিয়েছিল বলে বকার পরিমাণটা বেশি ছিল। আজও তো সাথে বই আছে। বই রেখে তো আর বাসায় যাওয়া যাবে না। তাই বৃষ্টি দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ঝুমাকে। মাঝে মাঝে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরছে। ক্লাসের সবাই চলে গেছে। বন্ধুদের কেউ কেউ ভিজেই গেছে। কারো আববু এসেছে। কারো আম্মু। কারো বা ভাইয়া। ঝুমা একা একা বসে আছে। ‘আম্মুটাও যে কেমন? কখন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। আসার কোনো নাম নেই।’ মনে মনে রাগ করে আম্মুর উপর। ঝুমা ভাবতে থাকে- একটা ভাইয়া বা আপু থাকলে কত মজা হত। ঠিকই আমাকে নিয়ে যেত। নিশ্চয়ই আম্মু বাসায় ঘুমাচ্ছে। ঠিকই আমার স্কুলের কথা মনে নেই। তাছাড়া প্রতিদিন তো আর বৃষ্টি হয় না। একা একাই বাসায় যাই। আববু তো অফিসেই।
ঝুমা- হঠাৎ কারো ডাকে পেছন ফিরে ঝুমা। ওদের বাংলা ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছে।
জ্বি ম্যা’ম- ঝুমা উঠে দাঁড়ায়।
বাসায় যাওনি কেন এখনও? আজ বুঝি আম্মু আসেনি? ম্যাডাম জানতে চাইলেন।
-না। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে আগেই। -ঝুমা আস্তে করে জবাব দেয়। চলো, আমরা একসাথে যাই।
-ম্যাডাম এগিয়ে আসেন ঝুমার দিকে। বাংলা ম্যাডামের বাসা ঝুমাদের বাসার কাছেই। ঝুমা খুশিতে বারান্দা থেকে নেমে পড়ে। ম্যাডাম ওকে ডান হাতে কাছে টেনে নেন। তারপর হাঁটতে থাকেন। রাস্তায় কোনো রিকশা দেখা যাচ্ছে না। ঝুমা বেশ মজা পাচ্ছে। বৃষ্টির ছিটেফোটা ওর শরীরটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে আস্তে আস্তে। পায়ের দিকটা তো ভিজেই গেছে।
বলো তো, বর্ষা ঋতু কোন দুটি বাংলা মাসে হয়? -ম্যাডাম জানতে চান।
ঝুমা হিসেব করে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ তো গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মকালের পরেই তো বর্ষাকাল। সে উত্তর দেয়- আষাঢ় ও শ্রাবণ।
এরপর ম্যাডাম বৃষ্টি নিয়ে একটা গল্প বলল। অনেক মজার। এরই মধ্যে ঝুমাদের বাসার সামনে এসে গেছে ওরা।
ম্যা’ম বাসায় আসেন। -ঝুমা অনুরোধ করল।
আরেকদিন আসব। আজ আমার একটা কাজ আছে। -ম্যাডাম ঝুমার কাছে বিদায় নিলেন। ঝুমা দৌড়ে বাসার ভেতরে ঢুকে পড়ল। ঘরে ঢুকে দেখে আম্মু ঘুমাচ্ছে। ঝুমা বই রেখে স্কুল ড্রেস পরিবর্তন করে আম্মুর পাশে গিয়ে বসল।
তুমি আমাকে আনতে গেলে না কেন? কতক্ষণ একা একা বসেছিলাম। -সে অভিযোগ করে ঘুমন্ত আম্মুর কাছেই। গায়ে হাত দিতেই ঝুমা চমকে উঠে। একি! এত গরম কেন আম্মু শরীর। আম্মুর কপালে হাত রাখে সে। নিশ্চয়ই জ্বর এসেছে। এজন্যই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশ থেকে কাঁথাটা টেনে আম্মুর গায়ে জড়িয়ে দেয়।
পড়ার টেবিলে বসে আছে সে। বাইরে তাকিয়ে আছে। এখন বৃষ্টিটা কমেছে। সকালের মতো এত বৃষ্টি নেই। হঠাৎ ওর দৃষ্টি যায় রান্না ঘরের সামনে। একপাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে একটা বিড়ালের ছানা। বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টি থেমে গেলেও বিড়ালের ছানাটি নড়ছে না। কতক্ষণ ভিজেছে কে জানে। ঝুমা উঠে বাইরে যায়। এরপর বিড়ালের ছানাটিকে ধরে ফেলে। নিয়ে আসে তার খেলার ঘরে।
কী রে, তোর আম্মু কোথায়? তোর আম্মুরও বুঝি জ্বর এসেছে যে, তোর খবর নিতে পারছে না। -নিজের অজান্তেই কথা বলছে বিড়ালটির সাথে। ঝুমা ওর একটা পুরনো জামা দিয়ে বিড়াল ছানাটির শরীর মুছে দেয়। এরপর আরো কিছু কাপড় দিয়ে একটা বিছানা করে তার উপর বসিয়ে দেয়। কিন্তু ছানাটি বসতেই চায় না। উঠে এসে ঝুমার গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে। সে অবাক হচ্ছে ছানাটির কান্ড দেখে। একটু আদরেই ছানাটি তাকে আপন করে নিয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই মিউ মিউ করে ডাকতে লাগল। ডাকছে তো ডাকছেই। ঝুমার মনে হলো, ছানাটি যেন তাকেই ডাকছে। মনে হয় খিদে পেয়েছে। না হলে এভাবে কেউ ডাকে। সে ছানাটিকে বিছানায় বসিয়ে গায়ে একটা কাপড় দিয়ে চলে গেল। রান্নাঘরে গিয়ে সে একটু দুধ নিয়ে এল ছানাটির জন্য। কিন্তু বিড়াল ছানাটি কোথায়? মিউ মিউ শব্দে ঝুমা পেছনে তাকাল। ছানাটি তার পেছনেই রয়েছে। ‘তবে কী সে আমার পিছু পিছু গিয়েছিল।’ -মনে মনে ভাবে ঝুমা।
নে, খা। -বলতেই ছানাটি এসে দুধের বাটিতে মুখ লাগাল। নিমেষেই সাবাড় করে ফেলল দুধটুকু। এরপর দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে বসল। তাকিয়ে আছে ঝুমার দিকে। যেন খুব খুশি হয়েছে। চোখ জুড়ে তার রেশ। ভেজা শরীরটাও বেশ শুকিয়ে গেছে। অনেক নাদুস নুদুস লাগছে ছানাটিকে।
আচ্ছা তোর নাম কী? -ঝুমা ছানাটির কাছে জানতে চায়।
মিউ মিউ করে ডেকে উঠে ছানাটি। বিড়াল ছানাটি তার সাথে কথা বলল এই ভেবে অবাক হয় সে। এমন সময় আম্মুর ডাক শুনতে পায় ঝুমা। ‘আসছি’ বলেই একটা দৌড় দেয়। তার মনটা এখন খুব ভালো।
কখন এসেছ মামনি? -ঘরে ঢুকতেই হাসি মুখে জানতে চায় আম্মু।
এই তো বেশিক্ষণ হয়নি। বৃষ্টি হচিছল। বাংলা ম্যাডামের সাথে এসেছি। -আম্মুকে জানায় ঝুমা।
বৃষ্টি এসেছিল নাকি? আমি তো কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বলতেই পারিনা। হাত মুখ ধুয়ে এসো। কিছু খেয়ে নেবে। -তাগাদা দেয় আম্মু।
তুমি শুয়ে থাকো আম্মু। আমি পরে খাব। এখন খিদে নেই। -বলেই খেলার ঘরে চলে আসে ঝুমা। তার একটা ছোট্ট খেলার ঘর রয়েছে। খেলাঘর বলতে একটা উত্তর-পূর্ব পাশে যে কক্ষ রয়েছে, তার সামনের বারান্দা। কয়েকটা ধানের বস্তা রাখা আছে। এর মাঝেই ঝুমার খেলাঘর। এখানে রয়েছে হাতে বানানো সুন্দর সুন্দর পুতুল। গতকাল এখানে পাশাপাশি বাড়ির দু’টি পুতুলের বিয়ে হয়েছে! পাশাপাশি বাড়ি বলতে খেলাঘরের এই প্রান্ত আর ওই প্রান্ত। কী মজাই না হয়েছিল বিয়েতে! কাজল, রুনা, টুম্পাও এসেছিল বিয়ে দেখতে। রুনা আর টুম্পা ওর খেলার সাথী। তবে ঝুমা ওদের থেকে দুই ক্লাস নিচে পড়ে। একসাথে খেললেও একসাথে স্কুল ছুটি শেষে আসতে পারে না। কারণ ওদের ক্লাস শেষ হওয়ার আগেই ঝুমার ক্লাস ছুটি হয়ে যায়। একসাথে আসতে হলে আরও দুই ক্লাস সময় বসে থাকতে হয় ঝুমাকে। আর কাজল রুমার ছোট ভাই। এখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি। সারাদিন ঝুমার সাথেই ঘ্যানঘ্যান করে। ঝুমাও বেশ মজা পায় কাজলের সাথে খেলতে। পাশাপাশি বাড়ি ওদের। কাজলের একটা বিষয় ঝুমার খুব ভালো লাগে। হাসিও পায়। একটু পরপর এসে কাজল বলে- ঝুমাপু, আমাকে ডাকছ ক্যান? অথচ কাজলকে ও ডাকেনি। কাজলের খেয়ে-দেয়ে কোনো কাজ নেই তো, তাই।
খেলাঘরে এসে আর বিড়াল ছানাটিকে দেখতে পায় না ঝুমা। মনে মনে ভাবে- হয়তো আশেপাশেই আছে। এখনই চলে আসবে। কিন্তু কই যে গেল? আর আসে না। ঝুমা মিউ মিউ করে অনেকক্ষণ ডাকল। কিন্তু ছানাটির কোনো খবরই নেই। ডাকতে গিয়ে অবশ্য একটু বিপদেই পড়ল। ছানাটির আসলে একটা নাম দেওয়া দরকার। অনেক ভেবে ‘মিনি’ নামটা সে মনে মনে ঠিক করে। অনেক খুঁজেও না পেয়ে তার খাওয়ার কথা মনে হলো। এতক্ষণে ওর খিদে পেয়েছে!
সারা বিকেল কিংবা সন্ধ্যা আর দেখল না বিড়াল ছানাটিকে। কাজলের সাথে খেলল। আশপাশের পিচ্চিগুলো ঝুমা ও কাজলের থেকে একটু বেশি বড়। তাই এই দুজনকে ওরা খেলতে নিতে চায় না। নিলেও ‘দুধভাত’ বলে নেওয়ায় ওরাও আর খেলে না। দুজনেই খেলে।
রাতে ঘুমানোর সময় বিড়াল ছানাটির কথা ভাবল ঝুমা- ‘নিশ্চয়ই আমার কথা ভুলে গেছে। আর আসবে না।’ ঝুমার ঘুম ভাঙল অনেক ভোরে। কেবল আজান দিয়েছে। একটু নড়তেই তার পায়ে নরম কিছুর ছোঁয়া লাগল। একদম তুলার মতো। বাতি জ্বালাতেই অবাক। বিড়াল ছানাটি শুয়ে আছে! ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বাতি জ্বালানোয় হয়তো ঘুম ভেঙে গেছে। ঝুমা আবার বাতি নিভিয়ে দেয়। মিনি তাহলে তাকে ভুলে নি। মিনির কথা ভাবতে ভাবতেই পাখির ডাক ভেসে আসে। আম্মু-আববুর গলার আওয়াজ পাওয়া যায়। ততক্ষণে বাইরে একটু একটু ফরসা হয়ে গেছে।
ইদানিং মিনির সাথে ঝুমার খুব ভাব হয়ে গেছে। সাথে কাজলও রয়েছে। স্কুল থেকে আসলেই মিনি দৌড়ে আসে তার কাছে। ঝুমারও অনেক ভালো লাগে মিনিকে। একসাথে খেলে। মিনিটা বল খেলা শিখে গেছে! মিনি বলে ডাক দিলে দৌড়ে আসে। ওর নাম যে মিনি, এটা আরও আগেই জেনে গেছে বিড়াল ছানাটা। ঝুমা মিনিকে কোলে নিয়ে আদর করে। তবে আববু-আম্মুর সামনে নয়, আড়ালে। তারা দেখলে বকা দিবেন। কাজলও মিনিটাকে অনেক ভালোবাসে। সারাদিন এসে মিনিটাকে কোলে নিয়ে বসে থাকে। ঝুমা স্কুলে থাকার সময়ও সে দেখে রাখে মিনিকে। মিনিও কাজলকে আপন করে নিয়েছে ঝুমার মতোই।
এরই মধ্যে মিনিটা অনেক বড় হয়েছে। ঝুমার সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। পড়াশুনায় ব্যস্ত। মিনির খোঁজ খুব একটা নিতে পারে না। তবে যতক্ষণ বাসায় থাকে, মিনিই এসে বসে থাকে তার পাশে। কাজল এসে মিনিকে নিয়ে যায়। বলে- ‘এই ঝুমাপুর পরীক্ষা না, তুই ডিস্টার্ব করিস ক্যান? আয়, আমার কাছে আয়।’ যাওয়ার সময় বলে যাবে- ‘আপু তুমি ভালো করে পড়। মিনি আমার সাথে খেলবে।’ মিনি ওর কোল থেকে ঝুমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আজ হঠাৎ সে মিনির দেখা পায় না। প্রতিদিন দুপুরে পড়ার সময় মিনি ওর পাশে বসে থাকে। কিন্তু আজ আসেনি। কাজলও এসেছে কয়েকবার। সকালে একবার দেখেছে আর দেখেনি। কাজল সব জায়গায় খুঁজল। মিনি মিনি করে ডাকল জোরে। কিন্তু মিনি এলো না। ঝুমা চিন্তায় পড়ে যায়। কিছু হলো না তো আবার। তবে এই চিন্তায় মনোযোগ দিতে পারে না। কারণ পরীক্ষার আর বেশি দেরি নেই। ‘হয়তো কোথাও গেছে’ এই ভেবে পড়ায় মন দেয়। রাতে খেতে বসে মিনির ডাক শুনে ঝুমা। মনে মনে খুশি হয়। টেবিল থেকে মাছের কাঁটাগুলো নিচে ফেলে। সাথে মাছের একটু অংশও। মিনি খুশিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ঝুমার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। শেষ পরীক্ষার আগের দিন কাজল এলো।
ঝুমাআপু, চলো একটা মজার জিনিস।’ -চোখেমুখে তার খুশি উপচে পড়ছে। ঝুমার হাত ধরে সে নিয়ে গেল ঝুমাদের পুরনো ঘরটায়। সে ঘর থেকে মিউ মিউ একটানা শব্দ আসছে। উঁকি দিয়ে দেখে তো অবাক। তিনটা ছানা নিয়ে খেলছে মিনিটা! সে আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠে। মিনি দৌড়ে আসে ওদের কাছে। ছানা তিনটাও আসে। ছানাগুলো এত্ত পাজি। দৌড়ে এসে কাঁধে উঠে। আবার নামে। জামা কামড়ে টান দেয়। অনেক মজা এখন তার। এমন সময় ঝুমার আববু এসে হাজির। ভয় পেয়ে যায় ঝুমা। আববু যা রাগী। কিন্তু না, কিছু বললেন না। ঝুমা কাজলের কাছে মিনি ও ছানাগুলোকে রেখে উঠে গেল।
রাতে ঘুমানোর আগে আববু আর আম্মুর মাঝে কথা হচ্ছে। আববু কী যেন একটা বলছে মিনিকে নিয়ে। ঝুমা কান না দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল।
আজ ঝুমার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন সারাদিন শুধু খেলাধুলা। মিনি আর ছানাগুলোকে নিয়ে কাজলের সাথে শুধু খেলবে আর খেলবে। এই ভাবতে ভাবতে স্কুল থেকে ফিরল ঝুমা। কিন্তু বাসায় এসে আর মিনিকে দেখল না ঝুমা। ওর ছানাগুলোকেও না। গেল কোথায়? সারা বিকেল ও আর কাজল তন্নতন্ন করে খুঁজল। কোথাও পেল না। কোনো কিছুতে মন বসল না ঝুমার। কাজলেরও। সন্ধ্যার আগে আগে বাসার বাইরে থেকে এলো মিনি আর ওর তিন ছানা। ঝুমা ও কাজল বাসার পেছনে মন খারাপ করে বসে আছে। হঠাৎ মিনির গলার আওয়াজ পেয়ে দৌড়ে আসে উঠানে। মিনিকে কাছে পেয়ে ইচ্ছেমতো বকা দেয়। কাজল কোলে তুলে নেয় ছানাগুলোকে। মিনিও মিউমিউ করে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করল। অন্য দিনের মতো মিনির চোখে উচ্ছাস নেই। ছানাগুলোও কেমন ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। আম্মুকে দেখেই মিনি ও ছানাগুলো ঝুমার পায়ের কাছে লুকাল। আম্মুকেও অবাক লাগল আজ। ঝুমা কিছু বুঝতে পারছে না। আজ রাতেও আববুকে আম্মুর সাথে মিনির ব্যাপারে কী যেন বলতে শুনল।
পরদিন স্কুলে কাজল দৌড়ে এলো। সে হাঁপাচ্ছে।
কী রে কাজল, কী হয়েছে? -ঝুমা জানতে চাইল।
ঝুমাআপু, ফুপা কী করেছ জানো? মিনি ও ছানাগুলোকে দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছে একটা ব্যাগে ভরে। আমি দেখেছি, ব্যাগে ভরে একটা ট্রাকে তুলে দিবে। ট্রাকটা আমাদের বাসার সামনেই আছে। কালকে মিনি আর ছানাদের অনেক দূরে রেখে এসেছিল। আবার চলে এসেছে। তাই আজ ট্রাকে করে আরো দূরে পাঠাচ্ছে, যেন না আসতে পারে।
-হাঁপাতে হাঁপাতে বলল কাজল। কাজলের চোখে একটু একটু পানি দেখা যাচ্ছিল। তাই দেখে হয়তো ঝুমার চোখেও পানি চলে আসল। কিন্তু স্কুলে তো কান্না করা যাবে না। লজ্জার বিষয়। দুজনেই দৌড়াতে থাকে বাড়ির দিকে। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই তাদের সামনে দিয়ে একটা ট্রাক ছেড়ে গেল।
এইটাই, এইটাই। আমি দেখেছি ঝুমাআপু।
-ট্রাকটা দেখিয়ে বলল কাজল। এবার সে আর কান্না আটকে রাখতে পারল না। ট্রাকের পিছু পিছু একটু দৌড়াল। ততক্ষণে ট্রাকটি অনেক দূরে চলে গেছে। ঝুমা আর কাজল দাঁড়িয়ে আছে ট্রাকটির দিকে তাকিয়ে। ট্রাকের সাথে সাথে ওদের প্রিয় মিনি ও তুলতলে ছানাগুলো চলে যাচ্ছে অজানা কোথাও। ওদের গালে চোখের পানি গড়াগড়ি খাচ্ছে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!