জ্বীনের দেশে বন্ধু বেশে—- ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ

গাছের আগায় একদল আগুন তখনও খেলা করছিলো। এ গাছ থেকে ও গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছিলো। একটা আগুন লাফিয়ে পড়ছিলো আর একটা আগুনের উপর। ‘হা ডু ডু’ খেলার মতো কখনো বা একটি আগুন একসাথে অনেককে ছুঁয়ে দিতে ব্যস্ত; ভালো করে খেয়াল করলে ‘ছি বুড়ি ছাই’ খেলার মতো মনে হতো। ভূতুড়ে সন্ধ্যায় বাড়ির দেউড়িতে বসে এ দৃশ্য দেখে মজাই পাচ্ছিলো নাবিল। সে কিন্তু জানেনা এগুলো কিসের আগুন। এই প্রথম এ রকম দৃশ্য দেখলো সে। তাই মজাটাকে শেয়ার করার জন্যে নাশিতকে ডাকে-
ভাইয়া, ও ভাইয়া দেখে যাও কি মজার আগুন। কোন জবাব দেয়না নাশিত; পড়তে বসার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে সে।
আর তর সইলো না নাবিলের। ভাইয়াকে দেখানোর জন্যে এক দৌড়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। ভাইয়াকে সাথে নিয়ে আসে সারপ্রাইজ দেবার জন্যে। কিন্তু কই! কোন আগুনের পাত্তাই নেই। গাছগুলো শুধু একা একা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটা সময় বসে থেকেও কোন আগুন দেখতে পেল না সে। ভাইয়ার কাছে সে অনেকটা বোকাই বনে গেল। গল্পটা বলেও নিজেকে তৃপ্ত করতে পারলো না সে।
শ্যামপুর গ্রামেই নাবিলদের দাদুবাড়ি। বেশ ছায়াঢাকা গ্রামটি। প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা এ গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে কালাপানি নদী বয়ে গেছে। এখন নদীটি মরা খালের মতো মনে হলেও এক সময় বেশ স্রোত বইতো। কথিত আছে, এ নদীর একপাশে ঘোলা পানির শাদা স্রোত এবং অন্য পাশে স্বচ্ছ কালো পানির স্রোত বইতো বলে এটাকে কালাপানি নদী নামে ডাকা হতো। নদীর দু’ধারে নানা প্রজাতির গাছ। বিকেল বেলায় পাখির কিচির মিচির শব্দে ভীষণ মজা হলেও সন্ধ্যা নামলেই পরিবেশটা একেবারে ভৌতিক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ব্রিজের পাশের মরাঘাটিতে খুব ভয়। ওখানে হিন্দুদের চিতা; মরা পোড়ানো হয়। মরাঘাটি নিয়েও অনেক ভূত পেত্নির ভয়ংকর গল্প প্রচলিত আছে। তাই সন্ধ্যের আগেই বাড়ি ফেরে সবাই।
বাড়ির সামনে পুকুর, চারদিকে গাছ আর গাছ। আম জাম লিচু কাঁঠাল জলপাই পেয়ারা আরও কত গাছ, হিসেব করাই কঠিন। ওরা রাজশাহীতে থাকলেও গ্রীস্মের ছুটিতে দাদুবাড়ি যায় নিয়মিত। দাদা দাদী চাচ্চু সবাই খুব আদর করে ওদের। নাশিতটা একটু পড়া পাগল। গ্রামের বাড়ি এলেও পড়তে বসবে। বিদ্যুত না থাকলেও লেখা পড়া নিয়ে ধানাই পানাই শুরু করবে। নাবিলের এটা মোটেও ভালো লাগে না। আজও বিদ্যুৎ নেই। তবু ভাইয়া পড়তে বসার জন্যেই এ সর্বনাশটা হলো। নিজ চোখে দেখা আগুনের খেলাটা সে ভাইয়াকে দেখাতেই পারলো না। তাই খুব মন খারাপ ওর। দাদুকে সে কড়া নালিশ দেবে বলে ঠিক করে রেখেছে।
গভীর রাত। দাদু বাড়ি ফিরলেন বাংলাবাজার থেকে। বাংলাবাজার মানে গ্রামের চৌরাস্তার মোড়ে এ বাজারটি বসে। এখানে যেতে ঐ ভয়ংকর ব্রীজটি পার হতে হয় না। দাদুভাই বাড়িতে পৌঁছতেই নাবিলের নালিশ । দাদু মুচকি হাসেন। রেগে যায় নাবিল। দাদু তখন বললেন, আমরা ওটাকে ভূতের আগুন বলি। তবে তোমাদের বিজ্ঞান বলে ‘আলেয়া’।
-তুমি কি ভূত দেখেছ দাদু?
-হ্যাঁ, কতো ভূত দেখেছি আমরা; মরাঘাটিতে তো ভূতেরা সারা রাত খেলা করে। বুড়ো মানুষের মতো কাশি দেয়. শিশুদের মতো টোয়া টোয়া কান্না করে, কখনো বা মেয়ে মানুষের মতো খিলখিল করে হাসে; লালপেড়ে শাদা শাড়ি পরে আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তাছাড়া রাতের বেলা নদীতে মাছ ধরতে গেলে ভূতেরা নানা ঢঙে ভয় দেখায়।
গা ছমছম করে নাবিলের। নাশিত তো এমনিতেই ভৌতিক গল্প শুনতে পারে না। ওরও বুকে দুরুদুরু শুরু হয়েছে। হিসু দেবার নাম করে অন্য ঘরে পালিয়ে যায় সে। নাবিল কিন্তু গল্পের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় পুরোপুরি; ঠিক যেন স্বপ্নরাজ্য।
-হি হি হি, তোমার তো খুব সাহস রে নাবিল, ভূতের গল্প শুনছো; আমার সাথে যাবে?
-কোথায়?
-কোথায় মানে? আমাদের বাড়ি। খুব মজার জায়গা ওটা।
-না আমি ভূতের বাড়ি যাই না।
-কেন ভয় পাও নাকি?
-ভয় পাবো কেন? তুমি কি চোর না ডাকাত যে ভয় পাবো? নিজেকে সামনে নেয় নাবিল।
-না না চোর ডাকাত হবো কেন? আমি তো ভূত না জ্বীন। জ্বীনদের নাম শুননি?
-শুনিনি মানে কুরআনে সূরা জ্বীন আছে না? জ্বীনের কতো গল্প শুনেছি।
-জ্বীনদের কোন খারাপ গল্প শুনেছো? জ্বীনেরা কিন্তু খুব ভালো।
-উ.! ভূতের মুখে রাম নাম! ভালো মানুষী দেখানো হচ্ছে।
আমি রাসাল। গতকালই এসেছি তোমাদের পৃথিবীতে। ছুটি পেলে মাঝে মধ্যেই আসি, দুএক সপ্তাহ থেকে আবার চলে যাই। মানুষের পৃথিবীটা আমার খুব ভালো লাগে। অবশ্য আমাদের জগৎটাও কিন্তু খুব মজার। তবে তোমাদের মতোই ভালো মন্দ দুটোই আছে আমাদের ওখানে। তোমার কিন্তু খুব ভালো লাগবে। গল্পে গল্পে জ্বীনটা নাবিলকে তাদের বাড়ি যেতে রাজি করিয়ে ফেলে।
যে কথা সেই কাজ; নাবিলকে সাথে নিয়ে ভোঁ দৌড়। জ্বীনের পাখায় চড়ে উড়ে চলে সে। নদী পাহাড় সব কিছু আবছা আবছা মনে হয়। তারপর ঘন অন্ধাকারে ডুবে যায় তারা। কিছুই দেখতে পায়না নাবিল। বুকের মধ্যে ভীষণ দুরু দুরু। না জানি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। ভয় পেলেও বেশ একটু মজা আর কৌতুহলও অনুভব করছে। ডালিম কুমারের মতো জীনের পীঠে সওয়ার হওয়ার মজাই আলাদা।
হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চমকে ওঠে নাবিল। ওরে বাবা; সে কি আলো। চারিদিকে থৈ থৈ সোনালী আভা। সোনালী রঙের গাছ; পাখিরাও অদ্ভূত রকমের সুন্দর। নদীর মিটি মিটি স্রোতে মাছের লাফালাফি। ও মা, মাছগুলোও যে সোনার মতো। প্রথমে মনে করেছিলো একুরিয়ামে সাজিয়ে রাখা গোল্ডেন ফিস। কিন্তু সব মাছই যে সোনার মতো ঝকঝকে। কত রকমের মাছ, ছোট বড় মাঝারী নানা সাইজের। পানি আর কচুরী পানাগুলোও অদ্ভুত রকমের সুন্দর। মনে মনে বলে, ইস যদি নদীটাতে নেমে মাছগুলো ধরতে পারতাম!
হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় জীনটা। কান্ড দেখে সে অবাক। হাজার হাজার ছেলে মেয়ে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাকে স্বাগত জানানোর জন্যে। ছেলেমেয়েগুলো দেখতে খুব সুন্দর, ঠিক যেন দাদুর কাছে শোনা বেহেস্তের গেলমানদের মতো। সবার মুখে মায়াবী হাসি। মাটিতে পা রাখতেই তারা বলে উঠলো-
-উলু উলু গুলু গুলু, সাম্পান সাম্পা। কিন্তু কিছুই বুঝেনা সে। বন্ধু জীন রাসাল ব্যাপারটা বুঝে ফেলে। তাই তাকে বলে, ওরা বলছে, শুভেচ্ছা শুভেচ্ছা; স্বাগতম স্বাগতম। তোমার আগমনে আমরা আনন্দিত। তুমিও বলো- উ উলু, উ উলু; সাম্পা সাম্পা।
-উ উলু, উ উলু সাম্পা সাম্পা; হাসি মাখা মুখে উত্তর দেয় নাবিল। অমনি ফুল ছিটিয়ে মজার আবহ তৈরি করে ফেলে। কিন্তু একি; সেখানে ফুলের গন্ধের সাথে সাথে নানা রকম খাবারের ঘ্রাণও পাচ্ছে সে। ইলিশ ভাজার গন্ধটা খুব মজার মনে হচ্ছে তার কাছে। ভুনা খিচুড়ি ইলিশ ভাজা; ভীষণ মজার খাবার ওর। জীভে পানি এসে গেলো। কিন্তু চাইতে পারছেনা, লজ্জা বলে তো একটা কথা আছে তাই না? এটা তো আর দাদুবাড়ি না যে দাদীমাকে বললেই ওকে খাইয়ে দেবে।
কল্পনায় ভাসতেই পিছনে থেকে ডাক আসে। সুমধুর কণ্ঠ। নাবিল শব্দটা ছড়া আর কিছুই বুঝতে পারল না সে। ফিরে তাকাতেই দেখে সোনালী সবুজের কারুকাজ করা জামা আর ওড়নায় ঢাকা একজন নারী। বয়সটা ওর মার মতোই হবে, তবে দেখতে খুবই সুন্দর। হাসিটা ঠিক ওর মায়ের মতোই। হাতের ইশারায় ডাকছে ওকে। যেতে ইচ্ছে করলেও খানিকটা ইতস্তত বোধ করছে সে। অমনি রাসাল বলে ওঠে- যাও, উনি যাসা, তোমার বান্ধবী মা, মানে আমার বউ। খুব ভালো মেয়ে, তোমাকে অনেক আদর দেবে।
মৃদু পায়ে মা বান্ধবীর দিয়ে এগিয়ে যায় নাবিল। তিনিও এগিয়ে এসে বুকের ভেতর জড়িয়ে নেন; ঠিক যেন মায়ের আদরটাই অনুভব করে সে। মায়ের কথা মনে হলেও ওখানকার পরিবেশটা বেশ ভালোই লাগছে ওর।
যাসার সাথে ঘরে ঢুকেও বিস্ময়ে অবাক হয় নাবিল। এতো সুন্দর সাজানো গোছানো ঘর সে কোন দিনও দেখেনি। কতো রকমের জিনিস। শুধু বেনীআসহকলা নামের সাতটা রঙই নয়। আল্ল¬াহ হয়তো আরও সুন্দর কোন রঙের কারুকাজ শিখিয়েছেন ওদের। প্রত্যেকটা ফার্নিচারই অসাধারণ সুন্দর।
ডাইনিং টেবিলে তাকিয়ে দেখে হাজার রকমের খাবার। আপেল কমলা আর আঙ্গুর শুধু নয়, বরই পেয়ারাসহ সব ধরনের দেশি বিদেশি ফল সাজিয়ে রেখেছে টেবিলে। পাশে অবশ্য রান্না করা নানা রকমের খাবারও আছে। এমনকি ভূনা খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজাও; সব খাবার যেন ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। খুব লোভনীয় ব্যাপার। দাদুর কাছে সে বেহেস্তের গল্প শুনেছে। সেটা নাকি খুব মজার জায়গা। সবকিছুই খুব সুন্দর, যখন যা মন চাইবে তাই পাওয়া যাবে। তাহলে কি আমি বেহেস্তে চলে এলাম নাকি! না না বেহেস্ত হবে কেন, ওখানে যেতে হলে অনেক ভালো কাজ করতে হয়। অবশ্য আমি তো কোন খারাপ কাজ করি না; আববু আম্মুর কথা শুনি, নিয়মিত স্কুলে যাই, দাদু আর দাদীমার সাথে কতো মজা করি; চাচ্চুরাও তো আমাকে খুব ভালোবাসে তাই হয়তো আমাকে বেহেস্ত….
-গুনগুন করে কি বলছো নাবিল!
-না তেমন কিছু না।
-বেহেস্তের কথা ভাবছো? সেটা আরো অনেক সুন্দর; আমরাও সেখানে যাবার জন্যে ভাল কাজ করি। সেটা যে কতো মজার জায়গা বুঝানোই যাবে না।
-তোমরাও বেহেস্তে যেতে চাও?
-ওমা, তাহলে কি আমরা দোজখে যাবো? ওটা খুব কষ্টের জায়গাটা। কত রকমের যে আযাব!
-হয়েছে, এখন বেহেস্ত দোজখের গল্প রেখে খেয়ে নাও; বললো যাসা।
খেতে বসল রাসাল, যাসা আর নাবিল। যা রান্না করা হয়েছে সেগুলোও খুব সুস্বাদু কোরমা পোলাও, রোস্ট, কালিয়া কোপ্তা ইত্যাদি তো আছেই, সাথে আবার সাদাভাত ডাল মাছ সবজিও। দই মিষ্টিও হরেক রকমের। কত আর খাওয়া যায়? এরপর সাজানো ফলের বাহারে তো মজাই আলাদা। ইচ্ছেমতো খেয়ে নিল সবাই। নাবিল আর কয়টা খাবে। ওরা কিন্তু অনেক খেলো। ওদের খাওয়া দেখে হাসি পায় নাবিলের। মনে মনে ভাবে, ইস যদি ওদের মতো অতোগুলো খেতে পারতাম!
খাওয়া শেষ হতেই একদল ছেলেমেয়ে চলে এলো। নাবিলের সাথে খেলবে ওরা। সবাই খুব হাসি খুশি। দেখতেও খুব সুন্দর। পরীদের গল্প শুনেছে সে, মেয়েগুলো ঠিক যেন পরীর মতোই দেখতে। খেলার ফাঁকে সে গল্পে গল্পে জেনে যায় যে, মহিলা জীনকেই পরী নামে ডাকা হয়। সবকিছুতে খুব মজা পেলেও ভূতের ভয়টা কিন্তু ওর বুকের মধ্যে গুমরে ওঠে মাঝে মধ্যে। তাই সে বলেই ফেলল-
-আচ্ছা তোমরা কি ভূতকে চেনো?
-ভূত! সবাই একটু ভয় পেয়ে গেলো। এতে নাবিলের ভয়টাও আরো একটু বেড়ে গেলো। কারণ জ্বীনরাও ভূতকে ভয় পায়!
-না, ভূত বলে কিছু নেই, ওরা দুষ্টু জ্বীন। তবে ওরা খুব খারাপ। সবাইকে ভয় দেখায়। মানুষ পেলে তো কথাই নেই, হাড় মাংস চিবিয়ে খেয়ে নেয়। তবে তোমার কোন ভয় নেই। আমাদের এখানে তেমন কোন ভুত নেই। তাছাড়া চিংকুরা এখন পৃথিবীতে চলে গেছে। এখন আসবে না। তুমি কোন ভয় করো না। এখন অনেক রাত। আমরা চলি। কাল আবার দেখা হবে। খেলা শেষ করে চলে যায় ওরা।
ঘুমোনোর জন্য নাবিলকে সুন্দর একটি ঘরে নিয়ে গেল যাসা। সোনা রঙের পালঙ্ক। চারিদিকে থোকা থোকা ফুল সাজানো। মাঝে মাঝে নানা রঙের লতাপাতা ঝুলে আছে। ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ডিজাইনটা নতুন হলেও কিছুটা পরিচিত মনে হচ্ছে; খেয়াল করে দেখলে আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আদলে বানানো হয়েছে ওটা। ঘরে নানা ডিজাইনের ঝাড়বাতি। রঙের খেলায় মেতে উঠেছে সবগুলো। তাই ঘরটা কখনো আকাশের মতো নীল, কখনো গোধুলীর গোলাপী আভা আবার কখনো বা ভোরের শুভ্রতায় ভরে যাচ্ছে। পাখির কলতানের মতো হালকা মিউজিকের আবহ কানে আসছে। সব মিলে পরিবেশটা খুবই মোহনীয় হয়ে উঠেছে।
আদর করে শুইয়ে দিলো যাসা। পোষা বিড়ালের তুলতুলে চামড়ার মতো কম্বলটা টেনে দিলো হালকা করে। যাসা চলে গেলো। মজার আবহের মধ্যেও কেন যেন ভয় ভয় লাগছে নাবিলের। হালকা মিউজিকটা ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করেও আবার খুলে যায় আপনাতেই। ড্রেসিং টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই মনে হচ্ছে বাঘটার হা যেন বড় হচ্ছে আস্তে আস্তে, ঝুলে থাকা লতাগুলো নানা ধরনের সাপে রূপান্তরিত হচ্ছে, অজগর গোখরা কোবরা নানা প্রজাতির বিষধর সাপ। ভয়ে গা ছম ছম করছে নাবিলের।
হাঁউ মাঁউ খাঁউ মানুষের গন্ধ পাউ; মিউজিকের তালে তালে এমন শব্দ ভেসে আসছে। বাঘ আকৃতির ড্রেসিং টেবিলটার দাঁতগুলো আরো বড় হচ্ছে। লাল নীল রঙের বাতিগুলো নড়াচড়া শুরু করলো। গোলাপী আভাটা আস্তে আস্তে কালচে রঙ ধারণ করছে। লাইটগুলো মধ্য থেকে বড় বড় দাঁত বেরিয়ে আসতে শুরু করলো।
টি টেবিলে রাখা মিষ্টির হাড়িটা ভেঙ্গে গেল মড়াশ করে। অমনি বেড়িয়ে পড়লো ছোট ছোট অদ্ভুত মানুষ। কপালে একটা চোখ, বড় বড় দাঁত, মাথায় তোষা পাটের মতো বড় বড় শাদা চুলের ভেতর লম্বা শিং। কিঁউ কিঁউ চিঁউ চিঁউ করে অদ্ভূত রকমের শব্দ করতে করতে বড় হয়ে উঠছে তারা। খাট থেকে ওরা বেশ দূরেই ছিল। আস্তে আস্তে খাটের দিকেই এগিয়ে আসছে। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল সে। কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। চিংকুরা তো নেই। এরা আবার কারা?
-আমরাই চিংকু, তোমার কথা জেনেই পৃথিবী থেকে চলে এসেছি।
চিৎকার দিতে চায় সে। কিন্তু শব্দ আসছে না, এমনকি যাসাকে ডাকার ক্ষমতাটুকুও নেই। ঘরের দৃশ্য আরো ভয়ংকর হচ্ছে। সাপ, বাঘ আর ভূতগুলো একসাথে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। ভয় ভয় আর ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে নাবিল। অজগর সাপটা হা করে নাবিলের কাছাকাছি আসতেই জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে সে।
নাবিল এই নাবিল, কি হয়েছে? মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো নাবিলের। দেখলো মা তাকে জড়িয়ে তুলে নিয়েছে কোলে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!