জ্বিন ছাড়ানোর এক বিস্ময়কর ঘটনা
আবূ ইয়াসীনের বর্ণনাঃ
বনী সালম গোত্রের এক গ্রাম্য লোক একবার মসজিদে এসে হযরত হাসান বসরী (রহঃ) এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করায়, আমি জানতে চাইলাম, ‘ওঁর সাথে তোমার কী দরকার?’ সে বলল, আমি গ্রামে থাকি। আমার এক ভাই ছিল আমাদের গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বড় পালোয়ান। তাকে এমন এক মুসীবত ঘিরে ধরল যে, ছাড়ার আর নামই নিচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে বাধ্য হলাম। সেই সময় আমরা একবার পারস্পারিক কথাবার্তা বলছিলাম। হঠাৎ অদৃশ্য থেকে শুনতে পেলাম- ‘আস সালামু আলাইকুম।’ আমরা সালামের জবাব দিলাম। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। তখন (জ্বিন)-রা বলল, আমরা আপনাদের প্রতিবেশী। আপনাদের প্রতিবেশী হয়ে আমরা কোন অসুবিধা বোধ করিনি। কিন্তু আমাদের এক নির্বোধ আপনাদের এই সাথীর মোকাবেলা করে। আমরা ওকে ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু ও ছাড়তে অস্বীকার করে। আমরা সে কথা জানতে পেরে আপনাদের কাছে কারণ দর্শাতে এসেছি।
এরপর সেই জ্বিনরা তার ভাইকে (অর্থাৎ আমাকে) বলল, অমুক দিন আপনি আপনার গোষ্ঠীর লোকজনকে জড়ো করে আপনার ভাইকে রীতিমতো মজবুত ভাবে জড়িয়ে বাঁধবেন। যদি না পারেন তাহলে আর কখনও ওকে এবং ওর জ্বিনকে জব্দ করতে পারবেন না। তারপর ওকে একটা উটের পিঠে বসিয়ে অমুক ময়দানে নিয়ে যাবেন। এবং ঐ ময়দানের চারাগাছ নিয়ে বেটে ওর গায়ে প্রলেপ দিবেন। আর একটা বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখবেন যে, ওর বাঁধন যেন খুলে না যায়। খুলে গেলে কিন্তু ওকে আর কখনো আপনারা কাবু করতে পারবেন না।
আমি বললাম, আল্লাহ আপনাদের উপর রহম করুন। ঐ ময়দান ও চারাগাছ আমাকে কে চিনিয়ে দিবে?
ওরা বলল, যখন নির্দিষ্ট দিনটি আসবে, তখন আপনারা একটি আওয়াজ শুনতে পাবেন। এবং সে আওয়াজ অনুসরণ করে আপনারা এগিয়ে যাবেন।
সুতরাং সেই দিনটি আসতে আমি আমার ভাইকে একটি উটের পিঠে বসালাম। এমন সময় সামনে একটি শব্দ শুনতে পেলাম। ফলে সেই শব্দের পেছনে পেছনে চলতে শুরু করলাম। তারপর একসময় অদৃশ্য থেকে আমাকে বলা হল, এই ময়দানে নামো এবং এই গাছ তোলো। তার পর এই কর।
যা যা বলা হল, তাই করলাম। যখন সেই ওষুধ ভাইয়ের পেটে পড়ল, আমনি সে জ্বিনের হাত থেকে এবং আপন মুসীবত থেকে মুক্তি পেয়ে গেল। চোখ মেলে তাকাল। সেই সময় পথ-দেখানো জ্বিনটি বলল, এবার এর রাস্তা ছেড়ে দাও এবং এর শিকল খুলে দাও।
আমি বললাম, আমার ভয় লাগছে, ছাড়া পেলে যদি ও পালিয়ে যায়।
সে বলল, আল্লাহর কছম! ঐ জ্বিন কিয়ামত পর্যন্ত এর কাছে আর ঘেঁষবে না। বললাম, আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। আপনি আমার বিরাট বড় উপকার করেছেন। এখন একটা জিনিস বাকি আছে। সেটাও বলে দিন।
সেটা আবার কি?
যখন আপনি আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন, তখন আমি মানত করেছিলাম যে, আল্লাহ যদি আমার ভাইকে আরোগ্য করে দেয়, তবে আমি নাকে উটের লাগাম লাগিয়ে পায়ে হেটে হজ্জের সফর করব। (এ বিষয়ে আপনার রায় কী?)
এ বিষয়ে আমার কোন জ্ঞান নেই। তবে আমি আপনাকে বলছি, আপনি এখান থেকে বসরায় গিয়ে হযরত হাসান বসরীকে জিজ্ঞাসা করুন। উনি একজন পূণ্যবান মানুষ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্যঃ মূল কিতাবে ঘটনাটির বিবরণ না থাকার দরুন ‘ইবনে আবিদ দুনইয়া’র ‘আল হাওয়াতিফ’ গ্রন্থ থেকে পরবর্তী বিবরণটুকু উল্লেখ করা হলঃ গ্রাম্য লোকটির মুখে ওকথা শুনে হযরত হাসান বসরী বললেন – নাকে লাগাম দেওয়া তো শয়তানের কাজ। তুমি ওকাজ করো না। কসমের কাফফারা দিয়ে দিও। বাইতুল্লাহর দিকে পায়ে হেঁটে হজ্জ কর। এভাবে নিজের কাফফারা পূরণ কর।