জোলেখার প্রেম-পর্ব ৪

জোলেখার প্রেম-পর্ব ৩  -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

জোলেখা বৃদ্ধার কথায় আরো ব্যাকুল হলেন। সঙ্গে সঙ্গে সিন্দুকের চাবির তোড়াটা এনে তার হাতে দিয়ে বললেন, “নানী! টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা যা প্রয়োজন সিন্দুক থেকে খরচ করে আমার শেষ উপায় করে দাও।” বৃদ্ধা বলল প্রথমে একটি হপ্তখানা (সাত মহল) তৈরি করতে হবে। যেখানে থাকবে স্বর্ণ, রৌপ্য খচিত বিভিন্ন কারুকার্য। দেয়ালে ছাদে আটা থাকবে তোমার ও ইউসুফ (আঃ) এর যোন আবেদন নিবেদনের অসংখ্য ছবি। কামনা, বাসনা ও যৌন উন্মাদনার যত রকম  কলা-কৌশল আছে, উহার সকল প্রকার নমুনা ও ছবি খচিত থাকবে চতুর্দিকে। আরো কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় আছে, যা আমি অচিরে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এই বলে বৃদ্ধা হপ্তখানা (সাতমহল) তৈরির কাজে লোক লাগিয়ে দিল।

কিছুদিনের মধ্যে মহলের অভ্যন্তরে এক বিশাল হপ্তখানা তৈরি হয়ে গেল। যেটা ছিল স্বর্ণ, রৌপ্য খচিত বিভিন্ন কারুকার্যে পরিপূর্ণ। দেয়ালে, ছাদে, পর্দা ও বিছানায় জোলেখা ও ইউসুফ (আঃ) এর উলঙ্গ ছবি। ছবিগুলো সবই যৌন কার্যে উৎসাহ প্রদানকারী পদ্ধতিতে সজ্জিত। ছবিগুলো দেখলে মানুষের মনে সৃষ্টি হয় এক দুর্দমনীয় কামনা, লালসা। এছাড়া সুগন্ধি আত গোলাপের মনোমুদ্ধকর ঘ্রাণে পাগল করে দেয় দর্শকদের প্রাণ। বিভিন্ন টেবিলে সাজানো ছিল উপাদেয় খাদ্য সামগ্রী যা দেশের সর্বত্র শ্রেষ্ঠ তৃপ্তিকর বলে বিবেচিত হত।  এ হপ্তখানার সৌন্দর্য ও উহার উপভোগ এত উন্নত মানের ছিল যা তখনকার দিনে দেশ-বিদেশের কোথাও কেউ তৈরি করতে সক্ষম হয় নি।

হপ্তাখানা তৈরি হলে বৃদ্ধা এসে জোলেখাকে বলল, যাও, তোমার সাধের নাগরকে নিয়ে হপ্তখানার অভ্যন্তরে চলে যাও। আমার কাজ ছিল হপ্তখানা তৈরি করে দেওয়া। এখন উহার অভ্যন্তরে তোমার কাজ আরম্ভ কর। জোলেখা হপ্তখানার অভ্যন্তরে গিয়ে সবকিছু দেখে অত্যন্ত সুখী হলেন এবং মনে মনে ভাবলেন এবার তার অভিলাশ পূর্ণ হবার অনেকটা নিশ্চয়তা আছে।

এবার জোলেখা নিজে ভালো করে সাজ-সজ্জা করে নিলেন। নানা রকম সুগন্ধি লাগিয়ে ও প্রসাধনী মেখে অপরূপ সজ্জায় সজ্জিত হলেন। স্বর্ণ ও জরীর পাজামা সেলোয়ার, ওরনা পরিধান করে পরীকে হার মানালেন। একে তো তিনি মিশর সুন্দরী, অন্য দিকে সাজ-সজ্জায় আর কিছু বাকি রাখেননি। অতএব, তার রূপের আলোতে ম্লান করে দিল চন্দ্র সূর্যের উজ্জলতা। সে যে কত অপরূপ তা ভাষায় বর্ণনা সম্ভব নয়।

জোলেখা আয়নায় দেখে নিজেকে আরো নিখুঁত করে সাজিয়ে নিলেন। অতঃপর হপ্তখানায় ইউসুফ (আঃ) কে আসার জন্য খবর দিলেন। ইউসুফ (আঃ) মনিবের আদেশ শীরঃধার্য ভেবে সর্বদাই হুকুম মেনে চলতেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। তিনি খবর পেয়ে হপ্তখানায় ঢুকে পড়লেন। জোলেখা ইউসুফ (আঃ) কে স্বর্ণ খচিত একটি সিংহাসনে বসতে দিয়ে নিজে হপ্তখানায় সাতটি দরজায় সাতটি তালা লাগিয়ে দিলেন। এবার ইউসুফ (আঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁর গায়ের উপর এলিয়ে পড়লেন এবং সজোরে কান্না জুড়ে দিয়ে বললেন, “ইউসুফ তুমি আমাকে আর কত জ্বালাবে, কত দগ্ধ করবে? আমি যে আর সইতে পারি না।

তুমি আমার জীবনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ কর। ইউসুফ (আঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং এদিক ওদিক তাকিয়ে যে সব বীভৎস দৃশ্য দেখলেন তাতে তাঁর শরীর প্রকম্পিত হল। তিনি মনে মনে আল্লাহ তা’য়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করলন। জোলেখা তাঁর হাত ধরে হপ্ত মহলের সর্বত্র ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন এবং মাঝে মাঝে ইউসুফ (আঃ) কে জড়িয়ে ধরলেন। ইউসুফ (আঃ) মনিবের কাজে খুব বাধা সৃষ্টি করার হিম্মত রাখেন না, তাই বাধ্য হয়ে নিরবে জোলেখার যৌন উন্মাদনার অত্যাচার সহ্য করে যেতে লাগলেন।”

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

জোলেখার প্রেম-পর্ব ৫ -পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।