জোয়েল হেইওয়ার্ড

জোয়েল হেইওয়ার্ড (জন্ম ১৯৬৪):

জোয়েল হেইওয়ার্ড একজন নিউজিল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ব্রিটিশ পণ্ডিত, একাডেমিক এবং লেখক। তাকে ২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে “বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি রয়্যাল এয়ার ফোর্স কলেজ ক্রানওয়েলের ডিন ছিলেন এবং বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ মুসলিম কলেজের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।জোয়েল হেইওয়ার্ড ১৯৬৪ সালের ২৭ মে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৮৮ সালে তিনি ক্রাইস্টচার্চের ক্যান্টারবারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসিকস এবং ইতিহাস নিয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভর্তি হন এবং ১৯৯১ সালের ৮ মে তিনি এই ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর, ১৯৯১ সালে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম শুরু করেন। তার মাস্টার্স থিসিসে তিনি হলোকাস্ট অস্বীকারের ইতিহাস বিশ্লেষণ করেছিলেন।তিনি তার কৌশলগত ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রকাশিত বই ও প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত, যার মধ্যে বিমান শক্তির ব্যবহার, ২০০৩ সালে প্রকাশিত হোরেশিও লর্ড নেলসনের জীবনী, ইসলামের যুদ্ধ, কৌশল ও সংঘাতের ধারণা এবং সিরাহ সংক্রান্ত রচনাসমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি রয়্যাল হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির ফেলো এবং রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসের ফেলো।তার সাম্প্রতিক বইগুলোর মধ্যে অন্যতম “দ্য লিডারশিপ অব মুহাম্মদ: এ হিস্টোরিকাল রিকনস্ট্রাকশন”, যা ২০২১ সালের শারজাহ আন্তর্জাতিক বই পুরস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক অপ্রকাশিত বই হিসেবে নির্বাচিত হয়। তিনি ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়ামের শিক্ষকও ছিলেন।

 

ইসলাম গ্রহণ এবং তার পরবর্তী সময়:

জোয়েল হেইওয়ার্ড ইসলামের প্রতি গভীর আগ্রহ ও অনুরাগী হয়ে ওঠেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব, আধ্যাত্মিকতা এবং ইসলামের ইতিহাস নিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করেছেন ও গবেষণা করেছেন। হেইওয়ার্ড ইসলামের যুদ্ধনীতি, কৌশল এবং সংঘাত সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন লেখা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। হেইওয়ার্ড ২০০৫ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তিনি চরমপন্থাবিরোধী কর্মশালায় বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীতে মুসলমানদের সেবা করার সমর্থক এবং যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীর মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। হেইওয়ার্ড নিজেকে “একজন মধ্যপন্থী এবং রাজনৈতিকভাবে উদার মনোভাবাপন্ন মুসলিম পুনরায় ধর্মগ্রহণকারী” হিসেবে বর্ণনা করেন, যিনি ইসলামের আধ্যাত্মিক সত্য, শান্তি ও ন্যায়বিচারের উপর গুরুত্ব, জাতিগত ও বর্ণগত অন্তর্ভুক্তি, এবং দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি ইসলামের দানশীল মনোভাবের কারণে এই ধর্মকে বেছে নিয়েছেন।তিনি আন্তর্জাতিক মুসলিম মানবাধিকার ও কল্যাণ সংস্থা ‘’মিনহাজ-উল-কোরআন’’ এর সাথে কাজ করেছেন এবং তাহির-উল-কাদরির কৌশলগত পরামর্শক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। তার লেখা দ্য লিডারশিপ অব মুহাম্মদ: হিস্টোরিকাল রিকনস্ট্রাকশন বইটি বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে, যেখানে তিনি ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বের গুণাবলী বিশ্লেষণ করেছেন। এই বইটি ২০২১ সালের শারজাহ আন্তর্জাতিক বই পুরস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক অপ্রকাশিত বই হিসেবে নির্বাচিত হয়।ইসলামের ওপর তার কাজগুলোর মধ্যে সিরাহ বা নবীর জীবনী রচনাও উল্লেখযোগ্য। হেইওয়ার্ড বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ মুসলিম কলেজের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত আছেন এবং ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।তিনি সংস্থার চরমপন্থা বিরোধী কর্মশালায়ও অবদান রেখেছেন।হেইওয়ার্ডকে “বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম” এর একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এবং ২০২৩, ২০২৪, এবং ২০২৫ সংস্করণে তার অন্তর্ভুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “তিনি ইসলামের শাস্ত্রীয় জ্ঞান ও পদ্ধতি এবং পাশ্চাত্য ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিকে একত্রিত করে জটিল ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর উদ্ভাবনী অথচ সুপরিকল্পিত বিশ্লেষণ প্রদান করেন, যা আধুনিক বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ।‘’

 

ইসলামিক জীবনে তার অবদান:

জোয়েল হেইওয়ার্ডের ইসলামিক জীবনে অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিস্তৃত। তিনি ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামিক ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, এবং আধ্যাত্মিকতা নিয়ে গভীরভাবে কাজ করেছেন এবং এই বিষয়ে অনেক মূল্যবান রচনা ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। হেইওয়ার্ড ইসলামের যুদ্ধনীতি ও কৌশল নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এ বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। তার কাজগুলোতে ইসলামের শান্তি ও ন্যায়বিচারমূলক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। চরমপন্থা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে তার কর্মশালা ও বক্তব্যগুলো ইসলামিক শান্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার করেছে। হেইওয়ার্ড নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ও নেতৃত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার বই দ্য লিডারশিপ অব মুহাম্মদ: হিস্টোরিকাল রিকনস্ট্রাকশন” নবীর (সা.) নেতৃত্বের গুণাবলী এবং তার আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশ্লেষণমূলক কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বইটি শারজাহ আন্তর্জাতিক বই পুরস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক অপ্রকাশিত বই হিসেবে সম্মানিত হয়েছে। তিনি বিভিন্ন চরমপন্থা বিরোধী কর্মশালায় বক্তব্য দিয়েছেন এবং সংস্থা মিনহাজ-উল-কোরআনের সাথে কাজ করেছেন। চরমপন্থার বিরুদ্ধে ইসলামের শিক্ষাগুলো প্রচার এবং মুসলিম যুবকদের মধ্যে শান্তি ও সহনশীলতার বার্তা ছড়ানোর জন্য তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হেইওয়ার্ড যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীর মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং মুসলিমদের ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তার এই অবদান ব্রিটিশ মুসলিমদের সামাজিক অবস্থান ও অধিকার উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। তিনি আন্তর্জাতিক মুসলিম মানবাধিকার ও কল্যাণ সংস্থা মিনহাজ-উল-কোরআনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তাহির-উল-কাদরির কৌশলগত পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তার ইসলামিক জীবনের এসব অবদান তাকে মুসলিম সমাজে একজন প্রভাবশালী চিন্তাবিদ ও নেতা হিসেবে স্থান করে দিয়েছে।

বর্তমানে জোয়েল হেইওয়ার্ড:

বর্তমানে জোয়েল হেইওয়ার্ড যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ মুসলিম কলেজের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে ইসলামিক শিক্ষা, গবেষণা, এবং ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার নেতৃত্বে কলেজটি ইসলামিক শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। হেইওয়ার্ড এখনো লেখালেখি ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, বিশেষ করে ইসলামিক দর্শন, যুদ্ধনীতি, এবং ইসলামের শান্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তিনি চরমপন্থা বিরোধী কর্মশালা ও প্রোগ্রামেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। এছাড়া, তিনি এখনো “বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন এবং ইসলামের শিক্ষার প্রচারে আন্তর্জাতিকভাবে অবদান রাখছেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।