জুলুম-নির্যাতনের পরিণতি

জুলুম-নির্যাতনের পরিণতি

বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? কী বললে—ভালো নেই! কিন্তু কেন? ও বুঝতে পেরেছি—বিশ্বজুড়ে দুর্বল দেশ ও মানুষদের ওপর শক্তিশালী দেশগুলোর জুলুম-নির্যাতন দেখে তোমাদের মন ভালো নেই। আর ভালো থাকবেই বা কেমন করে? ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন ও আফগানিস্তানে চলছে আমেরিকা ও তাদের তল্পিবাহক দোসরদের সীমাহীন অত্যাচার। কিছুদিন আগে ফিলিস্তিনেও চলেছে ইহুদিবাদী ইসরাইলের পাশবিক নির্যাতন। এখনও বর্বর ইসরাইল গাজার মানুষের ওপর হামলার হুমকি দিচ্ছে। বন্ধুরা, অত্যাচারির সামনে বুক টান করে দাঁড়াতে পারলে যে মজলুমদের পক্ষেই বিজয় আসে তা ইতিহাসে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। কেবল মানুষের মধ্যেই নয়, পশু-পাখির মধ্যেও এ বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এ সম্পর্কে বহু গল্পও তৈরি হয়েছে। আমরা এ সম্পর্কেই গল্প প্রচার করেছি। এ গল্পটি নেয়া হয়েছে তেরশ শতকের বিশিষ্ট ইরানী লেখক আহমদ বিন মুহাম্মদ শিরবানীর ‘তোফহাতুল ইয়ামিন’ গ্রন্থ থেকে।

এক বনে বাস করত এক ঝাঁক চড়ুই পাখি। তারা ঝুপড়িতে ডিম পাড়ত এবং বাচ্চা ফোটাত। ওই বনেই বাস করত একটি হাতি। একদিন ঝুপড়ির পাশ দিয়ে নদীতে পানি খেতে আসার সময় হাতির পায়ের নিচে পড়ে কয়েকটি চড়ুই পাখির বাচ্চা মারা গেল। চড়ুইরা এ খবর পেয়ে খুবই কষ্ট পেল। তাদের একজন এ ঘটনাকে ‘ভাগ্যের লিখন’ বলে এড়িয়ে যেতে চাইল। কিন্তু কাকলী নামের এক চড়ুই প্রতিবাদ করে বলে উঠলে:

কাকলী: আমি এসব মানি না। হাতি বড় প্রাণী বলে অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে তা হয় না। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। নইলে এই বনে আমরা কেউ বাস করতে পারব না।

কাকলীর যুক্তি ও বলিষ্ঠ বক্তব্য অন্য পাখিরা সমর্থন করল। কিন্তু কেউই হাতির অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আগ্রহ দেখাল না। এর পরিবর্তে তারা ওই বন ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যাওয়ার পক্ষে মত দিল। কিন্তু কাকলী কিছুতেই তা মেনে নিতে রাজি হলো না। সে বলল:

কাকলী: এ বন হচ্ছে আমাদের জন্মভূমি। শত্রুর ভয়ে আমরা যদি এখান থেকে চলে যাই তাহলে আমরা আমাদের জন্মভূমির মর্যাদা রক্ষা করব কী করে? তাছাড়া অপরাধ করেছে হাতি, চলতে হলে তারই যাওয়া উচিত এখান থেকে।

কাকলির পক্ষে এ সময় মুখ খুলল এক বুড়ো চড়ুই। সে বলল: ঠিক বলেছো তুমি। কিন্তু অধিকার আদায় করতে গেলে তো লড়াই করতে হবে। আমরা কি হাতির সাথে লড়াই করতে পারব?

কাকলী: কেন পারব না? আমরা সবাই যদি বুদ্ধি খাটিয়ে, নিজেদের সামর্থ্যকে কাজে লাগাই তাহলে নিশ্চয়ই হাতিকে পরাস্ত করতে পারব। তবে লড়াইয়ে নামার আগে আমি হাতিকে শেষবারের মত সাবধান করতে চাই যাতে সে আর আমাদের ঝোপঝাড়ের কাছে না আসে।

বুড়ো চড়ুই: বেশ ভাল কথা। কিন্তু হাতি যদি না মানে, তখন কী করবে?

কাকলী: হাতি যদি না শোনে, তাহলে তাকে এমন শিক্ষা দেব যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।

এই বলে কাকলী নিজের আস্তানায় ফিরে এসে চড়ুইদের কাছে হাতির দুর্ব্যবহারের কথা জানাল। সব শুনে পাখিরা ভীষণ ক্ষেপে গেল এবং হাতিকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায় তা জানতে চাইল। কাকলী বলল:

আমরা শক্তিতে হাতির সাথে পারব না ঠিকই, তবে হাতি যেহেতু উড়তে পারে না, সেহেতু সে আমাদের আকাশে পিষে মারতে পারবে না। বরং আমরাই উপর থেকে নখ ও ঠোঁট দিয়ে হাতির ওপর হামলা করব। আমরা যদি হাতির চোখ ফুটো করে দিতে পারি, তাহলে তার পরাজয় নিশ্চিত।

যুদ্ধের কৌশল নিয়ে আলোচনার পর সবাই মিলে একযোগে হামলা শুরু করল হাতির ওপর। তারা হাতির চারপাশ ঘিরে ধরল। হাতি প্রতিরোধ গড়ে তোলার আগেই পাখিরা তার চোখ ফুটো করে দিল। কিছু দেখতে না পেয়ে হাতি পাগলের মতো ছুটাছুটি করতে লাগল।

এ সময় কাকলী ব্যাঙদের ডাকল এবং হাতির অত্যাচারের কাহিনী শোনাল। তারাও হাতির অত্যাচারের শিকার। হাতিকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য তারা শপথ নিল। এদিকে, পাখিদের হামলায় চোখ হারিয়ে ছুটাছুটি করতে গিয়ে হাতির ভীষণ পিপাসা পেল। এ সময় কাকলীর নির্দেশে সব ব্যাঙ হাতির কাছে গিয়ে ‘মেঘ হো’, ‘মেঘ হো’ বলে ডাকাডাকি শুরু করল। ব্যাঙের ডাক শুনে হাতি ভাবল, ব্যাঙ যেহেতু ডাকছে, সেহেতু খুব আশপাশে নিশ্চয়ই পানি পাওয়া যাবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। পানি পাবার আশায় ব্যাঙদের শব্দ শুনে শুনে হাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। এ সময় কাকলীর নির্দেশে ব্যাঙরা পৌঁছে গেল মস্তবড় এক গর্তের পাশে। সেখানে গিয়ে ব্যাঙরা ‘মেঘ হো’, ‘মেঘ হো’ বলে চিৎকার দিতে দিতে গর্তে লাফিয়ে পড়ল। ব্যাঙের ডাক অনুসরণ করতে গিয়ে হাতিও হুড়মুড় করে পড়ে গেল গর্তে। চোখে না দেখায় শত চেষ্টা করেও আর গর্ত থেকে বের হতে পারল না। এভাবে হাতিকে উচিত শিক্ষা দিয়ে চড়ুই ও ব্যাঙরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

বন্ধুরা, দেখলেতো ছোট্ট চড়ুই পাখি ও ব্যাঙ কিভাবে বিশাল হাতিকে জব্দ করল? সবাই একজোট হয়ে সাহস নিয়ে মোকাবেলা করার ফলেই কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে। মজলুম ও দুর্বল মানুষও যদি অত্যাচারিদের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়ায়, তাহলে তাদের বিজয়ও অবশ্যম্ভাবী।

হাতি ও খরগোশ

হাতি ও খরগোশ

বিগিনারদের জন্য সহজ মেকআপ স্টেপস!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *