জীবে দয়া

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন কিছু মহৎ গুণ দিয়ে। এসব মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমেই মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়। এমনই একটি গুণ হল অপরের প্রতি দয়া বা অনুগ্রহ করা। মানুষ কেবল মানুষের প্রতি দয়া করবে এমনটি নয়, বরং পশুপাখির প্রতিও দয়া প্রদর্শন করতে হবে। ইসলাম ধর্মে এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

জীবে দয়া সম্পর্কে ঐতিহাসিক ঘটনা শোনা যাক : একদিন বিকেলবেলা মহানবী (সাঃ) এক বনের ধার দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন বনের ধারে একটি তাঁবু। তাঁবুর সামনে গাছের সাথে একটি হরিণী বাঁধা। তিনি লক্ষ্য করলেন হরিণীটির চোখ দুটো ছলছল করছে। দুধের ভারে বাঁট দুটি পরিপূর্ণ হয়ে আছে। তিনি বুঝতে পারলেন, নিশ্চয়ই হরিণীটির দুগ্ধপোষ্য বাচ্চা রয়েছে। হরিণীটি হয়তো সকালে ধরা পড়েছে, তাই বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারেনি। তিনি শিকারিদের ডেকে বললেন, ‘তোমরা হরিণীটিকে ছেড়ে দাও। কারণ মায়ের দুধ না পেয়ে কয়েকটি কচি বাচ্চা হয়তো প্রাণ হারাবে।’

শিকারীরা ছিল ইহুদি। বনের পশুদের প্রতি রসূল (সাঃ) দরদ দেখে তারা হরিণীটিকে ছেড়ে দিল এবং রসূল (সাঃ)-এর হাতে কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল।

একদিন একটি বালক পাখির বাসা থেকে দু’টি পাখির ছানা নিয়ে যাচ্ছিল। মা পাখিটি ছানার শোকে পাগলপ্রায় হয়ে বালকটির মাথার উপর উড়াউড়ি করতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে রাসূল (সাঃ) বালকটিকে বললেন, ‘ছানা দু’টি বাসায় রেখে এসো। দেখছ না, মা পাখিটি কেমন অস্থির হয়ে তোমার মাথার ওপর উড়াউড়ি করছে!’ রাসূল (সাঃ)-এর কথা শুনে বালকটি ছানা দু’টিকে বাসায় রেখে এলো। ছানা দু’টিকে পেয়ে মা পাখিটি আদর সোহাগ করতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রাসূল (সাঃ) এর আনন্দের আর সীমা রইল না।

এবার আমরা এক গোলামের পশুপ্রেমের কাহিনী শোনাবো। আপনারা নিশ্চয়ই বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের নাম শুনেছেন! তিনি ছিলেন, হযরত জাফর ইবনে আবু তালিবের ছেলে এবং আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আ)-এর জামাতা। আব্দুল্লাহ ইবনে জাফরের সাথে হযরত আলীর কন্যা যেইনাব (সাঃআঃ)-র বিয়ে হয়।

সে যাই হোক, হযরত আব্দুল্লাহ একবার কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটি বাগান দেখে বিশ্রাম নেয়ার জন্য তিনি থেকে গেলেন। সেই বাগানে একজন হাবশী গোলাম কাজ করছিলো। এ সময় গোলামটির জন্য এক লোক খাবার নিয়ে এলো। সেখানে ছিল মাত্র তিনটি রুটি। যে লোকটি খাবার নিয়ে এলো তার পিছু পিছু একটি কুকুরও এলো। গোলাম খাবার হাতে নিয়ে সেখান থেকে একটি রুটি কুকুরকে দিল। সাথে সাথে কুকুর রুটিটি খেয়ে ফেললো এবং আরো রুটি পাওয়ার আশায় তাকিয়ে থাকলো।

এবার ঐ হাবশী গোলাম আরো একটি রুটি কুকুরটির সামনে ছুড়ে দিলো। এবারও কুকুর রুটিটি খেয়ে ফেললো এবং রুটির পাত্রের দিকে তাকিয়ে রইলো। কুকুরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে গোলাম তার সর্বশেষ রুটিটিও কুকুরকে দিয়ে দিলো।

কুকুরকে তিনটি রুটিই দিয়ে দেয়ার ঘটনাটি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করছিলেন। সবগুলো রুটি কুকুরকে দেয়ার পর হযরত আব্দুল্লাহ গোলামকে জিজ্ঞেস করলেন, “প্রতিদিন খাওয়ার জন্য তোমার জন্য কয়টি রুটি আসে?” গোলাম জবাব দিলো, “মনিবের বাড়ী থেকে আমার জন্য প্রতিদিন তিনটি রুটি পাঠানো হয়। ঐ তিনটি রুটি দিয়েই আমি সারাদিন পার করি।”

এরপর হযরত আব্দুল্লাহ বললেন, “তাহলে তুমি সবগুলো রুটি কুকুরকে দিয়ে দিলে কেন?” গোলাম জবাব দিলো, “আমাদের এ এলাকায় কোন কুকুর নাই। আমার মনে হয়, ক্ষুধার্ত এ কুকুরটি দূরের কোন এলাকা থেকে এসেছে। তার আসতে নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট হয়েছে। ক্ষুধার্ত কুকুরটিতে না খাইয়ে আমি নিজে স্বার্থপরের মতো রুটিগুলো খাবো—এটা আমার ভাল লাগেনি। তাই আমি তাকে সবগুলো রুটি দিয়ে দিয়েছি।”

এবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর জিজ্ঞেস করলেন, “আজ সারাদিন তুমি কি খাবে?” গোলাম জবাব দিলো, “একদিন না খেলে তেমন কোন কষ্ট হবে না। তাছাড়া কুকুরটির ক্ষুধা দূর করতে পেরে আমার ভালই লাগছে।”

গোলামের এ জবাব শুনে হযরত আব্দুল্লাহ মনে মনে ভাবলেন, “লোকেরা আমাকে বড় দানশীল মনে করে থাকে অথচ এ গোলাম দেখছি আমার চেয়েও বড় দানশীল!” এরপর তিনি সেখান থেকে শহরে চলে গেলেন। শহরে গিয়ে তিনি বাগানটির মালিকের সাথে দেখা করলেন এবং বাগান ও গোলামকে কিনে নিলেন।

এরপর গোলামটিকে আযাদ করে দিলেন এবং বাগানটি গোলামকে দান করে দিলেন। এই ছিলো জীব প্রেমী এক গোলামের প্রতি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রাঃ)-এর বদান্যতা।

এতিমের অধিকার

রোযায় শুকরগোযারির প্রশিক্ষণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *