জীবনের বড় ভুল —– হৃদয় সরকার

এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন রাতের বেলা রাতুল বাড়ির এগারো তলার ছাদে একদম কিনারে দাঁড়িয়ে। অঝোরে পানি পড়ছে ওর চোখ দিয়ে। এতো চেষ্টা করলাম তারপরো রেজাল্ট ভালো হলোনা! আমি তো চেষ্টা করেছিলাম, হলোনা তাতে আমার কি দোষ! বাবা তাই বলে আমাকে এত্তো বকবে! বললো আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা! রিকশা চালাতে বললো! আমার কি দোষ! আমি তো রাত জেগে জেগে পড়ে ছিলাম! তখন তো সবাই বলেছে আমি ফ্যামিলির মুখ উজ্জ্বল করবো! আর এখন সবাই আমাকে বকছে! আম্মুটাও মুখ ভার করে বসেছিলো! বাবাকে আটকাচ্ছিলোনা! কি হতো আম্মু যদি তখন একটু আমার পক্ষ নিতো! সবাই শুধু আমাকে বকে! কেউ আমাকে ভালোবাসেনা! আমি না থাকলে কারো কিছু যাবে আসবেনা! কেউ আমাকে বোঝেনা, সবাই শুধু আমার রেজাল্ট বোঝে! থাকবোনা আর আমি!’- ভাবতে ভাবতে চোখ মোছে রাতুল। সুপারম্যান টিভি সিরিজটা তার অনেক প্রিয় ছিলো। উডতে তো পারবেনা, তাই পাইলট হবার খুব ইচ্ছে ছিলো রাতুলের।

 

ইচ্ছে ছিলো জীবনে একবার অন্তত প্লেনে চডবে। তা আর হলো কই! বুকে প্রচন্ড অভিমান নিয়ে লাফ দিলো রাতুল, বলতে গেলে নিজেকে হাওযার উপর ছেড়ে দিলো। এক সেকেন্ড পর বাড়ির সামনের বাগানে ধুপ করে কিছু পড়ার শব্দ হলো। তারপর সব চুপ! কেউ শুনলোনা সে শব্দ! একটু পর রাতুলের বাবা আলম সাহেব এশার নামায পড়ে বাসার সামনে এসে দাড়ালেন। বাগানে বস্তামতো কি যেন একটা পড়ে না উনি। চশমাটা চোখে লাগালেন উনি। ভালো করে তাকালনে! রাতুউউউউউউউল!!! ! বিকট চিৎকারে। শুধু শুন তে পেলনা একটা অভিমানী বাচ্চা! কেপে উঠলো! সবাই শুনলো আলম সাহেবের সেই যার আছে! রাতের বেলা চশমা ছাড়া ঠিকমতো দেখতে পান রেজাল্ট একটু খারাপ হয়েছিলো! রাতুল মারা যাবার পর সবচেয়ে বেশি কেঁদেছিলেন রাতুলের বাবা! এখনো কাদেন! ছেলের ঐঝঈ পরীক্ষার প্রবেশপত্র বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন! যে রাতুল ভেবেছিলো সে না থাকলেও তার ফ্যামিলির কিছু যাবে আসবেনা, সেই রাতুলের ফ্যামিলি আজ জীবন্মত। বাড়ির সবচেয়ে চঞ্চল ছেলেটাই তো আজ নেই! সারা বাড়ি দুষ্টুমি- হাসি- চিৎকার- চেচামেচিতে আর ভরে থাকেনা! রাতুলদের বাড়ির কেউ আর হাসেনা! রাতুলের খাবারের প্লেটটায খাবার ওঠেনা! রাতুলের মা খালি প্লেটটার দিকে নিঃশব্দে চেয়ে থাকেন। কখন যে চোখের পানিতে ওনার গাল ভিজে ওঠে টেরও পান না উনি! কেউ জানেনা এখানে কারো কোন দোষ ছিলোনা! রাতুল শুধু বুঝতে শেখেনি সে তার পরিবারের কাছে কতো গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কেউ এটা স্বপ্নেও ভাবেনি রাতুলকে এটা বোঝানো উচিৎ। রাতুল কাল শিক্ষক হতে পারতো, পাইলট হতে পারতো হয়তো প্লেনেও চড়তে পারতো! তার কিছুই হলোনা!

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!