ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন।প্রাচীন ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এদেশে রয়েছে হাজার হাজার লোককাহিনী।তার মধ্যে তিন ভাই আর এক বোনের কাহিনী সারাবিশ্বে ছরিয়ে পড়েছিল।এই তিন ভাই আর এক বোন প্রথমদিকে দিকে বাশ করতো একতা ছোট্ট কুঠিরে,কিন্তু তারা তিনজন ছিল পরিশ্রমীও সৎ।কিছুদিন পরে তারা প্রাসাদের মতো একরা সুন্দর বাড়ি তৈরি করল।
আশপাশের লোকজন তাদের সুরম্য প্রাসাদের প্রশংসা করে বলে,চমৎকার বাড়ি।একজন বুড়ো মানুষ সবকিছু ঘুরে দেখে বললেন,সবই চমৎকার হয়েছে।এখন তোমাদের দরকার জীবনের জন্যে পানি।আর সেই সঙ্গে কথা বলতে পারা পাখিটি এবং সৌন্ধযের যে গাছে ঐ পাখি বেসে থাকে সেই গাছটি।”
তিন ভাই আর বোন জিজ্ঞাসা করল,এগুলো কোথায় পাব আমরা!”
বৃদ্ধা বলেন,ওই যে প্রান্ত দেখছো,সেটা পেরিয়ে দুরের ওই পাহারে যাও।সেখানে সব পাবে।আর এই ছুরি টা লও।জতক্ষন এর ফলা পরিষ্কার ও উজ্জব্ল থাকবে ততকক্ষন বুঝবে যে জীবনের জন্যে পানির খোজে যাওয়া মানুষ টি সুস্থ আছে,ভালো আছে,কিন্তু ফলার উপরে রক্তের ফোটা দেখলেই বুঝবে যে ওই মানুষটি বিপদ ঘটছে।
ওরা বৃদ্ধা কে ধন্যবাদ দিয়ে ছুরিটি গ্রহন করে।তারপর বৃদ্ধা নিজের মতো করে চলে গেলেন।
তখন ওদের বড় ভাই বলেন,তাহলে আমি চলিলাম জীবনের জন্যে পানির খোজে।তখনি রওনা করল।সে হাঁটতে হাঁটতে প্রান্তের অনেক খানি পথ পেরিয়ে যায়।তার পর তার দেখা হয় এক দৈত্যের সঙ্গে।
দৈত্য জিজ্ঞাসা করল,কোথায় চলেছ এরকম হনহন করে?
যুবক জানালো, জীবনের জন্যে পানির খোজে।
দৈত্য বলল,আমি ওই জল আর পাহাড়ের অন্যান্য মূল্যবান জিনিসের খোজে অনেককে যেতে দেখেছি এই পথ ধরে,কিন্তু তাহাদের একজনের ফিরতে দেখেনি।আমার কথা যদি খেয়াল না করো।
সেইমতো যদি না চলো।তাহলে তুমিও কোনোদিন ফিরবে না।এখন মন দিয়ে শোনো ।পাহারে যাওয়ার পথে তুমি অনেক শিলাখণ্ড দেখবে।তুমি সে দিকে তাকেবে না।একটা পাথর স্পর্শ করবে না।
তুমি চলতে থাকবে সোজা সামনের দিকে।তুমি হাসির শব্দ শুনবে বিদ্রুপবাক্য তোমার কানে আসবে,পাথর গুলোই এসব করবে।তুমি তাতে কর্ণপাত করবে না।করলে তুমি পাথরে পরিণীত হবে।পাহাড়ের শীর্ষ দেশে না পৌছানো না পর্যন্ত তুনি চলতে থাকবে,তাহলে যা খুঁজতে তুমি বেরিয়েছ তা তুমি পাবে।
দৈত্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে যুবক পাহাড়ের পাদদেশে উঠে সে শুনতে পাই নানা রকম ব্যঙ্গোক্তি,কঠিন বিদ্রুপবানী উপহাস ভরা হো হো হাসি।সে তাতে কান নাদিয়ে চলতে থাকে।কিন্তু এক সময় তার আর সহ্য হয়না সে ওই পাথর গুলোর দিকে ছুড়ে মারার জন্যে নিচু হয়ে একটা পাথর নেয়।আর সে সঙ্গে সঙ্গে সে অনুভব করে তার হাত শক্ত ও অবশ হয়ে যাচ্ছে।দেখতে দেখতে সে নিজে পাথরে পরিণীত হয়ে যায়।
ঠিক মুহুর্তে বাড়িতে তার বোন ছোখের সামনে ছুরিটা নিয়ে বসেছিল।সে দেখল ছুরির উপর রক্তের ফোটা এসে জমা হয়েছ।সে ভাইদের সেটা দেখাল।দ্বিতীয় ভাই বলে উঠল,আমি চললাম বড় ভাইকে বাঁচাতে হবে।সে হাঁটতে থাকে এবং এক সময় তার দেখা হয় দৈত্যের সাথে।দৈত্য তাকেই এই পরামর্শ দেয়।এই পথা ধরে এগিয়ে যাও,পথে দেখবে অনেক শিলাখণ্ড পড়ে আছে।কিন্তু সে দিকে তুমি চোখ তুলে তাকাবে না।ভুলেও ওই সব পাথর স্পর্শ করবে না।ওরা তোমাকে খুব ঠাট্টা বিদ্রূপ করবে,সে সব একটু গায়ে মাখবে না।দ্বীতীয় ভাই চলতে থাকে।পাথর গুলো তাকে টিটকারি কাটে,উপহাস করে নানা রকম গাল দেয়।কিন্তু সে সব কিছু উপেক্ষা করে চলতে থাকে।হঠাৎ সে শুনতে পেল তার ভাই তাকে গালাগালি করছে, দ্রুত সে পিছনে তাকায় এবং সঙ্গে সঙ্গে সে পাথরে পরিণীত হয়ে যায়।
ঠিক ওই মুহুর্তেই তার বোন সামনে ছুরিটা নিয়ে বসে ছিল।সে হঠাৎ লক্ষ করলো যে, ছুরির ফলার গায়ে রক্তের ফোটা এসে জমা হয়েছে।সে তাদের সবচাইতে ছোট ভাই আর্তকণ্ঠে ডাকলো।ভাই এক মুহুর্তেই ছুরির ফলাটা দেখল।তার পর বলল,আমি এখনি যাচ্ছি।”
সে হাঁটতে থাকে এবং এক সময় দৈত্যকে দেখতে পায়।তার প্রশ্নের উত্তরে দৈত্য জানাল যে,সে যুবকের দুই ভাই কে এপথ দিয়ে যেতে দেখেছে কিন্তু ফিরতে দেখিনি। তারপর দৈত্য তাকেও পাহাড়ের বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করে দেয়।
দৈত্যকে ধন্যবাদ দিয়ে যুবক এগিয়ে যায়।সে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছ,পাথর গুলো তাকে যতই বিদ্রূপই করুক না কেন সে বিন্দু মাত্র বিচলিত হবে না।হলোও না। প্রায় সে পাহাড়ের শির্ষে পৌছায়ে গেছে,এমন সময় সে শুনতে পেল তার দুই ভাই যেন যন্ত্রনায় চিৎকার করছে।সে দ্রুত পেছন ফিরে তাকাল এবং সঙ্গে সঙ্গে পাথরে রূপান্তরিত হয়ে গেল।এমন সময় ওদের বোন তাদের বাড়ির সামনে অস্থিরভাবে পায়চারী করছিল।
তার হাতে ধরা ছিল বিচিত্র ছুরিটি।হঠাৎ সে দেখতে পেল যে ছুরির ফলাটা রক্তে অস্বচ্ছ ও মলিন হয়ে যাচ্ছে।সে তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলে উঠলো,এবার আমার পালা।
কাল বিলম্ব না করে সে প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে দ্রতপায়ে এগিয়ে চলে এবং একটু পরেই দৈত্যের সাক্ষত পায়,তরুণী তাকে জিজ্ঞাসা করে,আপনি কি তিন জোন যুবকের এই পথ দিয়ে যেতে দেখেছেন?
দৈত্য উত্তর দিল হ্যাঁ,দেখছি।যেতে দেখেছি।কিন্তু ফিরতে দেখেনি।নিশ্চয় তারা যাদুর জালে বন্দী হয়েছ।
তরুণী জানতে চাইলেন কিভাবে আমি ওদের মুক্ত করতে পারবো?কেমন করে আমি জীবনের জন্য পানির সন্ধান পাবো?দৈত্য বলল,এই পথ ধরে সোজা পাহাড়ে উঠে যাও।কঠিন ও পিছিল পথ।অনেক পাথর পড়ে থাকতে দেখবে সমস্ত পথজুড়ে।ওরা তোমাকে প্রচুর হাসি তামসা করবে।তুমি ওদের কথায় কান দিবে না।একে বার পাহাড়ের উপরে গিয়ে জীবনের জন্য পানি তোমার পাত্রে ভরে নেবার আগ পর্যন্ত তুমি কারো কথা শুনবে না,কারো দিকে তাকাবে না।যাও এবার।
তরুণী দৈত্য কে ধন্যবাদ দিয়ে এগিয়ে যায়।পাথর গুলো ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ সে শুনতে পায় কিন্তু একটু গায়ে মাখে না।তার তিন ভাইয়ের গলাও তার কানে আসে,কিন্তু সে সব কিছু অতিক্রম করে পাহারের উপরে গিয়ে পৌছায়।একবার পেছন ফিরে তাকায় না।
পাহাড়ের উপরে উঠে সঙ্গে সঙ্গে শব্দ থেমে যায়।চারদিক আশ্চর্য ও প্রশান্ত হয়ে উঠে।তরুণী দেখতে যে সে দাঁড়িয়ে আছে একটা সোনালী জলাশয়ের তীরে,সেখানে রয়েছে জীবনের জন্য পানি।পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সৌন্দর্যের তরু। আর তার পাশে আছে কথা বলা পাখি।তরুণী সযন্তে তার কলসিতে জল ভরে নেয়।কানায় কানায় পর্ণ করে।আসার সমায় হাতে করে নিয়ে এসেছ,একটা খাঁচা।ওই খাঁচাই রয়েছে কথা বলা পাখিটি,তার পর তরতর করে পাহাড় থেকে নামতে থাকে।কঠিন প্ররিশ্রমে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।তার হাত কাঁপতে থাকে।হঠাৎ কয়েক ফোঁটা জল কলসি থেকে ছিটকে নিচের পাথরের উপর পড়ে।সঙ্গে সঙ্গে পাথর গুলো রুপান্তরিত হয় কয়েক জোন যুবক-যুবতীতে।তারা তরুণীর চারপাশে ভির করে তাকে ওদের কৃতজ্ঞাতা জানায়।দুষ্ট মায়াজাল,কিভাবে ছিন্ন করা যাবে তরুণীর কাছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে।সে পাথরের পাশে পড়ে থাকা সব শিলাখণ্ডকে তাদের মানুষের রুপ ফিরিয়ে দেয়। তার ভাইও বাদ যাই না।
ভাইদের নিয়ে আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরে এসে সে সৌন্দের্যের তরু টি তার বাগানে রোপণ করে,তার গোড়ায় ঢাললো জীবনের জল,আর দেখতে দেখতে ওই গাছ ভরে গেল অপূর্ব ফুলের ভাণ্ডারে।ওই গাছে সানন্দে এসে বসল কথা বলা পাখি টি।
সারাদেশের লোক আসতে থাকে তিন ভাই আর বোনের আশ্চর্য তিনটি জিনিস দেখার জন্য।