তায়েফের সন্নিকটবর্তী জিরানা লোকালয়। হুনাইন যুদ্ধের ছয় হাজার বন্দী এখনও জিরানার মুসলিম শিবিরে বন্দী। তায়েফের অবরোধ শেষ করে মহানবী (সাঃ) ফিরে এলেন জিরানার শিবিরে।
জিরানায় যারা বন্দী ছিল, সবাই হাওয়াযেন গোত্রের লোক। হাওয়াযেন গোত্রের একটি শাখা বনু সা’দ। এই বনু সা’দ মহানবীর (সাঃ) দুধমাতা হালিমার কবিলা। এদের সাথেই হেসে-খেলে মহানবীর (সাঃ) শিশুকালের পাঁচটি বছর কেটেছে। বনু সা’দ কবিলার লোকেরাও হাওয়াযেনদের সাথে বন্দী ছিল জিরানায়।
মহানবী (সাঃ) জিরানায় ফিরে এলে হাওয়াযেনদের একটি সম্মানিত প্রতিনিধিদল মহানবীর (সাঃ) সাথে দেখা করলেন। প্রতিনিধি দলের নেতা যুহাইর ইবন সা’দ মহানবীর (সাঃ) কাছে এসে আরজ করলেন,
“যারা বন্দী শিবিরে অবস্থান করছে, তাদের মধ্যে আপনার ফুফু ও খালাও রয়েছেন। আল্লাহুর কসম, যদি আরবের সুলতানদের মধ্য থেকে কেউ আমার বংশের দুধ পান করতেন, তাহলে তাঁর কাছে আমাদের অনেক আকাঙ্ক্ষা ও আবদার থাকতো। আর আপনার কাছ থেকে আমরা আরও বেশি আশা রাখি।”
মহানবী (সাঃ) সাগ্রহে তাদের কথা শুনলেন। বোধ হয় তাঁর মন ছুটে গেল সুদূর অতীতের এক দৃশ্যে। ভেসে উঠল তাঁর চোখে হাওয়াযেনদের উপত্যকা ও প্রান্তর ভূমি। ফুফু-খালা যারা বন্দী, তাদের স্নেহ তাঁকে কতই না শান্তির স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়েছে। কিন্তু তিনি তো কোনো রাজা নন, কিংবা কোনো ডিক্টেটর অথবা স্বেচ্ছাচারী সম্রাট নন। সব মুসলমানের স্বার্থ ও মতামত যে বন্দিমুক্তির সাথে জড়িত, সে বন্দীদের তিনি একার ইচ্ছায় ছেড়ে দিতে পারেন না।
এ অধিকার সকলের। সকলের সামনে এটা পেশ করা দরকার। মহানবী (সাঃ) শান্ত, স্নিগ্ধ কণ্ঠে বললেন,
“যুহাইর! যুদ্ধ বন্দীদের উপর আবদুল মুত্তালিবের বংশধরদের অধিকার যতটুকু, তা আমি এই মুহূর্তে ত্যাগ করছি। আর অন্যান্য সকল যুদ্ধ বন্দীর মুক্তির জন্য যোহরের নামাযের পর সমবেত মুসলমানদের কাছে আবেদন কর।”
সে দিনই যোহরের নামাযের পর হাওয়াযেনদের প্রতিনিধি দল মুসলমানদের সামনে দাঁড়াল। আবেদন জানাল তারা বন্দীদের মুক্তির জন্য আগের মতো। মহানবী (সাঃ) ঠিক আগের মতো বললেন,
“আমি আমার কবিলার লোকদের অধিকার রাখি, আমি তাদের দাবি পরিত্যাগ করছি। আর মুসলমানদের সকলের কাছে বন্দীর মুক্তির জন্য সুফারিশ করছি।”
সমবেত আনসার ও মুহাজির সবাই এক বাক্যে বলে উঠল,
“আপনার কবিলার মতো আমাদের অধিকারও আপনার উপর অর্পিত হলো।”
এরপর মহানবী (সাঃ) ছয় হাজার বন্দীর সকলকেই মুক্তি দিলেন। মহানবী (সাঃ) ইচ্ছা করলেই সব বন্দীকে আগেই নিজের ইচ্ছায় মুক্তি দিতে পারতেন। কেউই প্রতিবাদ করতো না, কিংবা অসন্তুষ্টও হতো না। কিন্তু সব যুগে সব মানুষের আদর্শ মহানবী (সাঃ) তা করেননি। মুসলমানদের শাসক, অধিনায়ক যাঁরা, তাঁরা মুসলমানদেরই একজন হবেন। তাঁর অধিকারের সীমাও সকলের চেয়ে বেশি কিছু হবে না—এ উজ্জ্বল শিক্ষাই চিরন্তন করে রাখলেন তিনি পৃথিবীতে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।