জাহাজ পোড়ানো তারিক—আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

৭১১ সন। মুসলিম সেনাপতি তারিক ইবন যিয়াদ ভূমধ্য সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের মাটি জিব্রালটারে পা রাখলেন। তাঁর সাথে ৭শ সৈন্যের এক ক্ষুদ্র বাহিনী। এ ক্ষুদ্র বাহিনী স্পেনরাজ রডারিক হেসেই আকুল। সাগর-উর্মির ন্যায় বিপুল রডারিকের সৈন্যের মুকাবিলায় দাঁড়িয়ে মুসলিম সৈনিকের মনেও অজ্ঞাতে নানা প্রশ্ন ভিড় জমিয়েছিল। কিন্তু সেনাপতি তারিক অচল-অটল। বিজয় আসে সত্য-ন্যায়ের শক্তিতে, সংখ্যাধিক্যে নয়। বদর, উহুদ, ইয়ারমুক, কাদেসিয়া প্রভৃতি কত ক্ষেত্রে কতবার তা প্রমাণ হয়ে গেছে।

অকুতোভয় তারিক ইবন যিয়াদ জিব্রালটারে নেমে জাহাজে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিলেন সব জাহাজ। তারপর সৈন্যদের দিকে চেয়ে বললেন,” চেয়ে দেখ বন্ধুগণ, গভীর সমুদ্র আমাদের পেছনে গর্জন করছে। আর সামনে অন্যায় অবিচারের প্রতীক বিশাল রডাডিক বাহিনী। আর যদি আমরা সামনে অগ্রসর হই, তাহলে ন্যায় ও বিশ্ব-কল্যাণ প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা শহীদ হবো, কিংবা বিজয় মাল্য লাভ করে আমরা গাজী হবো। এই জীবনমরণ সংগ্রামে কে আমার অনুগামী হবে?” মুসলিম বাহিনীর প্রতিটি সৈনিকই বজ্র নির্ঘোষে ‘ তাকবীর ‘ দিয়ে সেনাপতি তারিকের সাথে ঐক্যমত ঘোষণা করল।

স্পেনরাজ রডারিকের প্রধান সেনাপতি থিওডমিরের নেতৃত্বাধীন বিশাল এক বাহিনীর সাথে মুসলিম সৈন্যের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হলো সে এক অসম যুদ্ধ। যুদ্ধ বিজ্ঞানের উচিত অনুচিতের দৃষ্টিকোণের থেকে মনে হবে, নিতান্ত আত্মহত্যার খাহেশ নিয়েই ৭০০ সৈন্যের মুসলিম বাহিনীটি এ বিদেশ বিভুয়ে এসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কিন্তু এই অসম যুদ্ধই এক ইতিহাসের সৃষ্টি করল।

জানবাজ মুসলিম বাহিনীর প্রচন্ড পাল্টা আক্রমণে রডারিক বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলো। মুসলিম সৈন্য ও তাদের সেনাপতির সৌর্যবীর্য ও সাহস দেখে সেনাপতি থিওডমির বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়ে রাজা রডারিককে লিখে পাঠালেন, ” সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও অদ্ভুত শৌর্য বীর্যের অধিকারী মুসলিম বাহিনীর অগ্রগতি আমি রুখতে পারলাম না।?” এই ভাবেই সত্যের জয় হল-ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডিন হল স্পেনে।

তারপর গৌরবময় মুসলিম শাসন চললো সেখানে দীর্ঘ ৭শ বছর ধরে। কর্ডোভা, গ্রানাডা, মালাগাকে কেন্দ্র করে যে মুসলিম সভ্যতার বিকাশ ঘটল, তা সারা ইউরোপকে আলোকিত করে তুললো। অন্ধকার ইউরোপের বুকে সূর্যশিখার মতোই জ্বলছিল কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান শিখা। সেখানে জ্ঞান আহরণের জন্য ইউরোপের সব দেশ থেকেই ছুটে এসেছিল জ্ঞান পিপাসুরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম মনীষীদের কাছ থেকে সেদিনের অন্ধকার ইউরোপ জ্ঞানের এ বি সি ডি শিক্ষা করল। কর্ডোভার এই ছাত্রারাই ছিল ইউরোপীয় জাগরণের স্থপতি। সুতরাং আজকের যে ইউরোপ, তার ঘুম ভাংগিয়েছে মুসলমানরাই। আর তাদের এ ঘুম ভাংগার প্রথম গান গেয়েছিলেন তারিক ইবন যিয়াদ। তিনি গোথিক শাসনের নির্মম নিষ্পেষণ থেকে শুধু স্পেনকেই মুক্ত করেননি, বলা চলে স্মরণাতীত কালের অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকেও তিনি জাগিয়েছেন ইউরোপকে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!