
রূমানার খুব পছন্দের একটা জায়গা ছাদ ।। সুযোগ পেলেই সে আর জামিল (তার স্বামী) ছাদে উঠে।। নতুন বিবাহিত দম্পতি তারা ।।
এখনই তো সময়, জীবনকে উপভোগ করার ।। ইদানিং জামিলের আচরন ভাবিয়ে তুলল রূমানাকে ।। এমন করে কেনো জামিল ?? কিছুই ভেবে পায় না সে।।
পাশের প্রতিবেশী ভাবীর সাথে এই বিষয়টা নিয়ে আলাপ করল ।। কিন্তু তাতে কোন ফল হলো না ।। এব্যাপারে কোন রকম সমাধান কেউ দিতে পারল না ।।
জামিলের অদ্ভুত আচরন গুলো নিম্নরূপঃ একা একা কথা বলা ।। খুব গভীর রাতে ছাদে চলে যাওয়া, ঘুমের ঘোরে হাঁটা ও আবোল তাবোল বকা।।
হাতের নানা অঙ্গভঙ্গি, যেমন কাউকে যেনো ইশারা করে ডাকছে ।। কাউকে জড়িয়ে ধরছে এমন।। রূমানার থেকে দূরে দূরে থাকা, ইত্যাদি ।।
আজ গ্রাম থেকে জামিলের বাবা মা এসেছে, জামিল অসুস্থ শুনে ।।
জামিলের মা, ছেলের এমন আচরন দেখে বললেন, “এইডা নিশ্চয় ঔ পরীর কাম !! আইজো আমার পোলাডারে ছাড়লো না চুন্নীডা !! আমার পোলার জীবনডারে নষ্ট কইরা ফালাইবো ঔ পেত্নি !!” বলেই কাঁদতে শুরু করলেন ছেলের জন্য ।।
শ্বাশুড়ির কথাগুলো শুনে আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইল রুমানা, “আম্মা, এইসব কি বলছেন আপনি ?? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।।
আমাকে খুলে বলুন সব।।” জামিলের মায়ের ভাষায়, “ছোড বেলাত থেক্যাই এক বদ পরী আমার পোলার দিকে নজর দিসিল ।। জামিলরে নাকি ওর ভাল লাগে।।
ওরে বিয়া করবার চাইছিল ।। আমরা রাজি হই নাই দেইখ্যা, জামিলরে উঠাইয়্যা নিয়া যাইব কয়ছিল ।।
আমি আর তোমার শ্বশুড় মিইল্যা হুজুর ডাইক্যা জামিলের শরীর দোয়া (তাবিজ) দিয়া আটকাইয়া দিছিলাম ।।
এরপর থেইক্যা পরীডা আর ওর কাছে আইতে পারতো না , তয় মানুষের রূপ ধইরা ওরে নিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিল।।” রুমানার মনে পড়ে গেলো হঠাত্।।
কিছুদিন আগে তার সামনেই জামিল তার গায়ের তাবিজটা খুলে ফেলেছে।। রুমানার নিষেধ শোনেনি সে।। তাহলে এখন উপায়?? কয়েকদিন পরের ঘটনা।।
জামিল এখন পুরোপুরি সুস্থ ।। রুমানা তার শ্বাশুড়ির কথা শুনে, জামিলকে এক নামকরা হুজুর দেখিয়েছিল ।।
সেই হুজুর পরীটাকে একেবারের জন্য একটি কাঁচের বোতলে বন্দী করে ,ফেলে দিল নদীতে।।
এখন আবার তারা সুখি-সংসার যাপন করতে লাগলো ।। আজ সকালেই ডাক্তারের রিপোর্ট হাতে পেল জামিল ।। রিপোর্টগুলো রুমানার ।।
খুশির খবর রুমানা মা হতে চলেছে!! কয়েকমাস পার হওয়ার পর চেক আপের জন্য রুমানাকে নিয়ে একদিন ডাক্তারের কাছে গেলো জামিল।।
আলট্রাসনোতে যা ধরা পড়ল ,তা অবিশ্বাস্য!! মায়ের নাড়ীর সাথে কোন যোগ সূত্র নেই বাচ্চাটার।। অবাক হয়ে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আছেন ডাক্তার।।
ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে হাসছে বাচ্চাটি।। ঘটনাটিকে কেউ বানোয়াট ভাববেন না।। এটা সত্যি একটা অলৌকিক ঘটনা।। যা আমি জেনেছি আমার খালার মুখে।। ঘটনাটি আমি লিখেছি আমার ভাষায়।।
আমার খালারা যেখানে থাকেন, ঘটনাটি সেখানেই ঘটেছে।। এখনো জামিল এবং রুমানা আছে।। শুধু নেই তাদের, দুঃখিত, পরীর সেই বাচ্চাটা।।