হযরত আবু মুসা আশআ’রী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে মুমিনদের জন্য এমন তাঁবু হবে যা একটি মুক্তা দ্বারাই নির্মিত (মুক্তাটি বড় হবে)। যার ভিতর দিক হবে ডিমের খোসার মত, প্রশস্ততা হবে ষাট মাইল। তার প্রত্যেক কোণায় মুমিনদের সাথে সম্পর্কিতরা থাকবে। এক কোণা থেকে অপর কোণায় অবস্থিতদের দেখা যাবে না। তাদের কাছে সকল মুমিনই আসা-যাওয়া করবে। (এরপর ইরশাদ করেন, মুমিনের জন্য) দু’টি এমন বাগান হবে, তার পাত্র এবং তাতে যা কিছু আছে সবকিছু হবে রূপার, আর দু’টি বাগান এমন হবে তার পাত্র এবং তাতে যা কিছু আছে সবকিছু হবে স্বর্ণের। [মুসলিম শরীফ]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নি¤œস্তরের জান্নাতি সে, যার জন্য আশি হাজার খাদেম এবং বাহাত্তর জন স্ত্রী হবে। সে এমন একটি গম্বুজ পাবে যা মণিমুক্তা এবং ইয়াকূত দ্বারা নির্মিত। তার দৈর্ঘ-প্রস্থ হবে সানআ ও জাবিয়া শহরের দূরত্ব সমান। [তিরমিযি]
জান্নাতের মওসুম
সূরা দাহরে ইরশাদ হয়েছে- ‘আর তাদের ধৈর্যশীলতার বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তাদের উদ্যান ও রেশমী বস্ত্র দিবেন, সেথায় তারা সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে। তারা সেখানে অতিশয় গরম অথবা অতিশয় শীত বোধ করবে না। [সূরা দাহর]
তাফসীরে মাজহারী প্রণেতা এ আয়াতের তাফসীরে লেখেন, জান্নাতে ঠাণ্ডা গরম কোনটাই হবে না। সেখানকার আবহাওয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে। তারপর লেখেন, নিশ্চয়ই জান্নাতের নিজস্ব আলো রয়েছে। রবের নূরানী আলোর কারণে সেখানে চন্দ্র-সূর্যের আলোর প্রয়োজন হবে না। এরপর তিনি বায়হাকীর উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন, শুআইব বিন জাইহান এবং আবুল আলিয়া রহ. (ফজরের নামাজের) সূর্য উদয় হওয়ার আগে লোকালয়ের বাইরে যান। সে সময়ের দৃশ্য দেখে আবুল আলিয়া রহ. বলেন, জান্নাতের অবস্থা এমন হবে। অর্থাৎ এখনকার আবহাওয়া, আলো এবং অবস্থা যেমন, জান্নাতের আবহাওয়া এবং অবস্থাও তেমনি হবে।
তাফসীরে মাজহারী প্রণেতা লেখেন, হযরত আবুল আলিয়া রহ. জান্নাতের আবহাওয়াকে সকাল বেলার আলোর সাথে তুলনা করেছেন, তা প্রকৃতপক্ষে ঠিক হয়নি। কেননা, সকাল বেলার আলো ঝাপসা হয়ে থাকে। যার মধ্যে অন্ধকারের লেশ থাকে। হযরত আবুল আলিয়া রহ. এর উদ্দেশ্য এমন হতে পারে যে, সকাল বেলা যেমন সবদিক থেকে আলো বের হতে থাকে (বিশেষ করে জনবসতি থেকে বের হলে দেখা যায়), এভাবে জান্নাতের আলোও সবদিক থেকে বের হবে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কথা হলো, উপমা সকাল বেলার সময়ের সাথে দেয়া হয়েছে, আলোর সাথে নয়। আবুল আলিয়ার কথার উদ্দেশ্য হলো, যেমনিভাবে সকাল বেলা (সুর্যোদয়ের পূর্বে) এক আকর্ষণীয় এবং ¯িœগ্ধ হাওয়ার সৃষ্টি হয় এবং সর্বদিকে আলো-ছায়ার এক অপূর্ব মিলন ঘটে, কিন্তু এমন আলো হয় না যা দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটায়, ঠিক তেমনি এক অপূর্ব অবস্থা জান্নাতে হবে। আলোকোজ্জ্বলও হবে আবার গাঢ় ছায়াও থাকবে। আলো যত প্রখরই হোক না কেন, ছায়া শেষ হবে না এবং দৃষ্টিরও ব্যঘাত ঘটবে না। আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে সূরা রা’দে ইরশাদ করেন-
‘পরহেজগারদের জন্যে প্রতিশ্রুত জান্নাতের অবস্থা এই যে, তার নিম্নে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। তার ফলসমূহ চিরস্থায়ী এবং ছায়াও। এটা তাদের প্রতিদান, যারা সাবধান হয়েছে এবং কাফেরদের প্রতিফল অগ্নি।’ [সূরা রা’দ : ৩৫]
এ আয়াত দ্বারা সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়ে যায় যে, জান্নাতে সর্বদা ছায়া থাকবে। আল্লাহ তা’আলা এ ব্যাপারে সূরা নিসায় ইরশাদ করেন-
‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, অবশ্য আমি প্রবিষ্ট করাব তাদেরকে জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ। সেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। সেখানে তাদের জন্য থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন স্ত্রীগণ। তাদেরকে আমি প্রবিষ্ট করব ঘন ছায়া নীড়ে।’ [সূরা নিসা : ৫৭]
তাফসীরে ইবনে কাসীর প্রণেতা লেখেন, ¯িœগ্ধ ছায়া এমন যা হবে গাঢ়, আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর।
জান্নাতে শুধু শান্তি সেখানে দুঃখ-কষ্টের নাম নিশানাও নেই
‘আর তারা বলবে- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দূঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের পালনকর্তা ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে বসবাসের গৃহে স্থান দিয়েছেন, তথায় কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না ক্লান্তি।’ [সূরা ফাতির : ৩৪-৩৫]
তাফসীর গ্রন্থ মাআলেমুত তানজিলে রয়েছে, জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করে উক্ত আয়াতের কথাগুলো বলতে থাকবে। তারা এ মর্মে আল্লাহর প্রশংসা করবে, আল্লাহ তা’আলা তাদের দুঃখ-কষ্ট চিরদিনের জন্য দূর করে দিবেন। দুনিয়ায় থাকাকালীন যেসব কারণে দুঃখ-কষ্ট হতো, তার সবই আল্লাহ তা’আলা শেষ করে দিবেন। তাদের চিন্তা ও পেরেশানীর কিছুই থাকবে না। সংসারের চিন্তা থাকবে না, আয়-ব্যয়ের চিন্তা থাকবে না, কোন প্রকার ভয়-ভীতি থাকবে না, অসুখ-বিসুখও থাকবে না। মৃত্যু, কবর, সওয়াল-জওয়াব, আলমে বরযখ, হাশর, মীযান কোন কিছুরই চিন্তা পেরেশানী থাকবে না। এমন কি তাদের প্রাপ্ত নেয়ামত শেষ হওয়া বা ছিনিয়ে নেয়ার ভয়ও থাকবে না। দুনিয়ার মতো ঘর সাজানোর চিন্তা থাকবে না। এবাদত-বন্দেগীর প্রয়োজন হবে না। কোন হুকুম-আহকাম পালনের বাধ্য বাধকতা থাকবে না। শান্তি আর শান্তিউ শুধু থাকবে। আখেরাতের শেষ মঞ্জিলে পৌঁছে সকল দুঃখ-কষ্ট ও মেহনতের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে তারা দারুল কেয়ামাহ (চিরস্থায়ী বসবাসের প্রকৃত বাসযোগ্য স্থান) জান্নাতে প্রবেশ করে মহান আল্লাহর হামদ, সানা ও স্তুতি গাইতে থাকবে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।