হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি বাজার আছে, যাতে সকল জান্নাতী প্রত্যেক জুমার দিন যাবে। যেখানে উত্তরা বাতাস বইতে থাকবে, যা জান্নাতীদের চেহারা এবং কাপড় সুঘ্রাণে ভরে দিবে, তাদের রূপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। সুতরাং তারা খুব সুন্দর হয়ে তাদের স্ত্রীদের নিকট ফিরে যাবে। স্ত্রীরা বলবে, আল্লাহর কসম, আমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পর তোমাদের রূপ সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে গেছে। এরপর তারা বলবে, আমরা তোমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পর তোমাদের রূপ সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। [মুসলিম শরীফ]
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি বাজার আছে, সেখানে কোন বেচাকেনা নেই, তাতে পুরুষ ও মহিলাদের ছবি থাকবে, তা দেখে কোন ব্যক্তি ভাববে, আমার ছবি যদি অমুক ছবির মত হয়ে যেত, (তৎক্ষণাৎ) তার ছবি তেমনি হয়ে যাবে যা সে কামনা করেছে। [তিরমিযী শরীফ]
জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামত আল্লাহর দিদার
হযরত সুহায়েব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি আর কিছু চাও যা আমি তোমাদের দিব? তারা আরজ করবে (আমরা কি চাইব? আপনি আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন) আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করে দেননি? আপনি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাননি? আপনি কি আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তাদের এ জবাবের পর পর্দা উঠিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা আল্লাহ তা’আলার দিদার লাভ করবে। তাদের যা কিছু দান করা হবে তন্মধ্যে ‘আল্লাহর দিদার’ তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মনে হবে। এর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
‘যারা সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ এবং তার চেয়ে বেশি’। [মুসলিম শরীফ]
হযরত আবু রাযীন উকাইলী রা. বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেয়ামতের দিন আমাদের প্রত্যেকেই কি রবকে দেখতে পাবে? (এত বড় ভিড়ের মধ্যে একত্রে সবাই দেখতে) কোন অসুবিধা হবে না তো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, প্রত্যেকেই খুব ভালভাবে দেখতে পাবে। আমি আরজ করলাম, দুনিয়ার মাখলুকের মাঝে তার কোন দৃষ্টান্ত আছে কি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, হে আবু রাযীন! প্রচণ্ড ভীড়ের মধ্যে তোমাদের প্রত্যেকে কি চৌদ্দ তারিখের চাঁদ বিনা কষ্টে দেখে না? আমি জবাব দিলাম হ্যাঁ, দেখে। তিনি বললেন, চাঁদ আল্লাহ তা’আলার একটি সৃষ্টি (যা সবাই এক সাথে কোন কষ্ট এবং বাধা ছাড়া দেখতে পারে), আর আল্লাহ তা’আলা তার ¯্রষ্টা, মহাকুদরতের অধিকারী, তাকে কেন সবাই একত্রে দেখতে পাবে না? [আবু দাউদ]
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাতীরা যখন নেয়ামতের মধ্যে ডুবে থাকবে, তখন হঠাৎ দেখবে, তাদের উপর নূর চমকাচ্ছে, সুতরাং তারা মাথা উঠাবে। দেখবে, তাদের উপর পরওয়ারদেগারে আলম আল্লাহ জাল্লা শানুহু রয়েছেন। তারা দেখছে, এমতাবস্থায় রাব্বুল আলামীন তাদের বলবেন-
‘হে জান্নাতবাসী! তোমাদের উপর শন্তি বর্ষিত হোক।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
‘করুণাময় রবের পক্ষ থেকে বলা হবে সালাম।, উক্ত আয়াতে এ সালামের কথাই বলা হয়েছে। সালামের পর আল্লাহ জাল্লা শানুহু জান্নাতীদের আর জান্নাতীরা তাদের রবকে দেখতে থাকবে। এমনকি আল্লাহ তা’আলা পর্দার অন্তরালে চলে যাবেন আর তাঁর নূর বাকী থেকে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতীরা যখন আল্লাহকে দেখতে থাকবে, তখন অন্য নেয়ামতের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে না। [ইবনে মাজাহ]
হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাতে মর্যাদার দিক দিয়ে সব চেয়ে নি¤œ সে ব্যক্তি হবে, যে তার বাগান, প্রাসাদ, সিংহাসন, বিবি, খাদেম এবং অন্যান্য নেয়ামতসমূহ এক হাজার মাইল দূরত্ব পরিমাণ বিস্তৃত দেখতে পাবে (অর্থাৎ এ সব জিনিস এমন দূরত্ব পরিমাণ বিস্তৃত থাকবে, দুনিয়াতে কোন ব্যক্তি সেগুলো দেখতে বের হলে হাজার বছর পর্যন্ত পথ চলতে হবে)।
মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় মর্যাদার জান্নাতী সে হবে, যে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর দিদার লাভ করবে। এরপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন-
‘সেদিন অনেক চেহারা উজ্জ্বল হাসিখুশি হবে আর আল্লাহর দিকে দেখতে থাকবে।’ [সূরা কিয়ামাহ : ২২-২৩]
এটা সূরা কেয়ামার আয়াত। কুরআনুল কারীমের মাধ্যমে দীদারে এলাহী প্রমাণ করাই এ আয়াত তেলাওয়াত করার উদ্দেশ্য। এক হাদিসে আছে, নি¤œ মর্যাদার একজন জান্নাতী তার রাজ্য দুই হাজার বছরের দূরত্ব সমান স্থানে বিস্তৃত দেখতে পাবে এবং তার শেষাংশ এমনভাবে দেখতে পাবে যেমন দেখতে পাবে কাছের অংশ। [আততারগীব ওয়াততারহীব]
হাদিস শরীফে উচ্চ মর্যাদা এবং নি¤œ মর্যাদার জান্নাতীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহই জানেন এর মাঝে আরো কত স্তরের মর্যাদা রয়েছে এবং কত কত নেয়ামত প্রাপ্ত হবে। সকল জান্নাতীই আল্লাহর দিদার লাভ করবে, কিন্তু সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদার জান্নাতী সেই হবে, যার এ সৌভাগ্য হবে, সে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর দিদার লাভ করবে।
ফায়দা : আল্লাহ তা’আলাকে দুনিয়াতে দেখা যায় না, কিন্তু মুমিনগণ জান্নাতে আল্লাহ তা’আলাকে দেখতে পাবে। তবে কাফের মুনাফিকরা এ মহা নেয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকবে। এর চেয়ে বড় কোন নেয়ামতই নেই। জানা থাকা আবশ্যক, আল্লাহ তা’আলা শরীর এবং আকৃতি থেকে পবিত্র। আল্লাহ তা’আলাকে জান্নাতীরা দেখবে এটা সত্য। এর উপর ঈমান আনা ফরজ, কিন্তু কি অবস্থায় দেখবে জানা নেই।
গুনাহগার মুসলমানদের জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ
বিপুল সংখ্যক মুসলমান, যারা কবীরা গুনাহ করেছে, তারা জাহান্নামে চলে যাবে। তবে এটা আবশ্যক নয় যে, প্রত্যেক কবীরা গুনাহগারই জাহান্নামে যাবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা অনেক গুনাহগারকেই মাফ করে দিবেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করবেন। আবার এও আবশ্যক নয়, প্রত্যেক গুনাহগারকে মাফ করে দিবেন। কেননা হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়, অনেক গুনাহগার মুসলমান জাহান্নামে যাবে এবং শাস্তি ভোগ করার পর জাহান্নাম থেকে বের করে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।
জান্নাত থেকে কেউ বেরও হবে না এবং কাউকে বের করেও দেয়া হবে না, কিন্তু গুনাহগার মুসলমানদের জাহান্নাম থেকে বের করে এন জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। জাহান্নামে শুধু মুশরিকরাই থাকবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
‘আর যারা কুফুরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তারাই হবে জাহান্নামী, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’
বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জাহান্নামের পিঠের উপর পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। আর রাসূলদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম আমার উম্মত নিয়ে তার উপর দিয়ে অতিক্রম করব, সেদিন রাসূলগণ ব্যতীত কেউ কথা বলবে না। তারাও সেদিন শুধু বলবে-
‘হে আল্লাহ! শান্ত রাখুন, শান্ত রাখুন।’ জাহান্নামে সা’দান গাছের (আরবের এক প্রকার কাঁটাযুক্ত গাছ) কাঁটার ন্যায় বড় বড় চিমটা থাকবে। তার বিশালতা আল্লাহ তা’আলাই জানেন। এ চিমটাগুলো লোকদের তাদের বদ আমলের কারণে বেলচার মত উর্ধ্বে নিক্ষপ করবে। এতে কেউ কেউ (পুলসিরাত থেকে জাহান্নামে পড়ে) ধ্বংস হয়ে যাবে (এরা হবে কাফের)। কেউ জাহান্নামে পড়ে আবার নাজাত পেয়ে যাবে (এরা গুনাহগার মুসলমান)। এভাবে যখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের ফয়সালা শেষ করবেন, তখন এর সাক্ষদানকারীদের জাহান্নাম থেকে বের করার ইচ্ছা করবেন। ফেরেশতাদের হুকুম করবেন, যারা আল্লাহর ইবাদত করতো তাদের বের কর। সুতরাং ফেরেশতারা তাদের বের করে আনবে। সাজদার চিহ্ন দেখে তাদের ফেরেশতারা চিনতে পারবে। কেননা আল্লাহ তা’আলা সাজদার চিহ্নের স্থানগুলো জ্বালানো আগুনের উপর হারাম করে দিয়েছেন।
যাদের আগুন জ্বালিয়ে ভুনা করে ফেলবে, জাহান্নাম থেকে বের করে তাদের আবে হায়াতে ঢালা হবে। ফলে তারা এমন সজীব হয়ে যাবে যেমন প্রবাহিত পানি শুকনো গাছ পাতা সতেজ করে তোলে। অর্থাৎ তাদের অবস্থা তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন হয়ে একদম তরতাজা সুর্দশন হয়ে যাবে। [মিশকাত শরীফ]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাবে, তখন আল্লাহ তা’আলা হুকুম করবেন, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ ঈমানও আছে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন। সুতরাং তাকে বের করে আনা হবে। যারা জ্বলে কয়লা হয়ে যাবে তাদের নহরুল হায়াতে (জীবন নদীতে) ফেলা হবে। [বুখারি ও মুসলিম]
হাদিসে আছে, তারা নহরুল হায়াত থেকে মুক্তার মত বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার ফলে অনেক গুনাহগার মুসলমানের গালে ঝলসানোর চিহ্ন থাকবে। আল্লাহ তা’আলা তাদের স্বীয় রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সুতরাং তাদের জাহান্নামী বলা হবে।
এদের হেয় করার জন্য জাহান্নামী বলা হবে না; বরং আল্লাহর মেহেরবানী এবং রহমতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য বলা হবে, যাতে জাহান্নামের কঠোর কষ্টের কথা চিন্তা করে জান্নাতের স্বাদ বেশি উপভোগ করতে পারে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের মধ্যে দুই ব্যক্তি খুব চিৎকার করতে শুরু করবে। আল্লাহ তা’আলা হুকুম করবেন, তাদের বের করে আন। তিনি তাদের বলবেন, তোমরা চিৎকার করছ কেন? তারা আরজ করবে, আমরা এজন্য চিৎকার করেছি, যেন আপনি আমাদের উপর রহম করেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করবেন, অবশ্যই তোমাদের প্রতি আমার রহম হচ্ছে, তোমরা জাহান্নামের যে স্থানে ছিলে সে স্থানে ফিরে যাও। তাদের একজন জাহান্নামে চলে যাবে। তার জন্য আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে শীতল আরামদায়ক করে দিবেন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকবে। সে জাহান্নামে ফিরে যাবে না। আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, তোমাকে জাহান্নামে ফিরে যেতে কিসে বাধা দিল? সে আরজ করবে, আমি আশা করি যখন আপনি আমাদের জাহান্নাম থেকে বের করেছেন, তখন পুনরায় জাহান্নামে পাঠাবেন না। আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন (যাও), তোমাদের আশা পূর্ণ করে দেয়া হলো। অতঃপর উভয়কে আল্লাহর রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হবে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।