কারা জান্নাতের সুঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত থাকবে
হযরত ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যে মুসলমান চুক্তিবদ্ধ জিম্মি কাফেরকে হত্যা করেছে সে জান্নাতের সুঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত হবে। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যাবে সত্তর বছরের দূরত্ব থেকে।
হযরত মাকাল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত হুজুর সা. বলেন, যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তার প্রজা সাধারণের নেতা নিযুক্ত করেছেন, সে যদি তার অধীনদের ভালো কাজের উপদেশ না দেয় সেও জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবেনা। যে ব্যক্তি তার পিতা ব্যতীত অন্য কোনো লোকের সাথে পিতার সম্পর্ক করে সেও জান্নাতের সুঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত থাকবে। [ইবনে মাজা]
আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, পাঁচশ বছর দূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যাবে। কিন্তু পিতামাতার অবাধ্য সন্তান এবং মদ্যপ জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবেনা।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, অনেক নারী পাতলা পোশাক অথবা নামমাত্র পোশাক পরিধান করে থাকে। এ অবস্থায় তাদেরকে উলঙ্গই ধরা হয়। তারা নিজেরা পাপের দিকে ধাবিত এবং অন্যকেও পাপের দিকে ধাবিত করে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেননা আর না জান্নাতের সুঘ্রাণ তারা পাবে। আল্লাহর শপথ! যারা পিতামাতার অবাধ্য, অত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, বৃদ্ধ পাপিষ্ঠ, আর যে ব্যক্তি অহংকারহেতু স্বীয় চাদর সেলোয়ার মাটিতে ছেঁছড়িয়ে চলে সে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবেনা।
হযরত ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যে মহিলা বিনা কারণে স্বামীর নিকট তালাক কামনা করে তার ধারে কাছেও জান্নাতের সুঘ্রাণ পৌঁছবেনা। [আবু দাউদ]
হযরত উকাবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার নিয়ে যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করবে তার জন্য জান্নাত হালাল হবেনা। সে না পাবে জান্নাতের সুঘ্রাণ আর না তা দেখতে পাবে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. নবী কারীম সা. থেকে বর্ণনা করেন, শেষ যুুগে এমন এক গোত্র হবে, যারা কালো খেজাব ব্যবহার করবে। যেমন কবুতরের পাকস্থলি। তারা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবেনা।
আলোকপাত
জান্নাতের ঘ্রাণ না পাওয়ার অর্থ হলো, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। তবে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর করুণা হলে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে। অথবা এ ধরণের নিকৃষ্ট কাজ থেকে দুনিয়াতেই যদি তাওবা করে, আল্লাহর ইচ্ছে হলে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
উল্লেখিত হাদীসসমূহে জান্নাতের দূরত্ব এবং সুঘ্রাণের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে ওগুলো বান্দার আমলের উপর নির্ভর করবে। অথবা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তিনি যতদূর থেকে ইচ্ছা সুঘ্রাণ পৌঁছাবেন আবার ইচ্ছে হলে পৌঁছাবেন না।
জান্নাতে সার্বক্ষণিক বসবাসের বর্ণনা
আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা ভাগ্যবান তারা জান্নাতে প্রবেশ করার পর সবসময় সেখানেই থাকবে। যতদিন পর্যন্ত আসমান যমীন থাকবে। তবে আল্লাহর ইচ্ছা হলে সেটা ভিন্ন কথা, তবে এ কথা সত্য যে, কেউ জান্নাতে প্রবেশ করলে সেখান থেকে আর বের হবে না। [সূরা হুদ-১০]
অন্যত্র বলেন, আমার এই অনুগ্রহ যা কখনও নিঃশেষ হবার নয়। [সূরা ছোয়াদ-৫৪] আল্লাহ বলেন, জান্নাতের ফল ও ছায়া অবশিষ্ট থাকবে।
সূরা হিজরে আল্লাহ বলেন, জান্নাতি লোকদেরকে জান্নাত থেকে বের করা হবেনা। [ সূরা হিজর- ৪৮]
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে নিয়ামতের মধ্যে ডুবে থাকবে। কখনও নিরানন্দ ভোগ করবেনা। সেখানে চিরকালই বসবাস করবে। মৃত্যুবরণও করবে না। [ইবনে কাসীর]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী এবং আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, জান্নাতি জান্নাতে প্রবেশ করার পর একজন আহ্বানকারী আহ্বান করে বলবে যে, তোমাদের জন্য সুসংবাদ যে, তোমরা সুস্থ থাকবে কখনও অসুস্থ হবেনা। তোমরা জীবিত থাকবে কখনও মৃত্যুবরণ করবে না। তোমাদের জন্য আরো সুসংবাদ হলো যে, তোমরা নায-নেয়ামতের মধ্যে ডুবে থাকবে কখনও দুঃখ বোধ করবেনা। সর্বদা যুবক থাকবে কভু বৃদ্ধ হবেনা। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, জান্নাতিদের ডেকে বলা হবে, এ জান্নাত তোমাদিগকে দান করা হয়েছে, তোমাদের আমলের বিনিময়ে। [আরাফ-৪৩]
জান্নাতের রক্ষীর বর্ণনা
আল্লাহ বলেন, আর যারা তাদের রবকে ভয় করে তারা দলে দলে জান্নাতের দিকে যেতে যেতে জান্নাতের কাছকাছি পৌঁছে যাবে এবং তাদর জন্য আগ থেকে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে রাখা হবে। আর রক্ষী ফেরেশতারা তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে বলবে যে, তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। তোমরা সর্বদা পরম শান্তিতে জান্নাতে বসবাস করবে। [ সূরা যুমার-৭৩]
একজন নগন্য জান্নাতির জন্য হাজার খাদেম হবে
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী জান্নাতে যেতে থাকবে এমন সময় সে হঠাৎ করে একটি নূর দেখতে পেয়ে সেজদায় পতিত হবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তোমার কি হলো? সে বলবে, আমার রব কি আমার সম্মুখে প্রকাশিত হননি? তখন তার সামনে একজন পুরুষ দ-য়মান হয়ে বলবে, ইহা আপনার রব নয়, জান্নাতের মহলগুলো হতে একটির ঝিলিক এটি। আর আমি আপনার সেবকদের হতে একজন, আমার মত আরো হাজারো সেবক রয়েছে আপনার সেবায় নিয়োজিত। তারপর লোকটি সাম্মুখপানে যেতে থাকবে এবং একটি নিম্ন মানের জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর জান্নাতি যে কোনো বস্তুর দিকে তাকাবে তার দৃষ্টি সমস্ত জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এই জান্নাতের রাজ্যই হবে শত বছর ভ্রমণের পরিমাণ। [সিফাতুল জান্নাত]
জান্নাতের রাস্তাঘাট
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, এই রাস্তা আমার রাস্তা যা একদম সহজ সরল ও সোজা। সুতরাং এ রাস্তার উপর চলো অন্য কোনো রাস্তায় যেওনা তাহলে সে রাস্তা তোমাদিগকে আল্লাহর রাস্তা থেকে পৃথক করে দেবে। [আনআম-১৫৩]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, একদা নবী কারীম সা. আমাদের সম্মুখে একটি রেখা টেনে বললেন, ইহা আল্লাহর রাস্তা। তারপর হুজুর সা. সে রাস্তাটির ডানে বামে অসংখ্য রেখা টেনে বললেন, এগুলোও রাস্তা। তবে এ রাস্তাগুলোর প্রতিটি দিয়ে শয়তান পথভ্রষ্ট করে। তারপর রাসূল সা. উল্লেখিত আয়াত তিলাওয়াত করেন। হযরত জাবির রা. বলেন, একদা নবী কারীম সা. আমাদের সম্মুখে তাশরীফ এনে বললেন, স্বপ্নে আমি দেখি জিবরাঈল আ. যেন আমার শিয়রে এবং মিকাঈল আ. যেন আমার পায়ের দিকে আছেন। তারা একজন অপরজনকে বললেন, আপনি তার [মুহাম্মদ সা.] জন্য একটি দৃষ্টান্ত দিন। তারপর হুজুর সা. কে উদ্দেশ্য করে বলা হয় যে, আপনি আপনার কান দ্বারা ভালো করে এবং অন্তর দ্বারা মনযোগ সহকারে শ্রবণ করুন। আপনার ও আপনার উম্মতের দৃষ্টান্ত হলো সেই বাদশার ন্যায়, যিনি একটি মহল তৈরী করেছেন। এতে কয়েকটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। তারপর দস্তরখানা বিছানো হয়েছে। তারপর একজন দূত পাঠিয়ে লোকদিগকে খাবারের জন্য আহ্বান করা হয়। সুতরাং তাদের মধ্যে কিছু লোক সে খাবার খেতে সম্মত হলো আর কিছু লোক তা প্রত্যাখ্যান করল। অতএব বাদশাহ হলেন, আল্লাহ তাআলা, মহল হলো ইসলাম, ঘর হলো জান্নাত, দূত হলেন, মুহাম্মদ সা.। সুতরাং যে ব্যক্তি হুজুর সা. এর আহ্বানে লাব্বায়িক বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এবং সেখানে প্রস্তুত রাখা খাবারগুলো আহার করবে। [তিরমিযি, হা.২৮৬০]
জান্নাত এবং জাহান্নামের দৃশ্যাবলি
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর ঝগড়া করলো, জাহান্নাম বলল, আমাকে জালিম ও অহংকারী লোকদের সাথে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ এসমস্ত লোকদিগকে আমার মধ্যে প্রবেশ করাবেন। আর জান্নাত বলল, আমিও কম কিসে, আমার মধ্যেও দূর্বল ও জাগতিক দিক দিয়ে দূর্বল লোকেরা প্রবেশ করবে।
তখন আল্লাহ তাআলা মীমাংসা কল্পে জাহান্নামকে বলেন যে, তুমি আমার আযাব, তোমার সঙ্গে যাকে ইচ্ছা আমি তাকেই শাস্তি দিব। আর জান্নাতকে বলেন, তুমি আমার রহমত, তোমার সাথে যাকে ইচ্ছা তাকেই রহমত দ্বারা পুরু®কৃত করবো। আর কিয়ামতের দিন দোযখের এমন অবস্থা হবে যে, আল্লাহ পাকের কদম মোবারক তাতে না রাখা পর্যন্ত তার পেট ভরার চিন্তাও করবেনা। যখন আল্লাহ তার ভেতর আপন পা রাখবেন, তখন সে বলবে, যথেষ্ট হয়েছে। তখন সে তৃপ্ত হবে, এবং তার এক অংশ অপর অংশের মধ্যে ডুকে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আমালীন কারো উপর জুলুম করবেন না। [বুখারী]
যে সমস্ত দিনে জান্নাত খুলে দেয়া হয়
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন জান্নাত উম্মুক্ত করা হয়। হযরত ইবনে আতিয়া রা. বলেন, আল্লাহ তাআলা জান্নাতুল ফিরদাউসকে স্বীয় পবিত্র হস্তে সৃষ্টি করেছেন। আর একে তিনি প্রত্যেক বৃহস্পতিবার উম্মুক্ত করে বলেন, তুমি আমার বন্ধুদের জন্য তোমার পবিত্রতা আরো বৃদ্ধি করো এবং আমার বন্ধুদের নিমিত্তে তোমার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করো।
ইবনে আতিয়া রা. আরো বলেন, প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ও সোমবার জান্নাতুল ফিরদাউস উম্মুক্ত করা হয়। উহা এমন ব্যক্তিকে দান করা হবে, যে আল্লাহ তাআলার সাথে কাউকে শরীক করে না। আর এমন লোককে দান করা হবে না যে লোক ভাইয়ের সাথে বৈরিতা রাখে।
আল্লাহ বলেন: যারা আল্লাহকে ভয় করেছে তারা দলে দলে জান্নাতের দিকে দ্রুত যেতে থাকবে। যেতে যেতে তারা জান্নাতের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
[যুমার-৭৩]
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।