এক ছাত্রের কাছে শিক্ষক জানতে চাইলেন- কি এমন জিনিস, যার একেক জায়গায় একেক নাম? ছাত্রের জবাব- ‘চুল যখন মাথায় গজায় তখন চুল। ঠোটের উপর গজালে গোঁফ, মুখে গজালে দাড়ি। বুকে গজালে লোম আর……
ছাত্রকে থামানোর জন্য শিক্ষক মশাই কি বলেছিলেন তা অনেকেরই জানা। ঐ শিক্ষকের মতো আমরাও আর নিচে নামতে চাই না। বরং আমাদের আলোচনা মাথার চুল নিয়েই।
চুল কি? স্রেফ মৃত কোষ। চুলের গোড়া যা কিনা চামড়ার তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে, সেখানে থাকে একদল সজীব ও সক্রিয় কোষ। এদের বলা হয় হেয়ার ম্যাটিক্স এবং মেলানোসাইট। প্রথমতঃ বৃদ্ধিকালে ম্যাটিক্স কোষগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কেয়াটিন নামক প্রোটিন তৈরি করে শক্ত হয়। দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে এগুলো চামড়ার বাইরে চলে আসে। মেলানোসাইট কোষগুলো মেলানিন নামের একরকম কালো রঙের প্রোটিন তৈরি করে। এই মেলানিন কিছু কোষ সজীব হলেও বাকিগুলো মৃত। বৃদ্ধির স্তর ছাড়াও চুলের রয়েছে স্থিতিকাল ও পরিণতিকাল। এক সময় নতুন চুল সারা বছরই কিছু না কিছু চুল পড়ে। দেহের বিভিন্ন স্থানের চুলের দৈর্ঘ্য ও ধরন আসলে জেনেটিক ব্যাপার।
এসব প্যাচাল বাদ দিলে যা থাকে তা হলো, চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য নির্ভর করে প্রধানতঃ দেহের স্বাস্থ্যের উপর। দেহের পুষ্টি ও হরমোন গ্রন্থির কাজকর্ম ঠিক থাকলে চুলও ঠিক। তাহলে চুল নিয়ে কেন এতো চিন্তা? চিন্তা এ জন্য যে আদিকাল থেকেই চুলকে মানবদেহের সৌন্দের্যের একটি অংশ হিসাবে ভাবা হয়। চুলের ফেটিং ঠিক করার চেষ্টাটা তাই চিরন্তন। বাইরের ময়লা-ধুলা-বালি এসব চুলে আটকে যায়। তাই কয়েকদিন অন্তর মাথাটা ভালোভাবে পরিস্কার করে ধুয়ে ফেলা দরকার। এই চিন্তা থেকে শ্যাম্পুর উদ্ভব। তা এই শ্যাম্পুতে কি থাকে? প্রধানতঃ পরিষ্কারক বা ডিটারজেন্টের ফেনা তৈরি করার ক্ষমতা খুব কম বলে কোনো কোনো প্রস্তুতকারক এতে কিছু রাসায়নিক যোগ করে। মুশকিলটা হচ্ছে, মাথার ময়লা পরিষ্কার হওয়ার সঙ্গে ফেনার কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও থাকে তথাকথিত খুশকিনাশক রাসায়নিক যেমন- এলানটয়েন, ট্রাইক্লোরো-কার্বানিলাইড ইত্যাদি। আর বিজ্ঞাপনের কথা সত্যি হলে থাকেÑ প্রোটিন, ডিম, লেবু ইত্যাদি। চুলের পুষ্টিটা হয় হেয়ার ম্যাট্রিক্স-এর সঙ্গে যুক্ত রক্তবাহী নালি থেকে কাজেই ডিম কিংবা লেবু কোনোটাই সে যে কম্পানিই বানাক, চামড়ার নিচে পৌঁছে না। আর যদি পৌঁছাতেও কেউ সক্ষম হয়, তাহলেও এটা বুঝা উচিত যে, চুলের কোষ সরাসরি প্রোটিন ভক্ষণ করতে পারে না।
কন্ডিশনার যুক্ত কথাটা কি? এর মানে হলো শ্যাম্পুতে থাকে কোন চর্বি জাতীয় পদার্থ। এই চর্বি জাতীয় পদার্থগুলো করে কি? কম্পানীগুলোর দাবি হলো, মাথা চুল ধুলে চুলের সজীব ও তেলতেলে ভাবটা কিছুটা মাত্রায় হলেও চলে যায়, আর এগুলো তা ফিরিয়ে আনে। প্রশ্ন হচ্ছে কি ভাবে? আপনি যখন মাথা ধুয়ে ফেলেন, তখন সবকিছুই ধুয়ে যায়। তাহলে?
সবশেষে খুশকি? চামড়ার মৃতকোষ হলো খুশকি। চামড়ার উপরের কোষ মরে যাওয়া ও নিচ থেকে নতুন কোষ তৈরি হওয়া একটি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় ঘটনা। অনেকের ক্ষেত্রে এটা অনেক বেশীহারে ঘটে। এদের শরীরে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ডের নিরসণও বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের মাথায় ময়লা জমার হারটাও বেশী। সমাধানও সহজ-দু’এক দিনের ব্যবধানে মাথা পরিষ্কার করা। সাধারণতঃ খুশকিতে কোনো জীবাণু থাকে না। কাজেই জীবানুনাশক ব্যবহার করার দরকার নেই।
তাহলে মানুষ কেন শ্যাম্পু ব্যবহার করে? গড়পড়তা উত্তরগুলো টিভি বিজ্ঞাপন দেখলে পাওয়া যাবে, তবে সাধারণভাবে এটা মনে রাখা দরকার যে, শ্যাম্পু দিয়ে চুলের গোড়ায় কোনো ‘ভিটামিন’ পৌঁছানো যায় না। খুশকি দূর করার কোনো ‘শ্যাম্পু মাহাত্ম’ নেই। এটাই সত্য, এটাই বাস্তব। পুনশ্চঃ অবশ্য মাথার চুল পরিষ্কার করার জন্য কোনো শ্যাম্পু ব্যবহার করতে কোনো আপত্তি নেই, থাকার কথাও নয়। যা কিছু সেখানে থাকুক না কেন, ডিটারজেন্টতো থাকে। সেটা মাথার চুল পরিষ্কার করে। কিন্তু চুলের ধরন দেখে বাহারি শ্যাম্পু না কিনেও এটি করা যায় যে কোনো ভাল সাবান ব্যবহার করে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।