
সেচ দেওয়া সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমি তেমন কোনো ভুতের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইনি। আমি যে অভিজ্ঞতার কথা বলতে যাচ্ছি সেটা আমার মায়ের কাছ থেকে শোনা। এটা আমার দুঃসম্পর্কের এক মামার সাথে ঘটেছিল। আমার সেই মামার বাড়ি হল হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায়। তাদের অনেক জমি আছে।
সেই জমিগুলোতে তারা বোরো মৌসুমে ধান চাষ করেন। সেই জমিগুলোতে সেচ দেওয়ার জন্য তারা কোনো (সিলেট অঞ্চলে একরকম কাঠের তৈরি যন্ত্রের সাহায্যে সেচ দেওয়া হয়। এটা দেখতে অনেকটা ছোট নৌকার মত) দিয়ে সেচ দিতেন কোনো এক সময়। বর্তমানে মেশিনের সাহায্যে সেচ দেন।
তো, কোনো এক বোরো মৌসুমে প্রতিদিন মামারা সারাদিন ক্ষেতে কাজ করে বিকাল বেলার দিকে বাড়িতে ফিরে আসেন। যথারীতি তারা জমিতে সেচ দিতে ভুল করেননি। পরের দিন সকালে তারা কাজে করতে ক্ষেতে গিয়ে দেখেন, সমস্ত জমি শুকনো এবং ক্ষেতের আলের এক অংশ কাঁটা। তারা সন্দেহ করলেন কেউ শত্রুতাবশতঃ তাদের আল কেটে দিয়েছে। কিন্তু এমন করে আরও কয়েকদিন হল।
এবার মামাদের মধ্যে যিনি বড়, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন একরাত তিনি ক্ষেতে কাটাবেন। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। কথামত একরাতে তিনি জমির একদিকে মাচা বেঁধে সেখানে পাহারায় বসলেন। অনেক রাত হল কিন্তু তিনি কিছুই লক্ষ্য করলেন না। এভাবে রাত কাটতে লাগল।
যখন রাত প্রায় ৪ টা হল, হঠাৎ তিনি চাঁদের আলোয় দেখলেন কে যেন ওদের জমির আল ভাঙছে হাত দিয়ে। সেটি দেখতে মানুষের মত ছিল কিন্তু তার মুখ তিনি দেখতে পেলেন না। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেটার নিকটে গেলেন এবং বললেন কেন সে আল ভাঙছে। কিন্তু সে কোনো জবাব দিল না।
এভাবে তিনি অনেক সময় তাকে একই কথা বললেন, কিন্তু সে কোনো উত্তর দিল না। শেষে মামা রেগে সেটার সাথে হাতাহাতি শুরু করে দিলেন। মামার সাথে সেই টাও ঝগড়া শুরু করে দিল। অনেক সময় যাবত মারামারি চলছিল। শেষ যখন সূর্যোদয়ের সময় আসল, তখন হঠাৎ সেটা ঝগড়া থামিয়ে মামার সামনে সে তার চেহারা দেখাল।
মামার ভাষ্যমতে, তার চেহারার মধ্যে দুটি চোখ এবং মুখ ছাড়া সবটাই কালো অন্ধকার ছিল। সে তখন মামাকে বলল, “আমিই তোর জমির পানি ছেড়ে দিতাম। এখন তুই আমাকে যুদ্ধে হারিয়েছিল, তাই তোকে আমি কথা দিচ্ছি, যতদিন পর্যন্ত এই জমিতে চাষাবাদ করবি, ততদিন পর্যন্ত আমি নিয়ে এই জমিতে সেচ দিয়ে যাব।” এই বলে সেই দেওটি হাওয়া হয়ে গেল।
পাঠকগণ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস আপনাদের কাছে। তবে আমি বলি, আজও মামাদের জমিতে পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। তারা যখন কাজে যান, তারা দেখতে পান, তাদের জমি কেউ আগেই সেচ দিয়ে রেখেছে।