বাগদাতের খলিফা ছিলেন তখন হারুনুর রশীদ। ন্যায্য দাবি বিবেচক ইনছাপগার বলে তার সারা বাগদাতে খ্যাতি ছিল।একবার এক কাঠুরে গাধার পিঠে কাঠের বোঝা চাপিয়ে শহরে যাচ্ছিল।সে গুলো বিক্রি করার পথে একটা নাপিত তাকে ডাকল।বাড়ির রান্নার কাজের জন্য তার একটা নাকড়ির দরকার ছিল।কাঠুরের সাথে তার দামদস্তর হলো।কাঠুরে গাধার পিট থেকে কাঠ নামিয়ে নাপিতের দোকানের সামনে রেখে দাম চাইল।নাপিত বলল, গাধার পিট থেকে এখনও সব কাঠ নামেনি।গাধার পিঠের খাচাতাও তো কাঠের তাই এটাও নামাও।তোমার সঙ্গে গাধার পিঠের সব কাঠই কেনার কথা হয়েছে।
কাঠুরেঃঐ খাঁচাতো কাঠ রাখার জন্য।ওটাতো বিক্রি হয় না।
নাপিতঃতা আমি জানি না।গাধার পিঠের সব কাঠ আমি কিনেছি।ওটা না দিলে আমি টাকা দেব না।
এনিয়ে দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে গেল।ঝগড়া থেকে প্রায় হাতা হাতি হওয়ার উপক্রম হল।লোকজন জমা হয়ে গেল।কাঠুরেকে বলল,তুমি বরং হারুনুর রশিদের কাছে যাও।তিনি সঠিক বিচার করে দিবেন।সে মতে কাঠুরে গেল খলিফার কাছে নালিশ জানাতে।খলিফা সব কথাশুনে একজন পেয়াদাকে পাঠিয়ে দিলেন নাপিত কে ডাকতে।তার কথা তিনি মন দিয়ে শুনলেন।সব শুনে খলিফা বললেন,নাপিত ঠিকই বলেছে।গাধার সব কাঠই তার প্রাপ্য।কি আর করা যায়।বাধ্য হয়ে খলিফার বিচার মেনে নিয়ে কাঠুরে গাধার পিঠ থেকে খাঁচাটা খুলে নাপিত দিয়েদিলেন,কাঠুরে সে দিনের মতো চলে গেল।কিন্তু নাপিতের উপর তার রাগ থেকে গেল।
কাঠুরে ভাবতে লাগল কি করে নাপিত কে শিক্ষা দেওয়া যায়।ভাবতে ভাবতে একদিন সুযোগ এসে গেল।হঠাৎ একদিন কাঠুরে গিয়ে হাজির নাপিতের সেলুনে,তার পর বলল, আমি আর আমার এক সঙ্গী হাজামত করাবো কত নিবেন?দুজনে এক সঙ্গে হাজামত করালে কমনিব তো?নাপিত কম করে ওকে যা লাগবে বলে দিল।এবার প্রথমে কাঠুরে তার চুলদাড়ি কাটলো।তার পর চুলদাড়ি কাটা হলে তার চুল কাটা শেষহলে নাপিত ভাড়া দিল,তোমার সঙ্গে কে ডাকো তাড়াতাড়ি।ওরটা শেষ করে আমি বাড়ি যাব খেতে।
কাটুরে তখন সেলুনের বাহিরে একটা খুটিতে বাঁধা তার গাধা কে খুলে নিয়ে সেলুনের ভিতর ঢোকাতে গেল।নাপিত তাহা দেখে হ্যাঁ হ্যাঁ করে তেড়ে এল।আরে করো কী?দোকানের মধ্যে গাধা ঢোকাও কেন?কাঠুরে আরে ওটা তো আমার সঙ্গী।এরই হাজামত করে দীতে হবে তোমাকে।
নাপিতঃআমি মানুষের হাজামত করি।জানোয়ারের নয়।এত সব বুঝি না।তোমার কাছে সে জানোয়ার হতে পারে আমার কাছে সে সঙ্গী।তাছাড়া তোমার সাথে আমার কথা হয়েছে দরদামও ঠিক হয়ে গেছে।এখন তো সব বললে চলবে না,দাও, এর হাজামত করে দাও।শুরু হলো ঝগড়া।কি প্রচণ্ড ঝগড়া।যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা।
হয় লোক জড়ো হয়ে উভয়ের মাঝে প্রাচির হয়ে দাঁড়ালো।তাতে কি হবে বরং মানব প্রাচীর ভেঙ্গে এক জন আরেক জনের উপর পড়ার উপক্রম।
লোকেরা নাপিত কে বলে খলিফার কাছে যাও।তিনি সুবিচার করে দিবেন।নাপিত গেল,খলিফা সব শুনে পেয়াদাকে পাঠিয়ে কাঠুরেকে ডেকে আনালেন।কাঠুরে বলল,হুজুর!ওর সাথে আমার আগে কথা হয়ে গেছে।এখন ও বলে হাজামত করতে পারবে না।সব শুনে খলিফা এবার রায় দিলেন কাঠুরের পক্ষে।বললেন,গাধা ছাড়া কাঠুরের কেউ নেই।ওটাই ওর সঙ্গী।
কথা যখন দিয়েছ ওর হাজামত করে দীতে হবে। তার পর তুমি তোমার পয়সা পাবে।এবার আর নাপিতের কিছুই বলার থাকল না।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দোকানের বাহিরে গিয়ে গাধার হাজামত করতে লাগল।এভাবেই সে দিন খলিফার সুবিচারে অটি চালাক নাপিত শিক্ষা পেল এরপর নাপিত আর কাউকে ঠকানোর চেষ্টা করে নি।