চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করুন তো, কোনো স্মৃতি উঁকি দিচ্ছে মনে? হয়তো আপনার গত বছরের জন্মদিনের কথাটাই মনে পড়ছে, অথবা শেষ ছুটিতে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মজার ঘটনাগুলো মনে পড়ছে। খুব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই বেশি মনে আসছে, তাই না? এবার আর একটু চেষ্টা করে দেখো তো, আরও পুরনো স্মৃতি মনে করতে পারো কিনা। সম্ভবত বিগত চার-পাঁচ বছরের স্মৃতিই ঘুরেফিরে আসবে তোমার মনে। এর আগের স্মৃতি খুব একটা মনে আসবে না কিন্তু। বড়দের কথা শুনে আর ছোটবেলার ছবির অ্যালবাম দেখলে হয়ত আরও কিছু কথা মনে পড়তে পারে। এর বেশি পেছনের কথা মনে করা কিন্তু বেশ কঠিন। এটা কেন হয় জানো? কেন আমরা অনেক আগের ঘটনা খুব বেশি মনে রাখতে পারি না? বিশেষ করে আমাদের জন্মের সময় আর তার পরের কয়েক বছরের কথা একদমই মনে থাকে না? বিজ্ঞানীরা এ ঘটনাকে ‘চাইল্ডহুড অ্যামনেসিয়া’ বলে অভিহিত করে থাকেন।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড সর্বপ্রথম এ ব্যাপারটিকে ‘ইনফ্যান্টাইল অ্যামনেসিয়া’ বলে নাম দেন, পরবর্তীকালে তা ‘চাইল্ডহুড অ্যামনেসিয়া’ নামে সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। ফ্রয়েড দাবি করেন, মানুষ অবচেতন মনে অতীতের ঘটনার কিছু অংশ নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে মনে করার চেষ্টা করে। ১৮৯৯ সালে ফ্রয়েড তাঁর কিছু রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে এ তত্ত্ব দেন। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে এক শতাব্দীরও বেশি সময়। বিজ্ঞানীরা আজও এই চাইল্ডহুড অ্যামনেসিয়ার সঠিক কারণ বের করতে পারেননি। গত ২০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বড় মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা ছেড়ে শিশুদের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করছেন, যেন শিশুদের মনে রাখার ক্ষমতা নিয়ে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। সে গবেষণাও জন্ম দিয়েছে নতুন অনেক প্রশ্নের। অনেকদিন ধরে গবেষকরা বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের মনে রাখার ক্ষমতা জন্মের পর থেকে ৩ বছর তেমন একটা ভালো থাকে না। কিন্তু যখন বয়স তিন বছর হয়ে যায় তখন তার মনে রাখার ক্ষমতা খুব দ্রুত উন্নত হতে থাকে।
আলোকচিত্রঃ মেজবাহ-উল-আজীজ অবশ্য মনোবিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন তিন থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিশক্তি থাকে। বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর তার অবচেতন মন অজান্তেই স্মৃতি ধারণ করে। প্রথম বছরেই তার অনেক ধরনের শারীরিক আর মানসিক পরিবর্তন ঘটে আর তিন বছরের ঘটনাগুলো কোনো তথ্য ধরে রাখে না, তাই মানুষ জন্মের কথা মনে রাখতে পারে না। কিন্তু কেন ঘটে এ ঘটনা? আর কী কী পরিবর্তনই বা হয় বাচ্চাটির প্রথম বছরে? আর আমরা শিশু অবস্থায় স্মৃতি ধরে রাখতে পারলে কেন বড় হয়ে পারি না? এটা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে শিশু অবস্থায় আমাদের মস্তিষ্কের এনকোডিং।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।