“জঙ্গে জামাল” সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বানী
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আজওয়াযে মোতাহহারাত কে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের মধ্য হতে যে “লাল উট ওয়ালী” হবে। “হওব” এর কুকুরগুলো তার উপর চিৎকার করবে। তার চারপাশে বহু লোক হতাহত হবে। আর সে নিজে মরতে মরতে বেঁচে যাবে।
হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) এর মধ্যে “জঙ্গে জামাল” নামে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাতেই রাসূলে পাক (সাঃ) এর উক্ত ভবিষ্যদ্বানীটি প্রতিফলিত হয়েছে। হযরত আয়েশা যে উটের উপর সওয়ার হয়ে হওবের নিকট গমন করেন, তার বৃত্ত ছিল লাল। সেখানে বস্তীর কুকুরগুলো চিৎকার করল এবং হওবের নিকট দুদলের সংঘর্ষে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটল। হওব ইরাকের একটি জলাশয়ের নাম।
হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত আয়েশা (রাঃ) এর মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের নিষ্পত্তি করে উভয়ের মধ্যে সন্ধি চুক্তি স্থাপনের উদ্দেশ্য একটি আলোচনা বৈঠকের সময় নির্ধারন করা হল। কিন্তু হযরত ওসমান (রাঃ) এর হত্যা কারীরা কিছুতেই এটি কামনা করছিল না যে, তাদের মধ্যে সন্ধি হোক। সুতরান আলোচনার নির্দিষ্ট দিনের পূর্বরাতে তারা পরিকল্পিত ভাবে এক দলের বিরুদ্ধে অন্য দলকে ক্ষেপিয়ে তুলার উদ্দেশ্যে উভয় দলের নিকট গিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করল এবং তারা নিজেরাই উভয় দলের অবস্থান হতে পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করতে লাগল। দুবৃত্তরা হযরত আয়েশার বাহিনীতে প্রচার করে দিল যে, হযরত আলী (রাঃ) বিদ্রোহ করেছে, আর আলী (রাঃ) এর দলের ভেতর প্রচার করে দিল যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) বিদ্রোহ করেছে, আর আলী (রাঃ) এর দলের ভেতর প্রচার করে দিল যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে।
এহেন ষড়যন্ত্রের মূল নায়ক ছিল আব্দুল্লাহ বিন সারা। ঘটনাক্রমে হযরত আয়েশা (রাঃ) পানির নাম ভবিষ্যদ্বানীটি হযরত আয়েশা (রাঃ) – এর স্বরূণ হল। সাথে সাথে তিনি ফিরে যেতে উদ্যত হলেন। কিন্তু মারওয়ান হযরত আয়েশাকে বিভিন্ন প্রমাণাদি দ্বারা বুঝাতে চেষ্টা করল যে, এ পানির নাম হওব নয়। এসুযোগে হযরত আয়েশার প্রতিপক্ষ অগ্রসর হয়ে তার উটের পায়ের রগ কেটে দিল। ফলে উটের উপর থেকে হযরত আয়েশার আসন মাটিতে পড়ে গেল। হযরত আয়েশাকে তার ভাই মোহাম্মদ বিন আবূ বকর তথা হতে নিয়ে এলেন। এ যুদ্ধে হযরত তালহা এবং হযরত জোবায়ের (রাঃ) হযরত আয়েশার পক্ষে ছিলেন। মূলত হযরত ওসমান (রাঃ) এর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হযরত আলী এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) এর মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে তা দুঃখ জনক ভাবেই সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নেয়।
মোট কথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এ মুযিযাপূর্ণ ভবিষ্যদ্বানীটি বাস্তবতায় রূপ নিয়েছিল। (আবূ নাইম)