ছোট্ট তানিশা

ছোট্ট তানিশা, আজ খুব খুশি । আজ সে তার বাবা মায়ের সঙ্গে শপিং করতে যাবে, তার জন্য জামা কিনতে;কল্পনার জামা! ঈদ কিংবা পুজোর জন্য নয়।নিতান্তপক্ষে মনের খায়েশ পূরণের জন্য। রূপকথার গল্পে পরীরা যেমন জামা পড়ে ঠিক তেমন জামা কিনতে। ছোট্ট তানিশা ধনী বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যাসন্তান।তাঁর এতটুকুন জীবনে কোনকিছুর কমতি নেই;কিন্তু নিজের বাবা-মায়ের আদরটাই খুঁজে পায়না তানিশা। একজন কাজের লোকও রাখা আছে সর্বদা তাঁর খেয়াল রাখার জন্য। বাবা তার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার আর মা তিনি তো ফ্যাশন ডিজাইনার। দু’জনের কারোই দু’মিনিট নিশ্বাস ফেলারও সময় নেই।
তানিশা তাদের নিজেদের সন্তান হলেও তাদের চেয়ে কাজের মহিলা রানু বেগমের কোলে-পিঠে আর আদর-যত্নে এত বড় হয়েছে। কাল তানিশাকে তার মামনি ফোনে প্রমিস করেছে,আজ তানিশার পছন্দের জামা কিনে দিবে। রাত দশটা। ঘড়ির কাটার শব্দে পড়ার টেবিলে মন বসছে না ছোট্ট তানিশার।মনে মনে ভাবছে,এই বুঝি তার মামনি এলো;এই বুঝি বাবা এলো ! রানু বেগম ছোট্ট তানিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকলেন, “মাইয়্যা, ক’হটা খাইয়া লও” ‘না, আমি খাবো না! মামনি যখন আসবে তখন খাবো।’ “মাগো, তোমার মামনির আইতে অনেক দেরি অইবো,তুমি খাইয়া ঘুমায় থাকো।কাইল সকালে কিন্তু ইস্কুলে যাইতে হইবো।” ‘নাহ….নাহ….নাহ। আমি এখন খাবো না।’ দৌঁড়ে চলে গেলো তানিশা।
দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে তানিশা পড়ার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলো। তানিশার বাবা-মা ফিরলো রাত দেড়টায়,তানিশাকে তার বাবা খাঁটে শুয়িয়ে রেখে কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো। মা এসে তানিশার কাঁধের নিচে বালিশটা ঠিক-ঠাক করে দিয়ে চলে গেলেন। অবশ্য, যাওয়ার আগে তানিশার ছোট্ট কপালে চুমু খেয়ে নিলেন। তানিশা একটু নড়ে-চড়ে  উঠলো। রূম থেকে বের হওয়ার আগে আরেকবার তানিশার দিকে তাঁকিয়ে  লাইটটা অফ করে তার মা’ও চলে গেলেন। সকালে তানিশা চোখ খুলতেই দৌঁড়ে বাবা-মায়ের রুমে পৌঁছলো কিন্তু বাবা-মা রুমে নেই। অফিসের উদ্দেশ্যে তাঁরা সাত-সকালে বেরিয়ে গেছেন। রানু বেগম তানিশার মাথায় হাত বুলিয়ে আদরের স্বরে বলতে থাকলেন “তোমার মায় কইছে কাইলকা তোমারে নিয়া জামা কিন্না আনতে যাইবো, এখন চলো মুখ ধুইয়া নাস্তা খাইয়া লইবা।
” ‘অ্যা অ্যা, না….আমি এক্ষুণি মামনির সাথে কথা বলবো,আমি আজই চাই আমার পরী জামা!’ “তানিশা আম্মু না ভালা;তারাতারি খাইয়া লও তাছাড়া ইস্কুলের দেরি হইয়া যাইবো।” ‘তুমি মামনিকে ফোন করো,আমি এখন কথা বলবো।’ “না না….না! আইজকা ফোন করতে মানা করছে,আইজ জরুরী এক মিটিং-এ আছে তোমার আম্মা।” ‘তুমি ফোন দাও বলছি,না হলে আমি স্কুলে যাবোনা।’ “কি ঝামেলা। আচ্ছা,এই লও। বকুনি খাইলে কিন্তু আমি কিছু জানিনা।” ফোনের রিং হওয়ার সাথে সাথে বুকের ভেতরে ধকধক করে উঠছে ছোট্ট তানিশার,অনেকক্ষণধরে রিং হওয়া পর ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করা হলো- “হ্যালো….” ‘হ্যালো, মামনি! তুমি আমাকে না বলে চলে গেলে কেনো? তুমি কাল না বলেছিলে আমাকে আজ শপিং এ নিয়ে যাবে…!’ “ওহ মামনি, আজ কাজের খুব চাপ। কাল নিয়ে যাবো। হ্যা,এখন রাখি” ‘না….না….না,আমি কিচ্ছু জানিনা। আমি আজই যাবো।’ মোবাইলটা খট করে কেঁটে গেলো। বাবার নাম্বারে ফোন দিতেই, বাবা ফোন রিসিভ করলেন- ‘হ্যালো বাবা, আমার জামা !’ “আচ্ছা,আমি রাতে কিনে নিয়ে আসবো। এখন রাখি…” ‘আব্বু,না,আমার পছন্দে কিনবো;আমাকে নিয়ে যাবে।’ “তোমার মমকে ফোন দাও ” ‘দিয়েছিলাম।
বলেছে, কাল নিয়ে যাবে! কিন্তু, আমি আজকেই মার্কেটে যেতে চাই” ‘তানিশা,এতো জেদ করতে নেই। যাও স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে,আর আজ আমারও একটু পর ইমপরটেন্ট একটা মিটিং আছে…সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি…ওকে? গুড গার্ল। গো ফার্স্ট এন্ড গেট রেডি,লাভ ইউ।’ তানিশা কোনো কথা না বলে গাল ফুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো। রানু বেগম শত চেষ্টার পরেও কিছু খাওয়াতে পারলো না তানিশাকে,না খেয়েই স্কুলে চলে গেলো তানিশা।বিকেলে বাড়ি ফেরার পর তানিশা একা রুমে বসে ড্রইং করতো কিন্তু আজ তার ড্রইং করতে ভালো লাগছেনা। আনমনে জানালায় দাঁড়িয়ে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলো আর পরীদের কাছে বাবা-মায়ের নামে নালিশ করতে লাগলো- ‘জানো তোমরা, আব্বু-আম্মু আমাকে একটুও ভালোবাসে না। কত করে আব্বু-আম্মুকে বললাম, আমাকে তোমাদের মতো জামা কিনে দিতে কিন্তু মামনির তো সময়ই নেই। সারাদিন কাজ আর কাজ,বাবাও আমাকে ভালোবাসেনা; তুমি ওদের খুব করে বকে দিও,হ্যা…!’ তানিশার ক্লান্ত এ অশ্রুসিক্ত দু-চোখ।
সারাদিন না খাওয়াতে ঘুমের কোলে ঢলে পরলো তানিশা। চোখ যখন খুললো চারিদিক ঝাপসা কিছু মানুষের উপস্থিতি বুঝা যায়। ঘুমের তন্দ্রা কাটতেই বুঝতে পারলো মামনি তানিশার মাথায় হাত বুলাচ্ছে,বাবা পাশে দাড়িয়ে আছে। রানু বেগম দরজার পর্দা ধরে চিন্তিত চোখে তাকিয়ে আছে,তানিশার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে….! শহরের নামকরা ডাক্তার আনানো হয়েছে।  ডাক্তার সাহেব তানিশাকে দেখে কিছু ঔষধ লিখে দিলেন;ইনজেকশনও দিয়ে দিলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “হসপিটালে যত দ্রুত সম্ভব এডমিট করুন ।’ তানিশার বাবা আতঙ্কিত কন্ঠে “কোন কি দুঃসংবাদ,ডাক্তার?” “ইয়েস,মিঃ চৌধুরী। তানিশা কনটেইনস টায়ফোয়েড। এন্ড সি ইজ নাউ ভেরি উয়িক…! মনে হচ্ছে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া হয়নি।” “ওকে,ডাক্তার খান। আমি এখনই ওকে হাসপাতালে এডমিট করার ব্যবস্থা করছি।” ডাক্তার চলে যাওয়ার পর তানিশার বাবা উত্তেজিত কন্ঠে রানু বেগমকে দোষারোপ করে। “সারাদিন, কি করো ? মোটা অঙ্কের টাকা দেই তানিশার খেয়াল রাখার জন্য,মেয়েটা না খেয়ে পরে থাকে কোনো খবরই নেই!” রানু বেগম কাঁদো-কাঁদো কন্ঠে বলতে থাকলেন- “স্যার আমি কইছিলাম কিন্তু, মাইয়্যাডা জামার লাইগা মন খারাপ কইরা সারাদিন খায় নাই কিছুই।” “তাহলে তুমি কি করলে? খাইতে চাইলোনা বলে না খাইয়েই রাখলে ওকে…!” “বিশ্বাস করেন স্যার,সত্যিই আমি অনেক সাধছি।
” “তোমার আর প্রয়োজন নেই,তুমি এ মাসের বেতন নিয়ে কেঁটে পরো,গেট লস্ট।” রানু বেগম চোখের পানি শাড়ির আঁচলে মুছতে মুছতে চলে গেলো। তানিশার মা চিন্তিত হয়ে বললেন- “এ কি করেছো তুমি! রানু চলে গেলে তানিশাকে কে দেখবে? এখন নতুন ন্যানি কোথায় পাবো!’ “বর্তমানে টাকা হলে সবই হয় চিন্তা করোনা।” “তা না হয় বুঝলাম কিন্তু….ও কি থাকতে চাইবে নতুন লোকের কাছে?” “ওহ্,কা’মন সায়রা…ডোন্ট বি সিলি ও এখন বড় হয়েছে,আস্তে আস্তে মেনে নেবে সবকিছু…এখন চলো জলদি ওকে এডমিট করিয়ে অফিসে যেতে হবে জরুরি মিটিং আছে।” তানিশাকে হসপিটালে ভর্তি করা হলো।
বাবা আগের মতোই বিজি শুধু মা পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে তানিশার পাশে ছিলো। পাঁচদিন পর তানিশা মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে বাড়ি ফিরে এলো। কিন্তু আজ রানু বেগম চলে যাবে, যাবার আগে তানিশাকে জড়িয়ে হাঁউ-মাঁউ করে কাঁদলো, তানিশার চোখের অশ্রুও থেমে ছিলোনা। তানিশার কপালে চুমু দিয়ে রানু বেগম চলে গেলো। কাল থেকে তানিশার জীবন সেই আগের মতোই চলবে,পার্থক্যটা কেবল রানু-মা’র যায়গায় অন্য কেও। তানিশার মা রীতিমত অফিসে যাওয়ার আগে তানিশার সাথে দেখা করতে এলো, যাবার আগে নতুন ন্যানির কাছে তানিশাকে সঁপে দিয়ে গেলো। তানিশা নিশ্চুপ,জানালার ফাঁকে আজও তাকিয়ে আছে। আজ তানিশার জামা কেনার জেদ ধরেনি; হয়তোবা চাপা কোনো অভিমানে! নতুন ন্যানি ধপাস করে টেবিলে খাবারে প্লেট রাখলো।- “এই মেয়ে জলদি সব খেয়ে নাও । মাত্র পাঁচ মিনিটে শেষ করবে সব।” তানিশা চুপটি করে বসে জানালায় তাকিয়ে রইলো। আজ রানু-মা’র কথা খুব করে মনে পরছে , রানু-মা কত পরীর গল্প,রাজকুমারীর গল্প করে খাইয়ে দিতো। কত রানু-মা’র কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে তানিশা।রানু-মা কখনোই বকুনি দিতোনা তাকে। নিজেকে আজ বড্ড বেশি অসহায় মনে হচ্ছে তানিশার।
“একি মেয়ে! এখনো খাবার শেষ করোনি….! জলদি খেয়ে নাও,নাহলে রাক্ষসী এসে তোমাকে কামড় দিবে । তখন বুঝবে,অ্যাঁ” নতুন ন্যানির কথা শুনে ভয়ে কাঁপতে লাগলো তানিশা, ‘রাক্ষসী! ‘ “হ্যা, রাক্ষসী! আমার কথা না শুনলে রাক্ষসী তোমায় খেয়ে ফেলবে। জলদি খেয়ে নাও” ঘরের অন্যকাজ করতে ন্যানি চলে গেলো। ভয়ের তাড়নায় তানিশা সবটুকু খাবার খেয়ে নিলো।এমন কি তার প্রতিটি কথা মানতে লাগলো তানিশা। তানিশা প্রচন্ড ভয়ে থাকতো,ঘুমের মাঝে রাক্ষসী এর স্বপ্ন দেখে ভয়ে কাঁদতো। এমনকি;তানিশা তার জামার কথাও বলতো না মামনিকে। এমন করেই কেঁটে গেলো দীর্ঘ দু’মাস। এখন আর তানিশা পরীর ছবি আঁকে না। কারো সাথে কথা বলে না,সারাদিন চুপচাপ পরে থাকে ঘরের কোণে রাক্ষসীর ভয়ে। কারন, তানিশা শুনেছে রাক্ষসীরা খুব খারাপ হয়। এক রাতে তানিশার বাবা-মা সময় কাটাতে পার্টিতে চলে গেলো, তানিশাকে দেখাশুনার জন্য ন্যানিকে রেখে গেলো তানিশার কাছে। ন্যানি নিত্যদিনের মতো ভয় দেখিয়ে ঘুমোতে বলে চলে গেলো। তানিশার চোখে ঘুম নেই,প্রচন্ড বাতাসে জানালায় শব্দ হচ্ছে। হঠাৎ খুব জোরে মেঘ গর্জে উঠলো,ঘরে জ্বলতে থাকা মৃদু আলোটাও চলে গেলো। তানিশা খাট থেকে নেমে টেবিলের নিচে বসে কাঁদতে লাগলো,মনে করছে রাক্ষসীটা বুঝি এই চলে এলো! এমন সময় তুমুল ঝড়ে বাজ পরার শব্দে তানিশা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পরে রইলো।
এতো তুমুল ঝড়ে কেও তার চিৎকার শুনতে পেলো না। ভোরবেলায় তানিশার মা-বাবা ফিরলো, তানিশার ঘরে ঢুকেই তানি….ও মাই ডিয়ার তানিশা বলে অনেকক্ষণ ডাকলো। পরে, আতঙ্কিত স্বরে ডাকতে লাগলো তানিশার মামনি। ও ঘর থেকে দৌঁড়ে এলো নতুন ন্যানি – “ম্যাম, কি হয়েছে?” “কোথায় ছিলে তুমি? তানিশা টেবিলের নিচে কি করে গেলো….! ওর সারা শরীর দেখছি জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে….কি হয়েছে ওর,চোখ খুলছেনা কেনো…! তানিশা ,মামনি এসেছি;দেখো একবার।” তানিশার মামনি ঠুকরে উঠে কাঁদতে লাগলো,তানিশার বাবা তানিশাকে আবার হসপিটালে এডমিট করলো। তিন ঘন্টা হয়ে এলো,তানিশার  জ্ঞান এখনো ফিরেনি ;ওদিকে রানু বেগম দারোয়ানের কাছ থেকে খবর পেয়ে ছুটে এসেছে তানিশাকে দেখতে। নতুন ন্যানি চুপচাপ দাড়িয়ে আছে….! “কি সাহেব…! মাইয়্যাডার এই অবস্থা দেইখা খুশি তো?” তানিশার বাবা পিছনে তাঁকিয়ে বিরক্তি কন্ঠে বললেন, “রানু,তুমি এখানে কি করছো?” “তানিশারে দেখতে আইছি,কি করমু…আমি তো আর আপনাগো মতো পাষাণ না ;সাত বছর কোলে-পিঠে করে পালছি ওরে।” তানিশার বাবা উত্তেজিত কন্ঠে বললেন- “রানু…!” “আর ধমকায়েন না….মাইয়্যাডা কি দোষ করছিলো,হ্যা? আপনাগো লইয়্যা একটা জামাই কিনতে চাইছিল। আপনাগো এতটুকু সময় নাই তার জন্যে…! জন্ম দিলেই বাপ-মা হয়না,টাকা দিয়া সব কিনা যায়;ভালোবাসা না। আরে ও তো একটু আদর চাইতো,মনের কথা বলারো লোক নাই ওর। এতটুকুন মাইয়া,কেমনে থাকে বাপ-মা ছাড়া? এত টাকা টাকা করেন; এত টাকা দিয়া কি করবেন…!” বলতে বলতে শাড়ির আঁচলে নিজের চোখ মুছে নিলো রানু বেগম। ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়ে তানিশার বাবাকে ডাকলো,তানিশার বাবা উদ্ধিগ্ন কন্ঠে- “তানিশা কেমন আছে?” “বর্তমানে খুব খারাপ। প্রচন্ড ভয় পেয়েছে, যার কারণে জ্বর। হাত-পা এখনো কাঁপছে, ব্রেইন এখনো সচল না তবে বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে। জ্ঞান না ফিরলে বিপদ হতে পারে।” “কিছু করুন,প্লিজ।যতটাকা লাগে লাগুক” “আমরা চেষ্টায় আছি।
বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।” তানিশার মামনি হাত জোর করে বলছেন- “ডাক্তার প্লিজ, ওর কাছে যেতে দিন একটু। একবার দেখতে দিন।” “ওকে,কিন্তু ভেতরে গিয়ে কান্নাকাটি করতে পারবেন না ওর সামনে।” রানু বেগমও তানিশার মায়ের কাছে হাত জোর করে বলতে লাগলেন- “আফা,আমারে একটু লইয়া যান;ওরে একটু দেখতে দেন ।” তানিশার মা রানু বেগমকে নিয়ে কেবিনে ঢুকলো,সেই হাস্যোজ্জল চেহারাটা মলিন হয়ে গেছে। জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় করে মামনি আর রানু বেগমকে ডাকছে তানিশা। তানিশার মামনি মাথায় হাত রেখে অঝোরে কান্না করছেন।রানু বেগম তানিশার হাতে চুমু খেয়ে তানিশাকে ডাকলো- “আম্মু,ওঠো তুমি। আমি আইছি….গল্প শুনবা না! ওই যে আসমানের পরীগুলার।” রানু বেগমের ডাক যেনো জাদুর মতে কাজ করলো। তানিশা সাড়া দিলো,ডাক্তার এসে চে-কাপ করতে লাগলো।তানিশা রানু বেগমের আঙ্গুল সজোরে ধরে রইলো। কিছুক্ষণ পর রানু-মাকে আকঁড়ে ধরে বললো- ‘আচ্ছা, রানু-মা আমাকে রাক্ষসী খাবে না তো?’ রানু বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- “না আম্মু,তুমি তো আমাদের রাজকন্যা। তোমারে খাইবো না,রাক্ষসী খারাপ লোক গুলারে খায়।” ‘জানো নতুন ন্যানিটা খুব পঁচা,আমাকে বকুনি দেয়,ভয় দেখায়;ওকে খাবে?” “হ রে মা, তুমি ডরাইয়ো না আমি আছি না,কিচ্ছু অইবোনা।’ ‘অইযে পরীদের গল্পটা একটু শুনাও না,খুব ইচ্ছে করছে শুনতে;কতদিন শুনিনা।’ “আচ্ছা আম্মু ,তুমি ঘুমাও আমি কইতাছি। ” গল্প বলতে লাগলেন রানু বেগম। তানিশা পরীদের স্বপ্নে ডুবে গেলো।
লাল পরী,নীল পরী মিলে তানিশাকে যেন নীল জামা পড়িয়ে দিলো। ঠিক যেনো মনের মত জামাটা। তানিশাকে পরীর মতো লাগছে,পরীর হাত ধরে তানিশা দূর আকাশে চলে গেলো। আর ঘুম ভাঙ্গেনি তানিশার। তানিশা স্বপ্নের ভূবনে সুখে আর আদরেই আছে। স্বার্থপর এ বাবা-মা’র দুনিয়ার চেয়ে পরীদের দুনিয়া হাজারগুণে ভালো। লেখকের কথাঃ কর্পোরেট এ দুনিয়ায় আর কত ব্যাস্ত থাকবেন। বাচ্চাদের জন্য না হয় প্রতিদিন মাত্র দু থেকে তিন ঘন্টা ব্যায় করুন। এভাবে, প্রতিদিনকার ভালোবাসায় দেশে অন্তত চাইল্ড হাউজ আর ওল্ড হাুউজ বন্ধ করা সম্ভব,আমি মনে করি। টাকা কখনো প্রকৃত সুখ ডেকে আনতে পারেনা, ডেকে আনে শুধুই অশান্তি। লেখকঃ মোঃ জাহিদুল ইসলাম খুলশী, চট্টগ্রাম

আরো পড়তে পারেন...

ব্ল্যাক বেল্ট

আমাদের বশির ভাই। সবাই ডাকে ব্ল্যাক বশির। সেরের ওপর সোয়া সের আছে। বশির ভাই কালোর…

ঘ্যাঁঘাসুর

এক যে ছিল রাজা, তাঁর ছিল একটি মেয়ে। মেয়েটি, হইয়া অবধি খালি অসুখেই ভুগিতেছে। একটি…

ঠানদিদির বিক্রম

আমাদের এক ঠানদিদি ছিলেন। অবশ্য ঠাকুরদাদাও ছিলেন, নইলে ঠানদিদি এলেন কোত্থেকে? তবে ঠাকুরদাদাকে পাড়ার ছেলেরা…