ছোটকা ও ছুটকির কা-কারখানা

সামিহা আল মামুন পলাশপুর গ্রামে বাস করত ছোটকা ও ছুটকি। তারা থাকত তাদের দাদিমার সঙ্গে। দাদিমা ছিল খুব বৃদ্ধ। ছোটকা ও ছুটকির বাবা-মা ওদের ছোট রেখেই মারা যায়ু। ওদের দাদিমা আগে কাগজের প্যাকেট বানিয়ে বিক্রি করত। কিছু দিন ধরে অসুস্থ থাকায় কাগজের প্যাকেট বানাতে পারছিল না। তাই ওদের খাবার জোগাড় করতে কষ্ট হচ্ছিল।
ছুটকি : দাদিমা, আমার বয়স তো ১১ পার হয়ে গেছে, আমি তো এখন কাগজের প্যাকেট বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারি।
দাদিমা : নারে, তুই পারবি না। বড় বাজার যেতে হলে পথিমধ্যে একট জঙ্গল পার হয়ে যেতে হয়। আর শুনেছি সে জঙ্গলে একটা পেতনি বাস করে। তোর বয়সী সুন্দর মেয়েদের দেখলে তাদের রূপ ধরে আর তাদের আটকে রাখে।
ছুটকি : আমার কিচ্ছু হবে না। আর তোমার যদি এত ভয় হয় তাহলে আমি ছোটকাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাই।
ছোটকা : হ্যাঁ, আমি আপুর সঙ্গে যাব।
দাদিমা : দেখরে, তোরা ছাড়া আমার তিন কুলে আর কেউ নেই, তোদের যদি কিছু হয়ে যায় আমি কী নিয়ে বাঁচব। তোদের বাবা-মাও তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
ছোটকা ও ছুটকির জোরাজুরিতে শেষ পর্যন্ত দাদিমা যেতে দিতে রাজি হলো।
বাজার বসে বিকালে। তাই ছোটকা ও ছুটকি পরদিন দুপুরে কাগজের প্যাকেট বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতে রওনা হলো। বিকালে কাগজের প্যাকেট বিক্রি করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিল। ফেরার পথে সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং সে সময় ওরা জঙ্গল দিয়ে পার হচ্ছিল। পেতনির নজর পড়ল ছুটকির ওপর। পেতনি এক বৃদ্ধ মহিলার রূপ নিয়ে ওদের সামনে হাজির হলো।
ছোটকা : কে তুমি?
পেতনি : আমি খুব বিপদে পড়েছি, আমাকে কি একটু সাহায্য করবে?
ছুটকি : হ্যাঁ করব, কেন করব না? বলুন আপনার কী বিপদ?
ছোটকা : ঠিক আছে চল।
পেতনি : না, না, আমার বাড়িতে আমি কোনো ছেলে ঢোকাই না।
ছুটকি : বেশ, তুই এখানে দাঁড়া আমি আসছি।
ছোটকার কাছে ব্যাপারটা একটু সন্দেহজনক লাগল তাই সে ওদের পিছু নিল।
বৃদ্ধ মহিলারূপী পেতনি একটা বড় বটগাছের সামনে এসে দাঁড়াল। ছুটকি বলল, এখানে দাঁড়ালেন কেন?
পেতনি : এটাই তো আমার বাসা।
ছুটকি আর কিছু বলতে না বলতেই পেতনি তার রূপ ধারণ করল। ছুটকি থমকে গেল। তারপর পেতনি জাদু করে ছুটকিকে পেতনি এবং নিজে ছুটকির রূপ ধারণ করল। ছোটকা গাছের আড়াল থেকে সব দেখতে পেল। তারপর পেতনি ওদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলো। ছোটকা দৌড়ে তার আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
পেতনি : চল ছোটকা বাড়ি যাই।
ছোটকা : হ্যাঁ, চল।
বাড়ি ফিরে ছোটকা তার দাদিমাকে সব জানাতে চাইল কিন্তু সে সুযোগ পেল না। পরদিন সকালে মিথ্যা কথা বলে ছোটকা ছুটকিকে উদ্ধারের উদ্দেশে রওনা হলো। ছোটকা সেই বটগাছের সামনে উপস্থিত হলো। ছুটকি তখন গাছের নিচে বসে কাঁদছিল।
ছোটকাকে দেখে ছুটকি বলল, আমি কিন্তু পেতনি না।
ছোটকা : আমি সব জানি। আমি গাছের আড়াল থেকে সব দেখেছি। আর তাই তোমাকে আমি উদ্ধার করতে এসেছি।
ছুটকি : তুই কি জানিস কিভাবে আমি আবার আমার রূপ ফিরে পাব?
ছোটকা : না, আমি জানি না। কিন্তু পেতনির বাসা তো এই বটগাছের ছিদ্রের ভেতর। ওখানে আমি ঢুকব। তারপর নিশ্চয়ই কিছু না কিছু জানা যাবে।
এই বলে ছোটকা খুব কষ্টে বটগাছের ছিদ্রের ভেতর ঢুকল। ভেতরে একটা খাট ছাড়া কিছুই ছিল না। হঠাৎ করে খাটের নিচে সে একটা বাক্স দেখতে পেল। সেটা ছিল তালা দেয়া। অনেক খুঁজে ছোটকা তোশকের নিচে তালার চাবিটা পেল। চাবি দিয়ে ছোটকা বাক্সটি খুলল। তারপর ওপর থেকে কিছু জিনিস নামাতেই সব কিছুর নিচে একটা কৌটা দেখতে পেল। কৌটার ভেতরে ঠিক পেতনির মতো একটা পুতুল দেখতে পেল। ছোটকা ওটাকে ভালো করে দেখতে লাগল। হঠাৎ করে ছোটকা হোঁচট খেল এবং কৌটাটা পড়ে পেতনির মতো পুতুলটা ভেঙে গেল। তারপর সে ছুটকির চিৎকার শুনতে পেল।
ছুটকি : ভাই, ভাই তুই বেরিয়ে আয়, আমি আমার রূপ ফিরে পেয়েছি।
ছোটকা বুঝতে পারল যে পুতুলটা পেতনির প্রাণভোমরা ছিল। তারপর ওরা বাড়ি ফিরে গেল।
বাড়ি ফিরে দেখল তাদের দাদিমা কাঁদছে।
ছোটকা : কী হয়েছে দাদিমা, কাঁদছ কেন?
দাদিমা : কিছুক্ষণ আগে ছুটকি চিৎকার করে মরে গেল এবং উধাও হয়ে গেল।
ছোটকা হাসতে লাগল এবং ছুটকিকে ডাকল। দাদিমা কিছু বুঝতে পারল না। ছোটকা ও ছুটকি দাদিমাকে সব কিছু খলে বলল। তারপর দাদিমার চিকিৎসা করে তারা আনন্দে দিন কাটাতে লাগল।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!