ছায়া — প্রতাপ কামাল

বেয়াড়া সূর্যটার সাথে পেরে উঠিনা। আমার বয়স হয়েছে, একটু ধীরে সুস্থে্ চলতে চাই, ও চলে লাফিয়ে  লাফিয়ে। অবশ্য সকালেই ওর মেজাজটা একটু বেশী চাঙ্গা থাকে। হবেই বা না কেন? আজকালকার নতুন প্রজন্মকে দেখুন, সারা রাত ধরে ফোন, মোবাইল, ফেসবুক, টুইটার, গুগোল প্লাস, ইয়াহু মেসেঞ্জার কত কী- গল্প যেন শেষই হয় না! এ শুনবে না, তো ওকে শুনাবো। ও বলবে না তো, আর একজনকে বলব,
“তুই বল, কেমন আছিস?”
সারা রাত ধরে রাগ, অনুরাগ, প্রেমালাপ, ভ্রষ্টালাপ, মাঝে মাঝে –
“জাষ্ট ফ্রেন্ডশীপ-দাগের ভিতরে যাবনা, কেমন?”
“-ইস আব্বু আম্মু? জানতে পারলে কেটেই ফেলবে।“
“তোর যেমন,  আমারগুলো আবার অত চরমপন্থী নয়।“
“তোর বাপ-মা নরমপন্থী হবে না কেন? ভাল বৌ পেতে হলে সাধনা করা লাগে, শ্বশুর শ্বাশুড়ীকেও বিনয়ী হতে হয়।“
তবে, রাতভর, বা ধরলাম মধ্যরাত অবধি, বিশ্রম্ভালাপে একদম শ্রান্তি, ক্লান্তি নেই। দেখুন না, খুব ভোরে উঠেছে বলে কাকেদেরও সকালে ক্লান্তি আসে, ঘুম পায়।
কিন্তু টগবগে নতুন প্রজন্ম?
ধুর, শুধু ওদের কথা বলি কেন? প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া, প্রাকবৃদ্ধ-প্রাকবৃদ্ধারাই বা কম কীসে?
সাজবে, গুজবে, কত ঢং এ রূপচর্চা! তারপর আবার ঘন ঘন ছবি তোলা চাই! ফেস বুকে দিতে হবে না! এক কাপড়ে কী সারা জীবন যায় যে, এক ছবিতে ফেসবুক চলবে?
এদিকে দেখ, দাড়িটা কাঁটবে, গোঁফটা ছাটবে—মাঝে মাঝে তো মনে হয় একদম ক্লীন করে ফেলবে!
ধেৎ, সে কপাল কী আছে? বাড়ীতে বউরা -বেটিরা ঘুরছে, লাজ শরমের ব্যাপার আছে না? তাই একটু মেহেদী লাগিয়ে সাঈদীর ফর্মূলা অনুসরণ করি।
সকাল হয়ে যায়, সূর্য ওঠে লাফিয়ে লাফিয়ে। সুর্য তো আর রেলমন্ত্রীর ট্রেন নয় যে, কান ধরে টানলেও নড়ে চড়ে না!
হ্যা, যা বলছিলাম, শ্রান্তি নেই, ক্লান্তি নেই, এখন আমাদের সূর্যের সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে পথ চলা!
আবার মাঝে মাঝে হতাশ হতে হয় বই কী! কিন্তু থেমে থাকি না।
বিয়েটা তিন তিন বার জমতে জমতে, আর জমলো না। আজকালকার মেয়েদের কী আদিখ্যেতার শেষ আছে? আগেই ভাল ছিল, পাত্র বাড়ীতে এলে আপনজনেরা “আলুর বস্তার মত” ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসতো, পাত্র বা তার গার্জেন “নো বললে সব শেষ, ইয়েস বললে ধুম-ধাম।
আর এখন?
মেয়ে আর মেয়েদের গার্জেনরা “চাকরী না দেয়ার ইন্টারভিউ বোর্ড” এর চেয়েও খারাপ।
উফ! প্রশ্ন শেষ হয় না। বাসায় ফিরে একটু দম ফেলব? না, তাও হবে না!
ফোন করে হলেও প্রশ্ন অব্যাহত রাখবে! মরণ!
এত ঝক্কির জীবনেও, সকালে মনটা আমার ফুরফুরে থাকে।
বিশ্বাস হচ্ছে না?
বসুন না ফেসবুকে, দেখুন না! ষ্ট্যাটাসগুলো দেখুন, পোষ্ট করা অনুকাব্যগুলো দেখুন…. ভাল করে দেখুন না…কী মনে হয়?
সারা রাতের ফোনালাপ বা বিশ্রাম্ভালাপজনিত শ্রান্তি- ক্লান্তির কোন রেশ আছে?
রঙীন পাখী, রঙীন ফুল, রঙীন বইয়ের মলাট, রঙীন মন—সব যেন ফুর ফুর করে রঙীন আকাশে উড়ছে, উড়ছে আর উড়ছে… নদীর জলে কেবলই উড়ে চলা সুখপাখীদের প্রচ্ছায়া…।
ইস, ফেসবুকারা যদি কারো বউ অথবা স্বামী হ’ত!
সে কথা বলছি কেন?
বউ আর স্বামীরা কী কখনো জোয়ার টানে এমন করে প্রেম নদীতে ছায়া হয়ে ভাসে?

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!