চৈত্র মাসের মসলা পৌষ মাসে

মৌলবী সাহেবের তালেব এলেম(ছাত্র)সবে মৌলবী হইয়াছেন।ছাত্র অবস্থায় ওস্তাদের বক্তিতায় যে যে কথা শুনিয়াছেন,তাঁহারই মতো সুর করিয়া সেই সব কথা বলেন।নূতন মৌলবী গলার সুর আরও সুন্দর বলিয়া ঘন ঘন তিনি দাওত পান। সেবার পৌষ মাসে এক গৃহস্ত বাড়ি তাঁহার দাওয়াত হইয়াছে।বক্তৃতা করিতে করিতে মৌলবী সাহের বলিয়া ফেলিলেন,মেয়ে লোকের ব্যবহার করা কোন কাপড়-পোষাক আলেম ওস্তাদকে দিতে নাই।ইহাতে খুব গুনাহ হয়।পাড়াগাঁয়ের চাষী মুসলমানদের বাড়িতে মেয়েদের পরার কাপড় দিয়েই সাধারন্ত শী্ত কালে কাঁতা তৈরি হয়।কাপড় পুরুশদের চাইতে মেয়েদের কাপড় পুরু।
বাড়ির কর্তা গরীব মানুষ,লেপ কিনিবার পয়সা নাই। শী্ত নিবারনের জন্য কয়েকখানা মাত্র কাঁথা আছে।তাহাও মেয়েদের শাড়ি কাপড় দিয়া তৈরি।তাই রাত্তের আহারের পরে সে মৌলবী সাহেবকে শীত নিবারনের জন্য কিছুই দিতে পারিল না ।কারণ মৌলবী সাহেব ওয়াযের সময় বলিয়াছেন,ময়েলোকের কাপড়ের তৈরি কাঁথা মৌলবী-মাওলানাদের দিতে নাই। দিলে খুব গুনাহ হইবে। শূন্য মাদুরের উপর বসিয়া মৌলবী সাহেব সারারাত শীতে ঠীর ঠীর করিয়া কাঁপিয়া কাটাইলেন।একটুকুও ঘুমাইতে পারিলেন না।শুধু কি এই বাড়িতে?ইহার পর মৌলবী সাহেব যেখানেই দাওয়াত খাইতে যান,কেহই মৌলবী সাহেবকে রাত্তে শুইবার জন্য কাঁতা-কাঁড়র দেয় না।কারণ তাহারা আগেই শেই চাষীর বাড়িতে মৌলবী সাহেবের ওয়াজ শুনিয়া আসিয়াছে।শীতে কষ্ট আর কত দিন সহ্য কারা যায়?সারারাত শিতের কাঁপনীতে না ঘুমাইয়া মৌলবী সাহেবের চোখ দুটি লাল জবাফুল,তার ওপর আবার সর্দি-কাশি। একদিন তিনি তাঁর ওস্তাদ মৌলবী সাহেবের সঙ্গে দেখা করিয়া বলিলেন,হুজুর!আপনার শিক্ষা মতো সব জায়গায়ই ওয়াজ করিরা বেড়াই।কিন্তু এক জায়গায় যাইয়া বড়ই মুস্কিলে পড়িয়াছি।” ওস্তাদ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি মুস্কিল,খোলাসা করিয়া বোলো!”তখন মৌলবী সাহেব জবাব দিলেন,এক চাষীর বাড়িতে আমি বক্তৃতায় বলিলাম,“স্ত্রীলোকের ব্যবহার করা কোন কাঁপড় মৌলবী-, মাওলানাদের দিতে নাই।তাহাতে খুবগুনাহয়।”
সেই হইতে যে বাড়িতেই দাওয়াত পাই,বাড়ির কর্তা শীতের রাতে আমাকে কোন কাঁথা-কাঁপড় দেয় না।এই দেখুন,শীতের রাত্তে জাগিতে জাগিতে আমার কি হাল হয়াছে।”
ওস্তাদ খানিকটা চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন,” “আরে বেয়াক্কেল। চৈত্র মাসের বক্তৃতা তুমি পৌষ মাসে করিয়াছ। তোমার মতো গাধা আর নাই। কাঁথা-কাপড়ের বক্তৃতা গরমের জন্য মূলতবী রাখিব।
আমি কি শীতকালে তোমাকে এরুপ ওয়াজ করিতে বলিয়াছিলাম?”

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!