আজব কাজটা করার সময় ক্ষণিকের জন্য হলেও সেই মুহূর্তে আমি তার মুখের ক্ষেপাটে ভাবটা দেখতে পাই; তাতেই যা বোঝার বুঝে নেই আমি। বলতে চাইছি না, আমার দিকে ছুঁড়ে দেয়া ওর সেই ঈঙ্গিত, খুব ভাসা ভাসা আর সোজা-সাপ্টা ছিল না। বরং সেটা ছিল আরো ভয়ানক গুরুতর। দুই থেকে তিন সেকেন্ড তা স্থায়ী ছিল। ঠিক আচমকা চিনির বলে ওর হাত ডোবাবার মতো, মুঠো ভরে নিয়ে তারপর চোয়ালটা আক্রোশে চতুর্ভুজাকার করে জানালা দিয়ে তা বাইরে ছুঁড়ে মারে। তারপর আবারও অমায়িক দ্রবিভুত আবছা হাসি হেসে সেটা গুড়িয়ে ফেলতে থাকে। ‘আরে…কেন?’ উপস্থিত দু’জনের একজন বলে, অথবা সম্ভবত দু’জনেই, পুরোপুরি অভিভুতের মতো পেছনে তাকায়।
‘শুধু এটা বোঝাতে যে আজকে আমি তার চাইতে বেশি চিনি সংগ্রহ করেছি, সেদিন এসে গেছে যখন আমি চিনি যোগাতে সমর্থ এবং, যদি এটা আমাকে সন্তষ্ট করে, চিনি ছুঁড়ে দূরে ফেলে দাও।’ এরপর তারা সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ক্লেটাসও ওদের সঙ্গে যোগ দেয় তবে একটু আস্তে হাসে। তারপর আমিও, দুর্বল স্বরে হাসতে শুরু করি। “তুমি খুব মজার, ক্লেটাস’-উমেরা বলে, তার বিশাল দেহটা আহ্লাদে কাঁপছে এবং চোখ দু’টি চকচক করছে। শীঘ্র আমরা ক্লেটাসের চা পান করব এবং ঘন মার্জারিন মাখানো রুটি খাব। ‘হ্যাঁ’–উমেরার এক বন্ধু বলে, তার নামটি আমি ঠিক ধরতে পারিনি, “মনে হয় বুলেট চিনির মাথা ভেঙ্গে দিয়েছে!’ ‘আমেন।’ ‘একদিন খুব শীঘ্রই মাখনেরও সুজোগ আসবে’–উমেরা বলে। ‘দয়াকরে আমার এই বাজে অভ্যাসের জন্য ক্ষমা করবে।’ নিজের চায়ে সে একটুকরো রুটি ভেজায় এবং খুব সাবধানে তার বিশাল মুখের ভেতর পুরে দেয়, তাতে করে মাথাটা পিছিয়ে যায়। ‘আমি এভাবেই রুটি খেতে শিখেছি’- ভেজা মুখটা ভরার ফন্দি আটে সে। তাই আরেকটা টুকরো ছিঁড়ে নেয়-এবারেরটা একটু ছোট এবং জানালাদিয়ে সেটা ছুঁড়ে মারে। ‘যা গিয়ে চিনির সঙ্গে দেখা কর, আর বুলেট এসে তোদের দু’টারই মাথা ভাঙবে!’ ‘আমেন।’ ‘ওদের আমার এবং চিনির কথা বলো, মাইক, ওদের বলো’–ক্লেটাস আমাকে বলে। ভাল, আমি বলি, বলার আসলে তেমন কিছুই নেই কেবল আমার এই বন্ধু ক্লেটাস আমাদের এমন এক ইংরেজ বন্ধু যাকে মিষ্টি দাঁত বলতে পারো। কিন্তু অবশ্যই ইংরেজরা, খুবই মধ্যপন্থী একটি জাতি, সম্ভবত ক্লেটাসের মতো আর কোন নাম তাদের নেই এবং ওর মতো বত্রিশ দাঁতের নকল পাটিও নেই। এটা আমার একটা পুরাতন কৌতুক কিন্তু উমারা এবং ওর বন্ধুদের সেটা জানা নেই। আর তাই সেটা শোনার পর ওরা খুব অস্বাভাবিক জোরে হাসে। সেটা অবশ্য ভালো কারণ ক্লেটাস পীড়াপীড়ি করবে এমন কোন গল্প আমি বলতে চাই না। এবং সৌভাগ্যক্রমেই উমেরা এবং তার বন্ধুরা তাদের এমন কষ্টের আরো সব গল্প তাদের বলার জন্য জোর করতে শুরু করে; আমাদের বশির ভাগই সেই সব দিনে ব্যাধিকল্পক একদল বৃদ্ধা মহিলার মতো হয়ে যাই যারা নিজেদের বিশেষ বিশেষ বৈকল্যগুলোর বিস্তারিত স্মরণ করতে সবসময় উন্মুখ থাকে।
এবং আমি সেসবের মাঝে আসহ্য কষ্টের সন্ধান পাই। কিছু কিছু লোকের সক্ষমতা আমার ভেতরে কখনই আমি খুঁজে পাই না। উদাহরণ হিসেবে ক্লেটাসের নাম আসতে পারে-যা দিয়ে সবকিছুর ভালো দিকটি উন্মোচন করা যায়।ওর চাইতে আমার ভেতরে যন্ত্রণা অনেক বেশি সময় ধরে অবস্থান করে, এমনকি যখন-বলতে অবাক লাগে-এটা তার নিজের যন্ত্রণাও হয়। সেটা আমার ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না, হাজার বছরেও না, চিনির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক বিজয়ের হাস্যকর উদযাপন মঞ্চস্থ করার সময়ও না। সরলভাবে ভেবে দেখেছি এতে আমি কখনোই ভালো বোধ করি না। এটা এমন একজন লোকের মতো যে তোমার কাছে পানিয় হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কেননা ভোরে হাতে আসা খবরের কাগজের মতে, কিছুলোক একদা তার বউকে মেরে ফেলার জন্য ভ্রষ্ট করেছিল। পানীয়টা আমার গলায় লেপ্টে থাকে, কারণ আমার করুণা এবং আমার ঘৃণা উদযাপকদের ওপর বর্ষিত হবে এবং সেই দুঃসাহসী লোকটির প্রতি আমার সম্মান অটুট থাকবে; একসময় যিনি খুবই ন্যায়তার সঙ্গে সেই ব্যাভিচারি স্ত্রীর স্বামী হয়েছিলেন। ক্লেটাসের চিনি তাই মামুলি কোন চিনি নয়। এটি জীবনকে যাপন করতে শেখায়। যুদ্ধের বিগত আঠারো মাসে আমরা বেঁচে রয়েছি এবং একই সঙ্গে কাজ করছি। আর তাই আমি তার সুতীব্র মর্মবেদনার খুবই নিকটে অবস্থান করেছি, তার অনেক অপমান জনক পরাজয়েরও চাক্ষুস সাক্ষী আমি। তার আসক্তির সঙ্গে কখনই আমি পুরোপুরি সমবেদী ছিলাম না, সেসবের কিছু বুঝেও উঠতে পারিনি। বিকেলে যতক্ষণ পর্যন্ত আমার একবেলা পেটভরার উপযোগী চটকালো খাবার ছিল ততক্ষণ আমি তাকে সকাল বা রাতে খাবারের কথা জিজ্ঞেস করিনি। প্রথমে আমি মাংস বা মাছের অভাবে ভুগতে থাকি এবং স্যুপের অতিরিক্ত লবন খুব বাজে লাগতে থাকে, কিন্তু যুদ্ধের দ্বিতীয় বছরে সেসবের কিছু আর বুঝে উঠতে পারি না। কিন্তু বঞ্চনার সেই প্রতিটি দিন নিজের জন্য ক্লেটাস চিনি এবং চা কব্জা করতে আচ্ছন্ন থাকে, যা খাওয়া যায় না তা দিয়ে ক্ষুধা বাড়াবার কোন মানে হয় না।
কিকরে এমন অজানা স্বাদ সে আতস্থ করেছে সেটা আমি পরীক্ষা করে দেখার কথাও ভাবিনি; এটা সম্ভবত নিঃসঙ্গ সেই ক্যান্সার কোষের মতই সেটা বাড়তে শুরু করেছিল, বনের মাঝে কালো বেল্ট পড়া কপর্দকশূন্য ছেলের শীতের রাত দিন অবস্থান করার সময়টাতে। চা কফি পানে অভ্যস্ত আরেকটি দল, অবশ্য যদি পান করার মতো তেমন কিছু আদৌ খুঁজে পায়, অনেক আগেই তারা ব্ল্যাক আর তেতো খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। একটুকরো নারিকেলের সঙ্গে ব্ল্যাক কফি পানে তেতো স্বাদ ভালোভাবেই কমে যায় এটা আবিষ্কারের পর কিছু কিছু অস্বীকৃত প্রতিভাধারী আরো একবার তাদের বোঝা হালকা করতে শুরু করে। তারপর আরো নতুন কিছুর সন্ধান মিলতে থাকে, জায়গাটাতে মিষ্টি কারক-পেটি ডিজেনার-জন্মে। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্তের মতো ক্লেটাসকে ঠিক কাজটাই করতে হয় বা কোন কিছুই করার প্রয়োজন পড়ে না। আমি কি বলেছি ওর ওপর থেকে আমি আমার ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি? হতে পারে, তবে সেটা মাঝে মধ্যে। প্রচণ্ড পরহিতকর আর চিন্তাকূল মুহূর্তে ওর ওপর ক্ষোভের বদলে আমি করুনা অনুভব করি। কেননা নিজের সততার কারণেই কেউ এমন দাবি করতে পারে-এই সময়ে আরো অনেক আসক্তির বদলে চিনির প্রতি আসক্তি কি সবচেয়ে বেশি বিরক্তিকর নয়? না। এটা কারো ওপর হুমকি তৈরি করে না, বাকিরা অকপটে একথা স্বীকার করতে পারে না। প্রচণ্ড রকমের উৎসাহ নিয়ে একদিন সে ঘরে ফেরে। সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরেছেন এমন একজন তিন পাউন্ডের বিনিময়ে তার কাছে দুই ডজন কৃত্রিম মিষ্টিকারক ট্যাবলেট বিক্রি করে। পানি গরম করার জন্য সোজাসোজি রান্নাঘরে গিয়ে ঢোকে। তারপর নিরাপদ এককোনে গিয়ে ব্যাগ থেকে ইন্সটেন্ট কফির পুরাতন টিন বেরকরে-তার কাছে আর চা নেই-যার সবটা জমে শক্ত হয়ে আছে। ‘এর কিছুই হয়নি’– আমাকে বার বার আস্বস্ত করে, আমি তবু একটি কথাও বলি না। ‘আর্দ্রতার কারণেই এমনটা হয়েছে; গন্ধ এখনো পুরোপুরি অটুট রয়েছে।’ ভালো করে শুঁকে দেখে, তারপর চাকুর সাহায্যে ওখান থেকে পাথরের মতো ছোট্ট দু’টো খণ্ড ভেঙে দু’কাপ কফি বানায়। তারপর গান গাইতে গাইতে পাশে এসে বসে। মিষ্টি কারকের স্বাদ আমি মোটেই সইতে পারি না। এর প্রতিচুমুকে শূকরচর্বির মতো অরুচি উসকে আতর্কিত মুখে লালা জড়ো হয়। আমরা নিঃশব্দে পান করতে থাকি। তারপর হঠাৎই ক্লেটাস লাফিয়ে বমি করার জন্য বাইরে দৌড়ায়।
আমি কিছুক্ষণের জন্য থামি তারপর আবার কাপের বাকিটা পান করতে চেষ্টা করি। ফিরে আসার পর আমি সমবেদনা জানাই। ও টু-শব্দটা পর্যন্ত করে না। সোজা নিজের ঘরেগিয়ে এককাপ জল নিয়ে বেরিয়ে আসে। তারপর কুলকুচো করতে আবারও বাইরে যায়। কয়েকবার গড়গড়া করে কাপের বাকি জল দিয়ে মুখ ধোয়। আবারও আমি দুঃখ প্রকাশ করি এবং সে তাতে মাথা ঝাঁকায়। শেষটায় আমি যেখানে বসা সেখানে ফিরে আসে। ‘এগুলোর কথা কি ভেবে দেখেছ?’ বিতৃষ্ণায় কতগুলো ছোট ছোট ট্যাবলেট আঁকড়ে ধরে আছে। বমির কারণে একটা মানুষ কতটা বদলে যেতে পারে সত্যিই বিস্ময়কর। ‘না, এগুলোই তার কারণ নাও হতে পারে। তবে এখনই ফেলছি না। আমি নিশ্চিত, যে এমন কাজ করতে পারে তারমতো বন্ধু খুঁজতে খুব বেশি দূর যেতে হবে না।’ সে কোনকিছু শুনছে না অথবা পরের মিনিটগুলো সে আর ওগুলো নিয়ে তেমন কিছুই ভাবেনি। তৃতীয় বারের মতো সে বাইরে বেরহয় এবং একটু আগে যেখানে বমি করে এসেছে সেই বুনো ঝোপের মধ্যে সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে। হতভাগা সেই চিনির বিকল্পের কারণে খুব দ্রুতই সে মাথার ভেতরে ওলট-পালট টেরপেতে শুরুকরে। এর পরের দু’দিন ঠায় বিছানায় লেপ্টে থাকে, খুব ভোরে উঠে কাজে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে অফিসের পথে বের হওয়া হয়ে ওঠে না, বিকেলে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করে তার করুণা ভিক্ষা করাও হয় না। তৃতীয় দিন ওর ওপর আমি ধৈর্য হারিয়ে ফেলি এবং তাকে যুদ্ধে টিকে থাকার কিছু নির্মম কৌশলের কথা বলি, রেডিওর যে কথাগুলো ওর কাছে খুবই প্রিয় সেখান থেকে গোটা খানেক বাক্য উচ্চারণ করে কমবেশি আমার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। যুদ্ধের নিকুচি করি! নিকুচি করি এই টিকে থাকার!’ আমাকে চিৎকর করে ও বলে। এরপর সেরে উঠে লাজুকভাবে তাকিয়ে থাকে। তারপর ওর হয়ে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনি নিয়ে আন্তরিক অনুসন্ধান শুরু করি। অফিসের অপর একবন্ধু আমাকে ফাদার ডরোথির কথা জানায়, এখান থেকে দশমাইল দূরে ক্রিটাসে তিনি একটা ত্রানভাণ্ডার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন, জেলার বাকিঅংশে সেখান থেকেই সরবরাহ পৌঁছায়। সবার কাছে পরিচিত এবং বিখ্যাত একজন রোমান ক্যাথলিক, ফাদার ডরোথি সম্পর্কে সতর্ক করে আমার সেই বন্ধুটি আরো বলে, খুবই ভালো এবং ভদ্রলোক হলেও আচরণে তাকে বুঝে ওঠা অত সহজ নয়। বিশেষ করে বিমান বন্দরে মাথায় বোমার টুকরো এসে আঘাত করার পরথেকে তার দেখা পাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। সেই শনিবারেই আমি আর ক্লেটাস রওনাহই এবং খুব ফুরফুরে মেজাজেই ফাদার ডরোথিকে দেখতে পাই, টানা ছয় রাত্রি অবিরাম বোমা বর্ষণের মধ্যে বিমান বন্দরের মিশকালো অন্ধকারে দৌড়ঝাপ করে বিমান থেকে ত্রানের মালপত্র নামিয়ে সেই সকাল সাতটায় বাড়ি ফিরে এসেছেন। এরই মাঝে মাত্র দু’ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন। আমাদের সম্মানে তিনি এদিকটায় এগিয়ে এসে জানান সপ্তাহখানেক বিশ্রামের আগে তার পক্ষে আর কাজ করা সম্ভব নয়। ‘আজ রাত থেকে টানা সাত দিনের জন্য আমি লাবণ্য ঘুমে যাচ্ছি।’ তার বসার ঘরে শুকনো মাছ, গুড়ো দুধ, ডিমের কুসুমের গুড়ো এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রীর তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে একেবারে দম আটকে আসার দশা। হাতের পেছন দিক দিয়ে তিনি চোখ কচলান এবং আমাদের জন্য কি করতে পারেন জানতে চান। কিন্তু আমরা দু’জনে কিছু বলে ওঠার আগেই তিনি ঘুমজড়ানো চোখে উঠে দাঁড়ান এবং ছোট ক্রুস আঁকা খালি বইয়ের বাক্সের ওপর রাখা বড় একটা ফ্ল্যাস্কের দিকে এগিয়ে যান, এবং কফি খেতে চাই কিনা জানতে চান। এই ঘর আর ক্রিটাস দুর্গের বাতাসে ভেসে বেড়ানো ত্রাণের তীব্র ঘ্রাণে থেকে যে কারো পক্ষেই ধারনা করা সম্ভব কফি মানেই এখানে দুধ আর চিনি, সেটা চিন্তা করেই আমরা সায়দেই।
এবং আমি একথাও ভাবি, এতে করে আরো কিছুক্ষণ ফাদার ডরোথির সঙ্গলাভ করার পথ সুগম হবে। নিজের সাহস আর একনিষ্ঠতা দিয়ে কেমন করে তিনি সব রাজনৈতিক বাধা বিঘ্নকে পাশকাটিয়ে জনগণের জন্য কাজ করে এসেছেন সেসবের অনেক কিছুই জানতে পারব আমরা। যদি অভিনয় না হয়, তাহলে বলতে হয়, তার ভেতর যে ঢেউ আমরা দেখতে পেয়েছি নিজের বিচক্ষণতার সেই মহান অস্ত্রের কাছে একজন যাযকও একেবারেই অরক্ষিত। পাশের একটি কক্ষে অদৃশ্য হয়ে যান তিনি এবং রঙচটা তিনটে নীলচে মাঝারি আকৃতির কাপ নিয়ে ফিরে আসেন এবং তাতে কফি ঢালেন, কড়েআঙ্গুল দিয়ে নিজের কাপটি আলতো করে ছুঁয়ে পুরাতন ফ্ল্যাক্সের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। ভদ্রভাবে চুমুক দেবার ফাঁকে আড়চোখে আমি ক্লেটাসের দিকে তাকাই। সেও মুখের কাছে কাপটা এগিয়ে নিয়ে পাখির মতো ছোট ছোট চুমুকে পান করছে। এবার, হাতের পেছনটা দিয়ে বিশাল হাইয়ের ক্ষাণিকটা আটকে ধরে আমাদের জন্য কি করতে পারেন সেটা আবারও জানতে চান ফাদার ডরোথি। আমিই প্রথমে কথা বলতে শুরু করি। আমি হে ফীভারের সমস্যায় ভুগছি তাই কিছু এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট দরকার ছিল, যদি তার কাছে তেমন কোন মজুদ থেকে থাকে। ‘অবশ্যই’–তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, তোমাকে দেবার মতো এই ওষুধ আমার কাছে রয়েছে। ফাদার জোসেফেরও এই একই পীড়া, তাই সবসময় আমাকেও এর কিছু রাখতে হয়।’ আবারও তিনি অদৃশ্য হন, তবে তখনও আমরা উনার কথা শুনতে পাচ্ছিলাম : ‘হে ফীভার, হে ফীভার, হে ফীভার’- যেন বুব শেলফ থেকে বই খুঁজছেন, এবং তারপর বলে ওঠেন: ‘এই তো পাওয়া গেছে!’ এর পরপরই ছোট্ট একটা বোতল নিয়ে হাজির হন। ‘এখানকার সব কিছুই জার্মানের’- একথা বলে, নীরবে লেবেল পড়তে থাকেন। ‘জার্মান পড়তে পারো নিশ্চই?’ না।’ ‘আমিও পারি না।
দিনে তিন বার খাবে এবং কেমন লাগছে সেটা খেয়াল রাখবে।’ ‘ধন্যবাদ, ফাদার।’ ‘আর কিছু!’ আমুদে ভঙ্গিতে তিনি বলেন। তার স্বল্পকালিন অনুপস্থিতির সময়টাতে ক্লেটাস তার কাপ থেকে কফির বেশিরভাগই মুখে চালান করে দেয় এবং কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে পেছনের নিচু জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গলা বেরকরে বাইরে তাকায়। ‘ওষুধটা খাবার আগে নিজের মতো করে চাইবে, কেবল চাইবে, মনে থাকে যেন’-উচ্ছলভাবে বলেন ফাদার ডরোথি। ‘ফাদার’- গভীর শ্রদ্ধা মেশানো ভঙ্গিতে ক্লেটাস বলে, ‘আমার সামান্য কিছু চিনি দরকার।” এখানে আশার পর থেকেই আমি এই নিয়ে চিন্তিত ছিলাম কেমন করে সে এমন একটা অনুরোধ করবে, কেমন শব্দ বেছে নেবে এর জন্য। এবার সেটা সরল সত্যের মতো মন থেকে বেরিয়ে এলো। সেই কৃতিত্বের জন্য আমি তাকে সম্মান জানাই কেননা আমি জানি সেটা আমার পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। সম্ভবত ফাদার ডরোথি নিজেই অবচেতনভাবে এধরনের একটি আবহ তৈরি করে রেখেছেন, তার হাসিখুসি ভরা মুখ, পুরাদস্তর অপার্থিব সারল্যই তার প্রমাণ। খেয়ালি শিশু যেমন বালি দিয়ে বানানো তার যাদুকরী প্রসাদটা আবার নিজেই ভেঙে ফেলে এখন তিনি যদি সেভাই সেটা গুড়িয়ে দেন। পেছন থেকে তিনি ক্লেটাসের ঘাড় ধরেন এবং চিৎকার করে ওঠেন ‘হতভাগা! হতভাগা!’ এই বলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বেরকরে দেন। তারপর আমার দিকে ফেরেন; কিন্তু এরই মাধ্যে আরেক বার তাকে বেরিয়ে যেতে দেখি।-আপনা থেকেই বেরিয়ে আসি। তিনি সত্যিকার একজন উন্মত্তের মতো ক্ষেপা, আস্থাবান, ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। বিচার দিনে সদাপ্রভুর ক্ষোভের কথা ভেবে তার কাছে গিয়ে প্রর্থনা জানাতে শুরু করেন। ‘চিনি! চিনি!! চিনি !!!’- কর্কশ স্বর ক্রমশ চড়া করতে করতে তিনি চিৎকার করে ওঠেন।
চিনি, যখন প্রতিদিন একগ্লাস দুধের অভাবে ঈশ্বরের নিরপরাধ হাজার হাজার মনুষ্য সন্তানেরা মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে! সদা প্রভুর সামনে আপন মনে এসব কথা বলতে বলতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবার পর ছুটে বেরিয়ে এসে তিনি আমাদের খুঁজতে থাকেন। তখন আর দৌড়ানো ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই, তার সেই পবিত্র অভিসম্পাত আমাদের কানে বাজতে থাকে। এ্যমাফো ফিরে যাবার জন্য গাড়ি ধরতে এসে দুর্বিষহ নির্বাক একটা ঘন্টা আমরা সড়কের বাঁকে দাঁড়িয়ে কাটিয়ে দেই। শেষে পুরো দশ মাইল আবারও পায়ে হেটে ফিরতে হয়। তখন আবার আমাদের দুপুরের বিশুষ্ক উষ্ণতা আর ঝড়ের আতঙ্ক পেয়ে বসে। এটাই সেই কাহিনী, ক্লেটাস অনুমানে চাইছে আমাদের প্রথম টি-পার্টি উদযাপনে সবাইকে এখন আমি সেটা বলি। আমার পক্ষে সেটা কেমন করে সম্ভব? অতীতের সেই ঘটনার মাঝে আমি বিজয়ের কোন চিহ্ন দেখতে পাই না, সেখানে শুধুই ব্যর্থতা। এমন আরো অনেক আছে, বলতে শুরু করলে এরচাইতে জঘন্য অনেক গল্প বেরিয়ে আসবে। ফাদার ডরোথির সঙ্গে বিপদ জনক সেই সাক্ষাতকারের তখনও খুব বেশী দিন গত হয়নি এরই মধ্য ফরেন এফেয়ার্সের লোকেরা ‘মিশনে যাবার জন্য’ আমাকে নির্বাচিত করে। যদিও সেটা ছিল একটা গরিবী ধরনের মিশন, মাত্র একসপ্তাহ দৈর্ঘ্যের এবং পর্তুগিজ দ্বিপ সাও টমি থেকে খুব বেশীদূর তাতে যেতে হয়নি, তারপরও আমি সেই মিশন খুব উপভোগ করি, তার কারণ বিদেশ আসলে বিদেশই। যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে বায়াফ্রার বাইরে কোথাও আমার পা ফেলা হয়ে ওঠেনি-এই সত্যটিকে তার বন্ধুদের একটা হিসেবি নির্জলা মতামত বাতিল করে দেয়, সেটা হলো; সে আসলে গুরুত্বপূর্ণ তেমন কেউ নয়; কিন্তু তারচাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো এধরনের মিশন থেকে যে পরিমাণ সম্মান উপভোগ করা যায় সেই সামান্য রসদে পদবী এবং গোসলের সাবান, তয়লা, রেজর ব্লেড ইত্যাদির মতন জীবনমান বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মিশন যাত্রার আগের দিন, ঘনিষ্ঠ এবং তেমন ঘনিষ্ঠ নয় এমন সব বন্ধু বান্ধব, পরিচিত জন, পুরোপুরি অপরিচিত এবং কাছের শত্রুরা একে একে সবাই আসে, তাদের মনের ইচ্ছা খুলে বলতে। দিনটা ধর্মীয় আচারের মতো হয়ে ওঠে, কেমন যেন উৎসব উৎসব ভাব, যে উৎসবের গুরুত্ব যেন পুরাতন দিনের স্মৃতীর গভীরে চাপা পড়ে আছে। তার কোন সৌভাগ্যবান বন্ধুই এমন একটি পৌরাণিক বিশ্বে মিশনে যেতে পারছে না, যেখানে মানব বসতী নেই, যেখানে জিনিস পত্র ফেলে রাখলেও নেবার কেউ নেই, জীবনও যেখানে নিরাপদ। সবাই তাই তাদের মনের ইচ্ছা জানাতে আসে। এবং প্রতিটি অনুরোধেরই ভাগ্যবান জবাব হয়: ‘আমি চেষ্টা করব, সমস্যাটা কোথায় সেটা তো জানই…’ ‘আরে হ্যাঁ সেটা তো আমি জানিই, কিন্তু একটু চেষ্টা করে দেখো…’ সত্যিকার কোন আশা নেই, কোন বাধ্যবাধকতা বা দায়-দায়িত্ব নেই। আকস্মিক, একজন ভাগ্যবান লোক এসে একটা শক্ত এবং রাশভারি আদেশ করেন। আর তার সেই আদেশে জন্য শব্দ একেবারেই অনর্থক। একটা কাগজের ফর্দ সঙ্গে ‘বিদেশি টাকা’ পিন দিয়ে আটকানো।
কেউ লবন আনতে বলে ওজনের কারণে সেটা বাতিল হয়ে যায়, অনেকেই নিজেদের বা তাদের মেয়ের জন্য অর্ন্তবাস আনতে বলে, এবং কেউ কেউ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী আনতে বলে সেক্ষেত্রে আমি ভান করি অফিস জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে, এতে সবাই খুব মজা পায়। আমি ব্যস্ততাভরে হাসি মুখে ঘরে ঢুকি আর বের হই, নোটবইয়ের কথাটা বলতে থাকি : ‘চাইতে শেখ!’ হ্যাঁ, কাছের শত্রুরাও আসে। যেমন আসে সড়কের ওপারের আমাদের ক্ষমতাধর লোকটি, সবাই বলে একসময় সে প্রোটেস্টেন্ট যাযক ছিলেন, বর্তমানে অপসারিত, তার মতো দাম্ভিক এই তল্লাটে আর একটিও যদি থাকতো, যুদ্ধের শুরুর দিকে তিনি সরকারের আমদানি করা দুষ্প্রাপ্য দ্রব্যাদির বিলিবন্টণ এবং নিয়ন্ত্রণের অর্থলোলুপ দায়িত্বটি বাগিয়ে নেন, বিশেষ করে মহিলাদের কাপড়ের মতো দ্রব্যাদি। ভেতর বাড়িতে যাবার জন্য পেছন ফিরছি ঠিক এমন সময় তিনি নিকোডেমাসের মতো প্রবেশ করেন। আমি কল্পনাও করিনি আমাদের পছন্দ সম্পর্কে তিনি জ্ঞান রাখেন। কিন্তু এখানে তিনি মাথা নাড়তে নাড়তে ঢুকেন। পেছনে ঘোড়া আর এরিনমোর তামাকের সুঘ্রাণ।
খুব অবাক হবেন যদি আমি তার ধবল চুলগুলো রাঙাবার জন্য দু’বোতল বিশেষ ধরনের পমেড এনেদিই এবং এই বলে পাঁচ ডলার ধরিয়ে দেন। এই সেই জঘণ্য লোক, একবার যার কাছে আমার প্রেমিকা ব্রা কেনার জন্য আবেদন জমাদিতে গেলে সে তাকে দূরের কোন গ্রামে ছুটির দিনটি একসঙ্গে সঙ্গে কাটাবার প্রস্তাব দেয়! সাও টমিতে দুপুরের খাবার না খেয়ে সপ্তাহ শেষে আমার নগণ্য ভাতা থেকে যথেষ্ট বিদেশী টাকা বাঁচাতে সক্ষম হই, দরকারি বেশকিছু জিনিস কেনার জন্যই কাজটা করা। তারমাঝে সেই এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেটও রয়েছে- কারণ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ফাদার ডরোথির দেয়া বোতল গুলো আমি ফেলে এসেছি। ক্লেটাসের জন্য-এবং এটা আমাকে সবচেয়ে বেশী আনন্দ দিয়েছে-আমি একটিন লিপটন চা এবং চিনির দু’টা হাফপাউন্ডের প্যাকেট কিনি। এবার কল্পনা করে দেখুন সেই অবস্থায় আমার রাগের প্রচণ্ডতা কেমন হতেপারে, যখন বাড়ি ফেরার পথে এয়ারপোর্টই ব্যাগ থেকে চিনির একটি প্যাকেট চুরি যেতে দেখি। ফেরার পথে গাট্টি-বোচকা থেকে পলকের জন্যেও চোখ সরাইনি, তাএ বিশ্বাস করতে বাধ্যহই কাজটা ইমিগ্রেসনেরই হবে। সম্ভবত সেই প্যাকেটটা যদি চুরি না হতো ক্লেটাসও তাহলে সেই জঘণ্য লজ্জাজনক পরাজয় থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারতো, যেই পরাজয়ে চিনিও তার উপর হামলা চালিয়ে ছিল। মার্সি তার সঙ্গে দেখা করতে আসে-এবং আমার সঙ্গেও-যেদিন আমি সাও টমি থেকে ফিরে আসি।
ওর জন্য একটা ট্যাবলেট লাক্স সাবান এনেছি এবং হ্যান্ড ক্রিমের একটা টিউবও। ও চড়ম খুশি। ‘তুমি কি চা খাবে? ক্লেটাস জানতে চায়। ‘ও হ্যাঁ’-তৃপ্তিমাখা কোমল স্বরে ও বলে। ‘তোমার কাছে চা আছে? গ্রেট! আর চিনিও! গ্রেট! গ্রেট! আমি একটু নেব কিন্তু।’ আমি দেখিনি, তবে আমার মনে হয় খোলা প্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে মার্সি মুঠো পুরে খানিকটা নিজের হ্যান্ড ব্যাগে ভরতে নিয়েছিল। ক্লেটাস গরম পানির কেতলি নিয়ে ভেতরে ঢুকছে। সে এসে সোজা ওর ওপর চড়াও হয়। এই দৃশ্যটা আমি স্পষ্ট দেখি। সেই মুহূর্তে ক্ষণিকের জন্য হলেও ও হয়তো ভেবেছিল এটা বোধ হয় ওর কোন অদ্ভুত কৌতুক। আমি জানতাম ক্লেটাস মোটেই মজা করছে না। সেই মুহূর্তে আমি ওকে শান্ত করতে কাছে যাই। ও মার্সির চিনি ওয়ালা হাতটা পাকড়াও করে দাঁত খিছিয়ে বলপূর্বক সেটা মেলে ধরে। ‘থামো, ক্লেটাস!’ আমি বলি। ‘আমার পাছা থামব’- ও বলে। ‘আমি একটা অসুস্থ লোক এবং এই ধরনের মুঠো মুঠো ললনা দিয়ে সেরে উঠতে চেষ্টা করছি।’ ‘আমাকে একটু একা থাকতে দাও’- ও একেবারে কেঁদে ফেলে, ওর গাল বেয়ে ক্ষোভ আর লজ্জার অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আকস্মিক ও তীব্র মোচড়ে কোনভাবে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়। তারপর পিছিয়ে গিয়ে একেবারে মুখের ওপর ছুঁড়ে মারে, ছোঁ মেরে হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। ও চিনি গুলো তুলে রাখে, প্রায় আধ ডজন কিউব। ‘সেম!’ কাজের ছেলেকে চেঁচিয়ে বলে ক্লেটাস।
‘চুলোয় আরেকটু জল বসা।’ তারপর আমার দিকে ফিরে আবারও বলতে শুরু করে, দিশেহারা সেই অনুস্মৃতিতে তার চোখ জ্বলজ্বল করছে : ‘মাইক, যে যুদ্ধটা আমি চিনির সঙ্গে অবিরাম লড়ে চলেছি সে সম্পর্কে ওদের সবাইকে তোমার জানানো উচিত।’ ‘স্কুলে ওকে সবাই সুগার বেবি ডাকতো’- কথাটা বলে, আবারও পাশফিরি। ‘আরে, মাইক তুমি একেবারেই গল্প বলতে জানোনা। ডিরেকটরেটের হয়ে প্রচারনা চালাবার জন্য কেযে তোমার নাম সুপারিশ করেছে।’ অন্য দু’জন হাসে। ওর কপালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম কেঁপে ওঠে। খুবই মরিয়া সে। সেই তীব্র যন্ত্রণার জাঁকালো কশাঘাতের জন্য অনুনয়বিনয় করে আকুতি জানাতে থাকে। ‘এবং ওর প্রেমিকাকেও হারিয়েছে’- নিষ্ঠুরভাবে আমি বলি। ‘হ্যাঁ, ও খুব চমৎকার, ভদ্র একটা মেয়েকে খুইয়েছে কারণ আমি যে হাফডজন সুগার কিউব ওর জন্য এনেছিলাম সেগুলো ও ছাড়তে পারেনি।’ ‘এই একদম ভালো হবে না কিন্তু’– আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও বলে। “খুব চমৎকার মেয়ে না! বাকিগুলোর মতই মার্সিও একটা নিলর্জ্জ লোভী। ‘বাকি সবার মতো, আমাদের মতো। এসব তুমি কি বলছো ক্লেটাস, চিনি গুলো কেড়ে নেবার আগ পর্যন্ত যে ক’টা মাস ওর সঙ্গে কাটিয়েছ এবং শুয়েছ সব সময়কি এমনই জেনে এসেছো। তখন কি তোমার চোখ-কান খোলা ছিল।” ‘আমরা সবাই-ই জানি, তুমি ওগুলো এনেছিলে, মাইক। এরই মধ্যে একথা তুমি বলেছ।
কিন্তু এটাই তার একমাত্র কারণ হতে পারে না…’ ‘তাহলে সত্যিকার কারণটা কি শুনি?’ এরপর আমি বুঝতে পারি, কতো সহজে কি বোকামিটাই না আমি করলাম, এমনকি এখনো, হঠাৎ সেই অযৌক্তিক কথায় আমাদের সাম্প্রিতক তিক্ততার দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিলাম; যখন অঘোষিত একটি দগদগে শব্দই আমাদের মাঝে প্রচণ্ড যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে, ঠিক এসান প্যাসেজের দুই শান্তিকামী বন্ধুর মতো। আমি তাই স্মৃতি হাতরে আরো কোন মজার কৌতুক খুঁজতে থাকি, খুঁজলে হয়তো এমন আরো ধারালো কিছুই বেরিয়ে আসবে। ‘ক্লেটাস যখন বিয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে’– আমি বলি, ‘তারা ওর জন্য তখন বিশেষ বিয়ের প্রতিজ্ঞা করে বসে। আমার পছন্দের সব জাগতিক জিনিস পত্রসহ-কেবল আমার ট্যাট আর লিলি ছাড়া-তাতে আমি যোগ দেই। ফাদার ডরোথিকে যদি কখনও এদেশে তারা কেউ ফিরিয়ে আনতে পারতো, সন্দেহ নেই তখন শুধু তিনিই তার কারণ বুঝতে পারতেন।’ উমারা আর তার বন্ধুরা আবারও হাসে। চিনুয়া আচেব অনুবাদ : সোহরাব সুমনয়