চান-সুরুজের গপপো

চান-সুরুজের গপপো

এই গপপো আসলে এক বিধবা মা আর তার দুই সন্তানের-এক ছেলে আর এক মেয়ে। সে অবশ্য অনেক অনেক দিন আগের কথা। তারা বাস করত এক গ্রামের কাছেই।তবে ওদের বাড়িটার চার ধারেই জঙ্গল।

এই গপপো আসলে এক বিধবা মা আর তার দুই সন্তানের-এক ছেলে ‍আর এক মেয়ে ।সে অবশ্য অনেক অনেক দিন আগের কথা । তারা বাস করত এক গ্রামের কাছেই । তবে ওদের বাড়িটার চার ধারেই জঙ্গল । ওরা অনেক গরিব ছিল। ওদের মা তাই অন্যদের বাসায় কাজ করত। এক উৎসবের দিন। বাড়ি বাড়ি কাজ করে ফিরছিল মা। তখন গ্রামের মোড়ল তাকে একটা ঝুড়িতে করে কয়েকটা চালের পিঠা দিল। বাচ্চাদের জন্য। আর মা-ও সেই পিঠার ঝুড়ি নিয়ে টুকটুক করে রওয়ানা হল বাড়ির পথে। আসার সময় সে যখন জঙ্গল পার হচ্ছিল, হঠাৎ এক বিশাল বাঘ এসে পড়ল তার সামনে। মা তো পুরোই হকচকিয়ে গেল।

বাঘ হালুম করে বলল, “ঝুড়িতে কী আছে?” “চালের পিঠা।” “চালের পিঠা?” “হু।” “আমার তো ভীষণ খিদে পেয়েছে। ভাবছিলাম, তোকেই খাব। কিন্তু পিঠাগুলো খেয়েই যদি পেট ভরে, তবে তো আর তোকে খাওয়া লাগবে না। দে তো পিঠাগুলো।” মা দেখল, এ তো ভীষণ বিপদ। তবু জান বাঁচাতে সে বাঘকে কিছু পিঠা দিল খেতে। সেগুলো নিমেষেই খেয়ে বাঘ বলল, “আরও দে।” এমনি করে পিঠা তো সব বাঘের পেটে চালান হয়ে গেল। কিন্তু বাঘের তো পেট ভরল না। বাঘ আবার হালুম করে উঠল, “আমার পেট তো ভরেনি। আর পিঠা নেই?” না। পিঠা তো শেষ। আমার বাচ্চাদের জন্য পিঠা নিয়ে যাচ্ছিলাম, তুমি তো সবগুলোই সাবড়ে দিলে।” বাচ্চাদের কথা শুনেই তো বাঘের চোখ চকচক করে উঠল, জিভে চলে আসল পানি। “বাচ্চা? কয়টা?” মা তো সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারল, সর্বনাশ তো হয়ে গেছে। বলে উঠল, “না না, আমার কোনো বাচ্চা-টাচ্চা নেই।

একটু মশকরা করছিলাম আরকি।” বাঘ নিজে নিজেই বলতে লাগল, “বাচ্চা! আহা, কী মিষ্টি, কী সুস্বাদু!” অপেক্ষা অবশ্য সে করল না। মাকে তখনই খেয়ে ফেলল। নগদ লাভটা হয়ে যাক, পরে বাচ্চাদেরও না হয় সে খাবে। মাকে খেয়ে সে বাচ্চাদেরও খাওয়ার ফন্দি আঁটতে লাগল। আর সে মোতাবেক মায়ের পোশাক পরে চলে গেল ওদের বাড়িতে। দরজায় টোকা দিয়ে মায়ের গলা নকল করে বলে উঠল, “বাচ্চারা, দরজা খোল। মা এসে গেছে।” কিন্তু মায়ের গলা এমন কেন! বাচ্চারা তো ধন্দে পড়ে গেল। তাই শুনে বাঘ বলল, “আরে, আজকে যে ভীষণ ঠাণ্ডা। পাহাড় থেকে আজ এত্ত ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, গলা বসে গেছে একদম। তাড়াতাড়ি দরজা খোল বাছারা আমার।” তবু বাচ্চাদের সন্দেহ দুর হল না।

ওরা বাঘকে হাত দেখাতে বলল। বাঘটাও তাড়াতাড়ি দরজা দিয়ে হাত গলিয়ে দিল। “ওমা, তোমার হাত এতো মোটা হল কবে! তোমার হাত ভর্তি পশমই বা গজাল কবে!” “আর বলিস না, আজ এত কাজ করেছি! হাত ব্যথা হয়ে গেছে। একদম ফুলে গেছে, দেখছিস না। নে নে, তাড়াতাড়ি দরজা খোল। তোদের জন্য ঝুড়ি ভর্তি পিঠা এনেছি। ব্যথা হাতে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারছি না।” বাচ্চারা তো দরজা খুলে দিল। কিন্তু মায়ের পোশাক পরলে কী হবে, বাঘের লেজ তো আর লুকোনো যায় না। তাই দেখে তো ভাই-বোন যা বোঝার বুঝে ফেলল। আর তারপর দে ছুট পিছনের দরজা দিয়ে। ওদের বাড়ির পেছনেই ছিল এক ইয়া লম্বা গাছ। গাছের মাথা যেন আকাশে ঠেকেছে। ওরা তরতর করে সেই গাছে উঠে গেল। বাঘটা তো আর বাচ্চাদের খুঁজে পায় না। খুঁজতে খুঁজতে বাঘটাও ওদের বাড়ির পেছনে চলে এল। সেখানে একটা কুয়াও ছিল। বাঘটা যেই কুয়াতে উঁকি দিল, দেখে কী, কুয়ার পানিতে গাছের ছায়া। আর সেই ছায়াতে দুটো বাচ্চারও প্রতিচ্ছবি। মানে ওই বাচ্চা দুটোই।

বাঘ আস্তে আস্তে ঘাড় উঁচিয়ে একদম সরাসরি ওদের দিকে তাকাল। তারপর জিজ্ঞেস করল, “তোমরা অত উপরে গেলে কী করে?” ভাই তো দেখল মহাবিপদ। বাঘ তো দেখে ফেলেছে ওদের। ও তখন জীবন বাঁচাতে মিথ্যা কথা বলল, “আমরা তিলের তেল ব্যবহার করেছি কিনা, তাই এত উপরে উঠতে পেরেছি।” বাঘটাও বোকার মতো ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করল। রান্নাঘরে গিয়ে চার থাবায় আচ্ছা মতোন তিলের তেল লাগাল। তারপর আসলো গাছে উঠতে। কিন্তু তেলমাখা হাতে বাঘ যতবারই উঠতে যায়, খালি পিছলে পড়ে যায়। দেখে তো ছোট বোন হেসেই খুন! শেষমেশ সে বলেই বসল, “আরে বোকা বাঘ! এখন তুমি কেবল একটা কুড়াল ব্যবহার করেই গাছে উঠতে পারবে। তেল মাখা হাতে কি আর গাছে ওঠা সম্ভব!” ভাই সঙ্গে সঙ্গে বোনের মুখে হাতচাপা দিল। কিন্তু ততক্ষণে তো যা হওয়ার হয়ে গেছে। বাঘটা যা শোনার শুনে ফেলেছে।

তাড়াতাড়ি একটা কুড়াল খুঁজেপেতে বের করল সে। তারপর গাছের গায়ে কুড়াল গেঁথে গেঁথে উঠতে শুরু করল। ওরা তো এবার ভীষণ বিপদে পড়ে গেল। কী করা যায় এবার? ওদিকে বাঘ তো ওদের একদম কাছাকাছি চলে এসেছে। এখনই ওদের ধরে ফেলে আরকি। আর কোনো উপায় না দেখে ওরা স্বর্গের উদ্দেশ্যে প্রার্থণা করতে শুরু করল। আর কী আশ্চর্য! তক্ষুণি আকাশ থেকে একটা দড়ি নেমে আসল ওদের কাছে। আর ওরাও সেই দড়ি ধরে ঝুলে পড়ল। আর দড়িটাও উপরের দিকে উঠতে শুরু করল। বেয়ে বেয়ে উঠে গেল আকাশে। বাঘটা অবশ্য একটুর জন্য দড়ি ধরতে পারল না। কিন্তু বাচ্চারা কীভাবে দড়ি পেয়েছে, সেটা তো ও উঠতে উঠতে দেখেছে ঠিকই। বাঘটাও এবার প্রার্থণা করতে বসে গেল। আর কী আশ্চর্য, বাঘটার জন্যও একটা দড়ি চলে আসল। আর বাঘটাও টুক করে লাফ দিয়ে দড়ি ধরে ঝুলে পড়ল।

বেশি দূর অবশ্য যেতে পারল না সে। ওর দড়িটা আগে থেকেই খানিকটা ছেঁড়া ছিল। কিছুদূর উঠতেই দড়িটা পটাশ করে ছিঁড়ে গেল। আর বাঘটাও সোজা পড়ে গেল নিচে। একটা ভুট্টাক্ষেতে। মারা গেল তক্ষুণি। রক্তে ক্ষেতের সব ভুট্টা লালচে হয়ে গেল। তখন থেকেই পাকা ভুট্টার লালচে রং। ওদিকে ভাইবোন তো দড়ি ধরে ঝুলে ঝুলে একেবারে স্বর্গ অব্দি পৌঁছে গেল। তারপর হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেল একদম স্বর্গের শেষ মাথায়। তারপর ভাইটা সূর্য হয়ে গেল, আর বোনটা চাঁদ। কিন্তু চাঁদ তো রাতে ওঠে। তখন আবার চারপাশে থাকে ঘুটঘুট্টি অন্ধকার। বোনটা তো সে অন্ধকারে ভীষণ ভয় পেত। আর তাই ভাইকে বলে ওরা অদলবদল করে নিল- ভাই হল চাঁদ, বোন সূর্য। আর দেখ না, বোন সূর্য হয়ে কেমন ভীষণ তেজে কিরণ ছড়াতে থাকে! এর কারণ কী? বোনটা যে ভীষণ লাজুক। তাই সে চায় না, কেউ ওর দিকে তাকিয়ে থাকুক। তাই এমন ত্যেজে জ্বলে, কেউ ওর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই চোখে ধাঁধা লেগে যায়। –সংগৃহীত

উত্তরে ছুটে দক্ষিণে যাওয়া

পিদিম আর কুমির

পিদিম আর কুমির

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *