চাঁদ মামার গল্প

‘আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা

চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’

মায়ের মুখে চাঁদ মামাকে নিয়ে এই ছড়াটি শুনতে শুনতে তো ঘুমিয়ে পরা হয় রোজই তাই না? কিন্তু ঝলমলে কোনো চাঁদনী রাতে, ঘুম জড়ানো চোখে চাঁদ মামার এই ছড়াটি শুনতে শুনতে তোমাদের নিশ্চয়ই মনে হয়েছে, চাঁদ মামাটা বুঝি বড্ড নিরস! নয়তো কই মায়ের ডাকে সারা দিয়ে কপালের টিপটি পরিয়ে দিতে চাঁদ মামা তো কখনও এলই না কাছে!

 

এমন অনুযোগ কখনও যদি করেই থাক তবেই বলছি, দূরের আকাশে এক চিলতে ঝকঝকে রূপোর থালার মতো অপূর্ব সুন্দর দেখতে যে চাঁদ মামা কে নিয়ে আমাদের এত আবদার, বেচারা চাঁদ মামার সত্যি সত্যি চেহারাটা কিন্তু একদম অমন নয়!

 

তাহলে এবার নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে কেমনই বা তবে সত্যিকারের চাঁদ মামা? কত দূরেই বা থাকে সে? কীভাবেই বা সে মোহময় করে রাখে আমাদের? আর কেমন করেই বা ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলে নেয় সে?

 

হুম, চাঁদ মামাকে ঘিরে তোমার মতোই এমন হাজার কৌতূহলকে আটকে রাখতে পারেনি বিজ্ঞানীরাও, তাই তো তারা রহস্য উন্মোচনে পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে ছুটে গেছে মহাকাশের পানে, চাঁদ মামার বুকে পাড়ি জমাতে। চল তবে, চাঁদ মামাকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা কী বলে, তাইই না হয় আজ জেনে নেই ঝটপট!

 

>> আকাশের যে টুকটুকে চাঁদ মামাকে দেখিয়ে মা রোজ গান শোনান, সেটি আসলে আমাদের পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। একটু খটকা লাগছে? তবে খোলাসা করেই বলি, প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল গ্রহের মতই দেখতে, গ্রহের ক্ষুদ্র অংশ বা কুঞ্জ, যেটি কিনা একটি নির্দিষ্ট গ্রহকে (চাঁদ যেমন পৃথিবীকে) কেন্দ্র করে নিজ অক্ষরেখায় প্রতিনিয়ত ঘুরতে থাকে।

 

>> আকাশে ছোট্টটি দেখালে হবে কী! আয়তনের দিক দিয়ে আমাদের চাঁদ মামা কিন্তু সৌরজগতের অন্যান্য চাঁদ গুলোর মধ্যে ৫ম বৃহৎ!

 

>> এবার আসি দূরত্বে! চাঁদ মামার সাথে আমাদের পৃথিবীর গড় দূরত্ব প্রায় ৩,৮৪,৪০৩ কিলোমিটার বা ২,৩৮,৮৫৭ মাইল। এবার নিশ্চয়ই আন্দাজ করা যাচ্ছে যে, আকাশে চাঁদ মামাকে কেন আমরা এত ছোট দেখতে পাই!

 

>> পৃথিবীর মতো চাঁদেও নতুন বছর আসে প্রতি ২৭ দিন পর পর, অর্থাৎ, পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে চাঁদের সময় লাগে প্রায় ২৭ দিন। তবে মজার ব্যাপার হল, চাঁদ যে গতিতে পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। ঠিক, প্রায় এক ই গতিতেই সে নিজ অক্ষেও প্রতিনিয়ত ঘুরতে থাকে।

 

>> পৃথিবীর মতো চাঁদের বুকেও রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য পাহাড় পর্বত! কি অবাক হলে? হ্যাঁ, ‘মন্স হাইগেন’ হল চাঁদের সবচেয়ে উঁচু পর্বতমালা, যার উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৭০০ মিটার। যা কিনা, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার (৮৮৪৮ মিটার) অর্ধেক প্রায়।

 

>> পৃথিবী থেকে কিন্তু আমরা চাঁদের পুরো অংশ দেখতে পাইনা, সবমিলে আমরা মাত্র চাঁদের ৬০ ভাগ পৃথিবী থেকে দেখতে পাই, তাও কিনা একবারে বড়োজোর সমস্ত চাঁদের কেবল ৫০ ভাগ দেখা সম্ভব।

 

>> ১৯৬৬ সালের আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত চন্দ্র মিশনের এক নাম না জানা মহাকাশ যানের চাঁদে অবতরনই ছিল, চাঁদে পরিচালিত প্রথম কোন সফল অভিযান।

 

>> অবশেষে, ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র (USA) পরিচালিত অ্যাপোলো ১১ ছিল চাঁদে মানুষের অবতরণের প্রথম সফল মিশন। নীল আর্মস্ট্রং-ই ছিলেন সেই মহা সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি, যিনি কিনা চাঁদের বুকে প্রথম মানুষের পায়ের চিহ্ন এঁকে দিয়ে গৌরব এনে দেন গোটা মানব জাতিকে।

 

>> ধুমকেতুর দ্বারা সৃষ্ট চাঁদের বুকে নিষ্ক্রিয় আগ্নেয়গিরির লাভামুখ এবং গ্রহকুঞ্জগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কেননা, তা অক্ষত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আবহাওয়া সেখানে নেই।

 

>> চাঁদের পৃষ্ঠে অনুভূত মহাকাশ বল পৃথিবীর মহাকাশ বলের মাত্র ১৭ ভাগ বা এক পঞ্চমাংশ।

 

>> বিজ্ঞানীরা যদিও এ বিষয়ে তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তবে তাদের বেশিরভাগই একমত যে, চাঁদের বুকেও কিছু পরিমাণ পানি পাওয়া গেছে।

 

>> চাঁদনী রাতে চাঁদ মামার সৌন্দর্য আমাদেরকে যতই মুগ্ধ করুক না কেন, তার আবহাওয়াটি কিন্তু সুখকর নয় একদমই! কেননা, দিনের বেলায় সেখানে পড়ে প্রচণ্ড গরম(গড় তাপমাত্রা ১০৭ ডিগ্রি ফা.) আবার রাতে তেমনি ভয়াবহ ঠাণ্ডা (গড় তাপমাত্রা -১৫৭ ডিগ্রি ফা.)।

 

>> জোয়ার-ভাটার কথা তো তোমরা নিশ্চয়ই সবাই শুনেছ। তবে জেনে রাখ, চাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর মহাকর্ষজনিত আকর্ষণই হল নদী কিংবা সমুদ্রে সৃষ্ট জোয়ার-ভাটার অন্যতম একটি কারণ।

 

>> নিজ কক্ষপথে প্রতিনিয়ত ঘোরার ফলে কখনও কখনও পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্যের মাঝামাঝি অবস্থানে চলে আসে, যার ফলে কিনা চাঁদের পুরো অংশ কিংবা কিছু অংশ পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পরে যায়, চাঁদের এমন অবস্থানের নামই হল চন্দ্রগ্রহণ।

 

>> চাঁদকে আমরা যে নানান রূপে দেখি, সেগুলোর কতগুলো সুন্দর নামও রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো হল– নতুন চাঁদ> অর্ধচন্দ্র> প্রথম চতুর্থাংশ> উদীয়মান কুঞ্জ> পূর্ণ চন্দ্র> ক্ষীয়মাণ কুঞ্জ> শেষ চতুর্থাংশ> অর্ধ চন্দ্র> নতুন চাঁদ। এভাবে নাম চলতে থাকে।

 

কী? এবার, চাঁদ মামার রহস্যের জাল কিছুটা হলেও ঘুচল তো? আমাদের আদর আবদারের চাঁদ মামা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলো তো জানলে! এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে, মায়ের ডাকে সারা দিয়ে ছুটে আসা বেচারা চাঁদ মামার জন্য খুব একটা সহজ কাজ নয়!

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!